প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা কতখানি এটা যদি আমরা জানতে পারতাম তবে নিজের জন্যে আলাদা করে সময় বের করে আমরা ঠিকই প্রতিদিন কয়েক পাতা করে বই পড়ার চেষ্টা করতাম।
আজকের এই ফিচার থেকে জেনে নিন প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা কতখানি এবং কী কী! ১/ মানসিক উদ্দীপনা তৈরি করে: গবেষণা থেকে প্রমাণ হয়েছে যে মানসিক উদ্দীপনা আলঝেইমার এবং ডেমেনশিয়ার মতো মানসিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। আপনার মস্তিষ্ক উদ্দীপনাময় এবং কর্মচঞ্চল থাকলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আপনার শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই, আপনার মস্তিষ্কের এক্সারসাইজের প্রয়োজন রয়েছে সুস্থ এবং সবল থাকার জন্য। পাজল মেলানো এবং দাবা খেলার মতো খেলাগুলো মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
২/ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে: অফিসে কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যার চাপ অথবা ভালোবাসার সম্পর্কে চাপ যতোই থাকুক না কেনো, আপনি চাইলেই সবসময়ই এই সকল সমস্যা এবং চাপ থেকে নিজেক সরিয়ে রাখতে পারেন একটা ভালো গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে। খুব দারুণ কোন উপন্যাসের গল্প আপনাকে নিমিষেই আপনার বাস্তব জগতের সমস্যা থেকে অন্য একটা কাল্পনিক জগতে নিয়ে যেতে সাহায্য করে বলে আপনার মানসিক চাপ কমে যায় অনেকখানি।
৩/ জ্ঞান বৃদ্ধি করে: আপনি যত বেশী বই পড়বেন, তত বেশী আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি বইয়ে থাকে হাজারো রকমের তথ্য, যখন কোন একটা বই আপনি পড়বেন, হোক সেটি গল্পের বই কিংবা কল্পকাহিনী, আপনি বই পড়ার সাথে সাথে নানা ধরণের তথ্য নিজের ভেতরে গ্রহণ করে নিতে পারছেন। জ্ঞান সবসময় এবং সকল ক্ষেত্রেই একজন মানুষকে সমৃদ্ধ করে। সেক্ষেত্রে বই পড়ার জন্যে আপনি নিজেই নিজের উপকার করছেন।
৪/ আপনার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করে: খুব স্বাভাবিকভাবেই, আপনি যত বেশী দেশী এবং বিদেশী ভাষার বই পড়বেন আপনার শব্দ ভান্ডার তত বেশী ভারী হবে। শুধুমাত্র পাঠ্যবই পড়ে আপনি কখনোই আপনার শব্দ জ্ঞান বাড়াতে পারবেন না। যত বেশী আপনার শব্দ ভান্ডার ভারী হবে, তত বেশী আপনার কথা বলার উপর অথবা লেখার উপর দখল আসবে। যে অনেক বেশী বই পড়েন, অনেক বেশী জানেন এবং সকলের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন, চাকরী ক্ষেত্রে তার উন্নতি হয় খুব দ্রুত।
৫/ স্মরণশক্তি বাড়ায়: একটা উপন্যাস পড়ার সময়ে আপনাকে উপন্যাসের অনেকগুলো চরিত্র, চরিত্রের ধরণ, চরিত্রের নাম, উপন্যাসের কাহিনী, উদ্দেশ্য, ইতিহাসসহ বিভিন্ন জিনিস মনে রাখতে হয় এবং এইভাবে মনে রেখেই আপনাকে উপন্যাসটি শেষ করতে হয়। যদিও এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তবুও আপনাকে উপন্যাসের গল্পটির বিভিন্ন বাঁক, এবং বিভিন্ন ঘটনা ও টুকিটাকি মনে রাখতে হয় বলে এক্ষেত্রে আপনার প্রচুর ব্রেইন ওয়ার্ক হয়। যে কারণে, বই পড়ার মাধম্যে আপনার স্মরণশক্তি বৃদ্ধি হয়।
৬/ আপনার বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: কখনো কি এমন হয়েছে, কোন একটা রহস্য উপন্যাস পড়ছেন, সেই বই শেষ করার আগেই আপনি রহস্য ধরে ফেলতে পেরেছেন? যদি এমন করতে পেরে থাকেন তবে বুঝতে হবে যেকোন পরিস্থিতি এবং ঘটনাকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আপনার খুব দারুণ।যেকোন সময়ে আপনার এই বিশ্লেষণ ধর্মী চিন্তাধারা আপনার বাস্তব জীবনের কাজের উপরেও প্রভাব ফেলবে এবং আপনাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকবে।
৭/মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে : ইন্টারনেটের এই যুগে প্রতিটা মানুষ এখন প্রতি মুহুর্তে হাজারো কাজে একসাথে ব্যস্ত থাকে। একসাথে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকতে হয়, সকলের সকল ঘটনার ব্যপারে একদম আপ-টু-ডেট থাকতে হয়। আবার নিজের কাজের খাতিরে ই-মেইল দেখা, কাজের খোঁজ রাখা ইত্যাদি একশ ধরণের কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হয় নিজেকে। সেখানে একটা বই পড়ার মতো কাজ অনেক ধৈর্যর ব্যাপারই বটে। ঘন্টার পর ঘন্টা তো বটেই, দিনের পর দিন একটা বই নিয়ে বসে থাকার ফলে যেমন আপনার সকল মনোযোগ একদিনে কেন্দ্রীভূত হয়, তেমনভাবেই যেকোন কাজের প্রতি মনোযোগটাও বৃদ্ধি পাবে আপনার।
৮/ লেখার দক্ষতা বেড়ে যাবে : বেশী বই পড়লে যেমন আপনার শব্দ ভান্ডারের ঝুলি ভারী হয়ে যায়, ঠিক একইভাবে আপনার লেখালেখির উপর দক্ষতা চলে আসে। যত বেশী শব্দ জানেবেন আপনি, তত বেশী লেখার ক্ষেত্রে হাত ভালো হয়ে উঠবে আপনার।
৯/ মানসিক প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে:আপনার পছন্দের বিষয় এবং পছন্দের বই এবং পছন্দের লেখা পড়লে মানসিকভাবে আপনি অনেক বেশী শান্ত এবং প্রশান্তি অনুভব করতে পারবেন। গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, আধ্যাত্মিক মূলক বই পড়লে রক্তচাপ কমে যায় অনেকখানি!এমনকি দেখা গেছে যে, হালকা মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রেও মানসিকশক্তি বৃদ্ধিমূলক বই পড়া খুব সাহায্য করে থাকে।
১০/ সকলের জন্য উন্মুক্ত বিনোদন: বই যে শুধুমাত্র জ্ঞান বাড়ানোর জন্য অথবা তথ্য আহরণের উপায় তা কিন্তু নয়! একটা দারুণ গল্পের বই বা উপন্যাসের বই আপনাকে হাসাতেও পারে আবার কাঁদাতেও পারে। মোট কথা, একটা চমৎকার বই আপনার অনুভূতিগুলো নিয়ে দারুনভাবে খেলা করতে পারে, যা কিনা আপনাকে দিতে পারে সময় কাটানোর জন্য চমৎকার বিনোদন। সূত্র: Life Hack