Monday, December 23
Shadow

কারাগারে দল গঠন করেন আসিফ !

দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা কয়েদিরা কারাগারে গেলে সাধারণত আশপাশের সবার সঙ্গে আড্ডা দেন, খেলাধুলা করেন, গড়ে তোলেন বন্ধুত্ব—এমন খবর কারাগারফেরত অনেকের মুখে শোনা যায়। কিন্তু কারাগারে বসে কেউ দল গঠন করতে পারেন, সেটা এবার শোনা গেল। আর তা করেছেন সংগীতের জনপ্রিয় তারকা আসিফ আকবর। প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপে তেমনটাই জানালেন।

কিছুদিন আগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে দায়ের হওয়া এক মামলায় গ্রেপ্তার হন আসিফ আকবর। আদালতের রায়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের পাশাপাশি ভক্তরা ভেবেছিলেন, এবার ঈদে বুঝি আসিফ কারাগারেই থাকবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, ৫ দিন কারাবাস শেষে ১১ জুন বিকেলে জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর কয়েক দফা প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এদিকে কারাগারের জীবনযাপনের ফিরিস্তি আসিফ আকবর তাঁর ফেসবুকেও নিয়মিত লিখে চলছেন। এর মধ্য দিয়ে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে জেলজীবনে কাটানো সময় ভাগ করছেন।

আসিফ বলেন, ‘আনন্দ ফুর্তিতে এসেছে জামিনের খবর। উচ্ছ্বসিত হতে পারলাম না, সবার মধ্যে একটা বিষাদ নেমে এল। আমি ইচ্ছা করেই সবার সঙ্গে দুষ্টুমি করার চেষ্টায় কালক্ষেপণ করছি। সবার মন খারাপ হয়ে আছে, আবার জামিনের খবরের আনন্দও তাদের চেহারা দিয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে। বিদায় নিতে কষ্ট হচ্ছিল, কয়েক দিনে কত আপন হয়ে গেলাম সবার, পুরো কক্ষে নিস্তব্ধতা। কারাবন্দী সহকর্মীরাই আমার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে, কেউ চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। তার আগে আমি “বাংলাদেশ কারা পার্টি” নামে একটি দলের ঘোষণা দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করে দিয়েছি। জেল থেকে বের হলে আমরা দেখা-সাক্ষাৎ করব। কথা দিলাম, অনুমতি পেলে কনসার্টও করব।’

আসিফ আকবর কারাগারের হাসপাতালে ছিলেন। জেল হাসপাতাল ১১-তে আরও ১৭ জন কয়েদি ছিলেন। কয়েদি হিসেবে তাঁর নম্বর ছিল ২৫০২৭/১৮। প্রথমবারের মতো কারাগারে ঢোকার পর শুরুতে একটু মন খারাপ হয়েছে বলে জানান আসিফ। তবে মুহূর্তেই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন। কারাবন্দী সহকর্মীদের নিয়ে তৃতীয় দিন রাতে কাচ্চি বিরিয়ানি পার্টি দিয়ে বসলেন। বললেন, ‘কারাগারে অসম্ভব কাচ্চি রান্না করা। তবুও কাচ্চির মতো কিছু একটা পাওয়া গেল। ইফতার ও সাহরিতে আরাম করে খেয়েছি সেই কাচ্চি বিরিয়ানি।’

আসিফ বলেন, ‘ঘুরে ঘুরে পুরো কারাগারের সবার সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক হয়ে গেল। অভিজ্ঞ কারা কর্তৃপক্ষ মামলার জামিন নিয়ে আশাবাদী, আর আমি ভাবছি, গত ২০ বছরে এত পরিশ্রম শেষে এই কয়েকটা দিন খুব আরামেই কাটছে। মোবাইল ফোন না থাকায় আরও বেশি খুশি। আড্ডা, গান, দাবা, লুডু খেলে চলে যাচ্ছে সময়। রাতে সবাই সুবোধ বালকের মতো ঘুমাচ্ছি। অতিরিক্ত ভালোবাসায় এক্সট্রা টেবিল ফ্যান পেলাম, মাহবুব নামের একজনের বুদ্ধিতে তো রাতে গোসল করে ঠান্ডা বাঁধিয়ে ফেলেছি। মশারি ছাড়াই ঘুম শুরু। বৃষ্টি নেই শুধু গরম, রাতে মশা কামড়ায়নি। পাশের বিছানায় “জাতীয় ভাগনে” সোহাগকে পেলাম, তার বাড়ি মাদারীপুর। তাকে বললাম, মামা মশা কামড়ায় নাই, মানে মশা নাই। ভাগনে সোহাগ বলল, মামা সব মশার জামিন হয়ে গেছে।’

কারাগারে আসিফ যে কাপড়ে ঢুকেছেন, একই কাপড়ে বের হয়েছেন। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ এভাবে, ‘যে কাপড়ে প্রবেশ করেছি, আবার সেই কাপড়েই বের হচ্ছি—এটা দেখে একজন প্রশ্ন করতেই বললাম, আমি বাঘের মতো পাগ মার্ক মেনে চলি। যে রাস্তায় যাই সেই রাস্তাতেই ফিরে আসি, তবে এবার একটু আহত। শত শত মানুষের বিদায়ে সিক্ত হলাম। কারাগারের ভেতরে বিষণ্নতা, বাইরে আপনজনদের উচ্ছ্বাস। আমার মন পড়ে আছে ওখানে, আমি তোমাদেরই লোক ২৫০২৭। কোনো উচ্ছ্বাস আমাকে ছুঁতে পারেনি। কারাগারের আকাশ অনেক বড়। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে, মুক্ত জীবন থেকে আবার ফিরে এলাম পাথুরে আর শহুরে বন্দীজীবনে। তাতে কী?’

গানের মানুষ আসিফ আকবর কারাগারে থাকলেও এবার ঈদে শ্রোতারা ঠিকই পেয়েছেন তাঁর নতুন গান। এসব গানের কোনোটি একক আবার কোনোটি দ্বৈত। আছে গানের ভিডিও। তবে কারাগারে থাকার কারণে কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি এবং বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে একটি গানে কণ্ঠ দিতে পারেননি। এ নিয়ে কিছুটা মন খারাপ হয়েছে তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!