প্রতি সপ্তাহে যেখানে প্রেক্ষাগৃহ বাড়ার খবর দিচ্ছেন ‘জান্নাত’ ছবির নায়ক-নায়িকারা, সেখানে আজ একেবারে অন্য রকম একটি খবর দিলেন পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মানিক জানান, ‘ব্যাপক বাধার মুখে সাতক্ষীরাতে “জান্নাত” ছবির প্রদর্শনী স্থগিত!’ পরিচালকের এমন পোস্টে চলচ্চিত্রের অনেক পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলী অবাক হয়ে যান।
ঈদুল আজহায় দেশের ২১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জান্নাত’ ছবিটি। প্রথম সপ্তাহ পার হতে না–হতেই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। এখন ৬০টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে বলে জানান পরিচালক।
সাতক্ষীরায় সংগীতা সিনেমা হলে ‘জান্নাত’ ছবির প্রদর্শনী বন্ধ হওয়ার বিষয়ে প্রথম আলোকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছবির নাম নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের মতে, “জান্নাত” নামটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। শুধু তা-ই নয়, ছবিতে কিছু দৃশ্যও আছে, যা ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত। বিষয়টি আমরা প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলে তারা প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়। আমরা আরও বলেছি, প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ আমাদের ছবিটি দেখানোর পর যদি তেমন কিছু পাওয়া না যায়, তাহলে ছবিটি প্রদর্শনে বাধা থাকবে না।’
সাতক্ষীরা সদরের সংগীতা প্রেক্ষাগৃহে বাধার মুখে ‘জান্নাত’ ছবির প্রদর্শন বন্ধ শুনে বিস্মিত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই হতাশ। ছবিতে ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি বলার চেষ্টা করেছি, ইসলাম শান্তির ধর্ম, এই ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ছবিতে বলা হয়েছে, আমাদের জীবন ইসলামের শান্তির পথে চালিত করতে হবে। এমন বক্তব্যের একটা সিনেমা না দেখে, না বুঝে অনুমাননির্ভর হয়ে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া দুঃখজনক।’
সারা দেশে ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ যখন বাড়ছে, তখন সাতক্ষীরার এ ঘটনায় ভীষণ মর্মাহত এই ছবির নায়ক সাইমন সাদিক। তিনি বলেন, ‘পরিচিতজন, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, সবাই ইতিবাচক মন্তব্য দিয়েছেন। এখানে আমরা এমন কোনো কিছু করিনি, যা অতিরঞ্জিত। একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সুন্দরভাবে সেলুলয়েডে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক। আর এই ছবিতে যদি এমন কিছু থাকত, তাহলে তো চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কখনোই ছাড়পত্র দিত না। সাতক্ষীরার এ ঘটনায় আমি সত্যিই খুব আহত হয়েছি।’
এদিকে সংগীতা সিনেমা হলের পক্ষে আবদুল হক ও রাসেল বলেন, ‘স্থানীয় মসজিদের কয়েকজন আলেম পুলিশ সুপারের কাছে “জান্নাত” ছবি নিয়ে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ দিয়েছেন। এমনকি সিনেমার নাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এরপর প্রশাসনের নির্দেশে ছবির প্রদর্শনী বন্ধ রেখেছি। অভিযোগের তোয়াক্কা না করে হয়তো ছবি চালাতে পারতাম। কিন্তু নানা কিছু বিবেচনা করে ছবির প্রদর্শনী বন্ধ রেখেছি।’ তাঁরা আরও জানান, ‘জান্নাত’ ছবির পোস্টার তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন এই প্রেক্ষাগৃহে ‘সুলতান’ ছবিটি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘জান্নাত’ ছবিতে সাইমনের বিপরীতে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি। ছবির অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন মিশা সওদাগর, আলীরাজ, শিমুল খান, চিকন আলী, রেহানা জলি, মারুফ, রিলু রিয়াজ এবং বিশেষ চরিত্রে আরেফিন রুমী ও রাহা তানহা খান। ছবির কাহিনি লিখেছেন সুদীপ্ত সাঈদ খান। চিত্রনাট্য লিখেছেন আসাদ জামান। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা ও আরেফিন রুমী। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাপ্পা মজুমদার, কোনাল, আরেফিন রুমী, পড়শি ও পুতুল। এই ছবির সব কটি গানের কথা লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ।