Sunday, April 28
Shadow

গায়ে জ্বর নেই তবু ল্যাব এইড এর থার্মোমিটারে ১০৩ ডিগ্রি! বিল ১ লক্ষ ২২ হাজার

ল্যাব এইড‘রেখো না তো ভয় মনে কোনো ভাবনা, পাশে আছি আমি বন্ধু চেনা, কাটবে আঁধার যেনো কাটবে রাতের ঘোর, পাশে আছি যেন হবে পাখির ডানায় ভোর।’ বিগত বেশ কয়েক বছর এমন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে রোগীদের আকর্ষণ করেছেন রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতাল। সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালটির নানা অব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট রোগী ও স্বজনরা। একাধিকবার এনিয়ে উত্তেজিত স্বজনরা হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালিয়েছেন।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেন প্রবাসী মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কুরাপাড়া এলাকার রংমেহার গ্রামের মো. নুরুল আমিন ভুঁইয়া (৪৮) গত ৫ ফেব্রুয়ারি মাকে দেখতে বাংলাদেশে আসেন। ওই সময় তিনি হালকা জ্বর ও ঠান্ডা অনুভব করলে স্বজনরা তাকে

ল্যাবএইডে চিকিৎসক ডাঃ আলী হোসেনের তত্বাবধানের ৫৭০/এ কেবিনে ভর্তি করা হয়।

তারপর থার্মোমিটারের মাধ্যমে নুরুল আমিনের জ্বর মেপে দেখেন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। এরপর তার হাতে একের পর এক স্যালাইন ও এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুষ করা হয়। নানান প্রকারের পরীক্ষা নিরীক্ষায়ও তার জ্বর কিছুতেই কমছিলনা। যত বারই জ্বর মাপা হয় তাতে

দেখা যায় জ্বর ১০৩ ও ১০২ এর মধ্যেই রয়েছে। কিছুতেই জ্বর না কমায় চিকিৎসকরা তার একাধিক শারীরিক পরীক্ষা করাতে বলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতে স্বজনরা তার একাধিক পরীক্ষা করান।

কিন্তু সেসব রিপোর্টে তার শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। তবে কিছুতেই জ্বর না কমায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি একটি বোর্ড মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন, তাকে আরো দুইদিন পর্যবেক্ষণে রেখে তার ফুসফুস থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করার। সেই সঙ্গে স্বজনদের বলা হয়

তাকে হয়তো বা আইসিইউতে রাখা লাগবে পারে। এজন্য ম্যান্টালি প্রস্তুতি নিতে বলেন। কিন্তু প্রবাসী ও তার স্বজনরা এতে উদ্বিগ্ন হয়ে বাহিরে থেকে থার্মোমিটার এনে তার জ্বর পরীক্ষা করে দেখেন টেম্পারেচার স্বাভাবিক রয়েছে। বিষয়টি ডিউটি ডাক্তার ও নার্সদের জানানো হলে

তারাও বাহিরের থার্মোমিটার ও ল্যাবএইডের একাধিক থার্মোমিটারে মাধ্যমে রোগী নুরুল আমিনের জ্বর পরীক্ষা করে দেখেন। ল্যাবএইডের ব্যবহৃত থার্মোমিটারে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ও বাহিরের থার্মোমিটারে ৯৮ ডিগ্রি দেখাচ্ছে।

এনিয়ে ভুক্তভোগির ভাই আব্দুল হাকিম প্রফেসর ডাঃ আলী হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেও দুটি থার্মোমিটার দিয়ে নুরুল আমিনের শারীরিক তাপমাত্রা মেপে দেখেন তার কোনো জ্বর নেই। তবে হালকা ঠান্ডা আছে। পরে তিনি তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

ভুক্তভোগি পরিবারটির অভিযোগ, সাধারণ হালকা ঠান্ডা জ্বরের কারণে ল্যাবএইড আমাদের প্রায় দেড় লাখ টাকা বিল করেছে। এছাড়াও বহু টেস্ট ও বোর্ড মিটিংয়ের নামে যে বিপুল অংকের টাকা নষ্ট করেছে এর দায় নেবে কে?

রোগীর স্বজনরা ল্যাবএইড গ্রুপের মেডিক্যাল ডিরেক্টর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. খান মো. আসাদুল্লা হেল গালিব, হাসপাতালের এডমিন অফিসার ও সাপ্লাই চেইনের জিএমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা থার্মোমিটার সর্বরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকিস কর্পোরেশন’ নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

নষ্ট থার্মোমিটার দিয়ে কতদিন ধরে এভাবে রোগিদের দেখা হচ্ছে। এনিয়ে আপনারা কি ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন জানতে চাইলে প্রতিবেদককে ডা. খান মো. আসাদুল্লা হেল গালিব বলেন, ‘আমরা ওই কোম্পানিকে ব্লাক লিস্টে ফেলবো এবং তাঁর আগেই তাদের সমস্ত থার্মোমিটার ফেরত পাঠাবো। যাতে তারা আর কাউকে এভাবে প্রতারিত করতে না পারে। সেই সঙ্গে

হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কোনো তারা বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বলেনি।’

একজন প্রবাসীকে প্রায় ৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি রেখে আমা দের ১ লাখ ২২ হাজার ২৩৯ টাকা বিল করেছে ল্যাবএইড। তাদের অবহেলা ও নষ্ট

থার্মোমিটারের কাহিনী ফাঁস করার ভয়ে বিল কমিয়ে ৯৫ হাজার টাকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন নুরুল আমিন ভুইয়ার ছোট ভাই ফেরদৌস জামান। না জানি এমন কতো মানুষকে এরা এভাবে দিনের পর দিন হাসপাতালে ভর্তি রেখে বিলের পর বিল দিয়ে প্রতারণা করেছে যোগা করেন ফেরদৌস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!