Monday, December 23
Shadow

বুথ থেকে টাকা চুরি করেছেন রাশিয়ার নাগরিকও

রাজধানীর ৯টি এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় আরও তিন বিদেশির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এদের একজন রাশিয়ার পাসপোর্টধারী ছিলেন বলে নিশ্চিত হতে পেরেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিকুঞ্জ, রেডিসন ও রামপুরার ডিআইটি রোডের চারটি এটিএম বুথ থেকে এই তিনজন টাকা তুলেছিলেন। শনাক্ত হওয়া ওই ব্যক্তির নাম ভ্লাদিস্লাভ সের্গিয়েভিচ (৩৪)। পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি রাশিয়ার নাগরিক। ৩১ মে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় আসেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি গুলিস্তানের হোটেল সালিমারে ওঠেন। ৪ জুন রাত নয়টা দশ মিনিটে হোটেল ছেড়ে দেন। ওইদিনই রাত একটা ৫৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশ ছাড়েন।

ঘটনা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্লাদিস্লাভ যখন হোটেল সালিমারে ছিলেন তখন ২ জুন সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আরও দুই বিদেশি ওই হোটেলে গিয়ে তার (ভ্লাদিস্লাভ সের্গিয়েভিচ) সঙ্গে দেখা করেন। এই দুজনের উপস্থিতি রেডিসন হোটেলের এটিএম বুথে পাওয়া গেছে। তবে তারা কোনো হোটেল ছিলেন, তাদের পরিচয় কি তা এখনো জানা যায়নি।

এ নিয়ে বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ বিদেশির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে সাতজন ইউক্রেনের নাগরিক, একজন রাশিয়ার এবং দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এ ছাড়া ২ জুন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া আরও তিন ইউক্রেনের নাগরিক চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে মনে করছেন তারা।

গত ১ জুন সন্ধ্যায় খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ডাচ্-বাংলার এটিএম বুথে ইউক্রেনের দুই নাগরিক টাকা চুরি করতে যান। তাঁদের একজন ধরা পড়লেও পালিয়ে যান আরেকজন। ওই দিন রাতেই রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন থেকে ইউক্রেনের আরও পাঁচ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই চক্রের একজন এখনো পলাতক। পরবর্তীতে জানা যায়, ৩০ মে বিকেলে তুর্কি এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে আসেন সাত নাগরিক। পরদিনই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মধ্য বাড্ডার দুটি বুথ থেকে ৪ লাখ টাকা চুরি করেন। আর ১ জুন র‍্যাডিসন হোটেল, কাকরাইল, রামপুরার ডিআইটি সড়ক ও নিকুঞ্জ এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে চুরি হয়। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুরির খবর পাওয়া গেছে।

ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত করতে গিয়ে আরও কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও চুরি হয়েছে বলে তারা আভাস পাচ্ছেন। চুরি যাওয়া টাকার অঙ্কও বড়। কিন্তু একমাত্র ডাচ-বাংলা ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে যেসব বুথ থেকে টাকা চুরি হয়েছে তার আশপাশের এলাকায় যেসব ব্যাংক রয়েছে এমন পাঁচটি ব্যাংক-ইউসিবি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, প্রিমিয়ার, সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে ৩১ মে ও ১ জুনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা চেয়েছেন। এর মধ্যে কেবল সিটি ব্যাংক চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছে। বাকি ব্যাংকগুলো এখনো সাড়া দেয়নি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ১৯ জুন বাংলাদেশের এটিএম যন্ত্রের সরবরাহকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এনসিআর করপোরেশনের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রতিনিধিরা বলেছেন, চুরি যাওয়া যে অর্থের (১৬ লাখ) কথা বলা হচ্ছে এত অল্প পরিমাণ টাকা চুরির জন্য এই চক্র এ দেশে আসার কথা না। এর পরিমাণ আরও বেশি।

এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনা তদন্ত করছেন ডিবির পূর্ব বিভাগের খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, টাকা চুরির ঘটনায় জালিয়াত চক্রের দুটি গ্রুপ জড়িত ছিল বলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানতে পেরেছেন। গ্রেপ্তার চারজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাননি। আদালত আরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শিগগির তাদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!