class="post-template-default single single-post postid-1938 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি!

ডায়াবেটিস

চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি, কিন্তু ক্যালরিমুক্ত। ভেষজ ঔষধি হিসেবে ডায়াবেটিক রোগী ও সুস্থ মানুষ নির্ভয়ে খেতে পারবে। এই বিস্ময়কর ভেষজ উদ্ভিদ হলো স্টেভিয়া। মিষ্টি পাতা, মধুপাতা, মিষ্টি হার্ব প্রভৃতি নামে পরিচিত এই উদ্ভিদ।

ঘরে বসে আয় করতে এই লিংকে ক্লিক করে ইন্সস্টল করে নিতে পারেন ব্রাউজারটি।

উদ্ভিদটির চাষ, ব্যবহার ও বাণিজ্যিকভাবে প্রসারে কাজ করছেন পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) বায়োটেকনোলজি বিভাগের এক দল বিজ্ঞানী।

স্টেভিয়া ট্রপিক্যাল বা সাবট্রপিক্যাল ও কষ্টসহিষ্ণু বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় গাঢ় সবুজ ঔষধি গাছ। ফুল সাদা, নলাকৃতি ও উভয়লিঙ্গ। গাছ সুগন্ধ ছড়ায় না, কিন্তু পাতা মিষ্টি। পৃথিবীতে ২৪০টির মতো প্রজাতি ও ৯০টির মতো জাত আছে। উদ্ভিদটির উৎপত্তিস্থল প্যারাগুয়ে। বর্তমানে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রাজিল, উরুগুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, থাইল্যান্ড, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ রয়েছে। বাংলাদেশে বিএসআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন ২০০১ সালে। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. আমজাদ হোসেন পরিচালকের (গবেষণা) দায়িত্বে থাকাকালে বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাদিরা ইসলাম ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিষ কুমার ঘোষসহ কয়েকজন বিজ্ঞানীকে নিয়ে কাজ করেন। গবেষণায় সফল হওয়ার পর এখন তাঁরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্টেভিয়া চাষের লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে প্রচার, তাদের উদ্বুদ্ধকরণ, বীজ, চারা সরবরাহকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ শুরু না হলেও অলাভজনক হিসেবেই শৌখিন মানুষ, উত্সুক কৃষকরা দু-একটি করে গাছ বাড়ির টবে, ছাদে ও বাগানে চাষ করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে বেশ সাড়াও পড়েছে।

ড. কুয়াশা মাহমুদ জানান, স্টেভিয়া স্বল্প দিনের ঔষধি উদ্ভিদ হলেও দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে। স্বল্পদীর্ঘ দিবস উদ্ভিদ। স্টেভিয়া সহজে চাষ করা যায়। এমনকি মাটির টবেও হয় এই গাছ।

ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, চিনির বিকল্প হিসেবে ক্যালরিমুক্ত স্টেভিয়ার পাতা ব্যবহার করা যায়। স্টেভিয়ার পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০ গুণ এবং পাতার স্টেভিয়াসাইড চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি। ক্যালরিমুক্ত হওয়ায় স্টেভিয়া ডায়াবেটিক রোগী খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিবর্তন হয় না। অগ্ন্যাশয়কে (প্যানক্রিয়াস) ইনসুলিন উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে বলে রক্তের গ্লুকোজও নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে এ উদ্ভিদ। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। দাঁতের ক্ষয়রোগ রোধ করে। ত্বকের কোমলতা ও লাবণ্য বাড়ায়। স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসেবেও কাজ করে। স্টেভিয়া চা, কফি, মিষ্টি, দই, বেকড ফুড, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর ভেষজ উপাদান মানুষের দেহে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

এই বিজ্ঞানী বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি স্টেভিয়া চাষের অনুকূলে। তাই বাংলাদেশের যেকোনো এলাকায় এর চাষ সম্ভব। শুধু বর্ষা মৌসুমে একটু খেয়াল রাখতে হয়, যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে পচে না যায়। এটি একবার লাগালে তিন থেকে চার বছর নতুন করে চারা লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না। সেখান থেকেই নতুন চারা গজায়। স্বল্প শ্রম ও কম খরচে স্টেভিয়া উৎপাদন হয়। ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, স্টেভিয়ার চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করা যায়। সেই পাতা রৌদ্রে শুকিয়ে চিনির পরিবর্তে চা, কফি, মিষ্টিসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবারে ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, ‘দিন দিন স্টেভিয়ার চাহিদা বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে স্টেভিয়ার চাষ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হলে দ্রুত বাজার পাবে।’

এই বিজ্ঞানী মনে করেন, মানুষের মধ্যে স্টেভিয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে এ দেশের চাষিরা আর্থিকভাবে বহুগুণ লাভবান হবে।

প্রাথমিক এক জরিপে বিএসআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা দেখেছেন, যে পরিমাণ খরচ করে স্টেভিয়া উৎপাদন করা হয়, তার চেয়ে কমপক্ষে ১২ গুণ বেশি দরে বিক্রি করা যায়। এই জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি স্টেভিয়ার উপকারিতা, আর্থিক লাভ ও সর্বোপরি ডায়াবেটিক রোগীসহ সুস্থ মানুষকে মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেতে স্টেভিয়ার ব্যবহার নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা, প্রচারণা ও কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে। কর্মকর্তারা জানান, স্টেভিয়া চাষ করার জন্য বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে চারা বা বীজ সংগ্রহ করা যাবে। প্রয়োজনীয় পরামর্শও পাওয়া যাবে এখান থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!