সিলেটের এমসি কলেজে স্নাতক পড়ার সময়ই ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার’ প্রতিযোগিতায় নাম লেখান শানারৈই দেবী শানু। ২০০৫ সালে আয়োজিত এই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এরই মধ্যে কেটে গেছে এক যুগের বেশি সময়। ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন অভিনয়ে মনোযোগী তিনি। অভিনয় করেছেন নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে। এবার তাঁর অভিনীত সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। প্রথম সিনেমা ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ মুক্তি উপলক্ষে রোমাঞ্চিত শানু। কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
কী করছেন?
১৬ নভেম্বর আমার প্রথম সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। তাই আপাতত নাটকের শুটিং থেকে ছুটি। সিনেমা ছাড়া আর কিছু ভাবছি না।
‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবিতে শানুর ভূমিকা কী?
‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবিতে যিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, আমি তাঁর স্ত্রী। আমার চরিত্রের নাম কুমু। বলতে পারেন, আমি ‘মিসেস বাংলাদেশ’।
‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবির ট্রেলার দেখে মনে হলো ছবিটি জঙ্গিবাদ নিয়ে।
ধর্মকে পুঁজি করে কিছু মানুষ তরুণদের বিভ্রান্ত করছে, ধর্মের বাণীকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে, তরুণদের জঙ্গি হামলার জন্য প্রস্তুত করছে—ছবিতে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ যিনি, তার একটি গল্প আছে। সেটা এখনই বলতে চাই না। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শক দেখবেন। অনেক কিছু জানতে পারবেন। পরিবার, ভালোবাসার মানুষ—সবাইকে হারিয়ে এক তরুণ কেমন আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে, ছবিতে তা দেখা যাবে। এই ছবির অন্যতম উদ্দেশ্য তরুণদের সচেতন করা। পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমা হলেও এই ছবির মধ্য দিয়ে আমরা তরুণদের কিছু বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
প্রথম সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
আমি খুব রোমাঞ্চিত। আবার ভয়ও কাজ করছে, অপেক্ষা করছি। ভাবছি, প্রত্যাশা পূরণ হবে তো? আমরা যখন কোনো কাজ করি, দর্শকের ভালো লাগার ওপর তার সাফল্য নির্ভর করে। দর্শক কীভাবে গ্রহণ করবেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় আছি।
এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ছবির কাজ শুরুর সময়টা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। যখন শুটিং করছি, তখন জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। থমথমে পরিবেশ ছিল। শুনেছি, ছবির ‘কুমু’ চরিত্রের জন্য কয়েকজনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমার সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন ছবির নায়ক ও পরিচালক খিজির হায়াত খান বললেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ নিয়ে একটা কাজ করব। খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ হতে পারে। বিষয়টা স্পর্শকাতর। তুমি আমাদের সঙ্গে কাজটি করতে চাও?’ আমার মনে হয়েছিল, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কাজটি করি। শিল্পীর জায়গা থেকে একটা ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। আর শিল্পী হিসেবে সবাইকে সচেতন করা আমার দায়িত্ব। তাই রাজি হয়ে যাই। ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পর আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপরও সবাই মিলে ছবিটি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
আপনি চ্যানেল আইয়ের ধারাবাহিক নাটক ‘সাত ভাই চম্পা’তে কাজ করছেন। এই ধারাবাহিকের খবর কী?
প্রথম সিজনের শুটিং শেষ। প্রথম সিজনে ১৩০ পর্বের কাজ হয়েছে। পর্বগুলো এখন প্রচারিত হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবির মুক্তির কথা শোনা গিয়েছিল।
খিজির হায়াত খানের মতে, ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ পুরোপুরি বাংলাদেশের ছবি। তাই তিনি ছবির শুটিং–পরবর্তী সব কাজ বাংলাদেশেই করতে চেয়েছেন। কাজগুলো করতে গিয়ে একটু বেশি সময় লেগেছে।
এখন হলিউড ও বলিউডে ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ মুভমেন্ট চলছে। আপনি দীর্ঘদিন মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। আপনাকে কখনো কোনো হেনস্তার মুখোমুখি হতে হয়েছে?
খারাপ অভিজ্ঞতা তো অবশ্যই আছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র, সব জায়গায় এমন আপত্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। আমার জীবনেও তেমন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু ওসব বলে এখন আর কাউকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না।
ওই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
আমার অভিনয়জীবনের একেবারে গোড়ার দিকে। সময়টা ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার পরই। সেই অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। আমি সিলেটের মেয়ে। সহজ-সরল পরিবেশে বড় হয়েছি। এদিকে ঢাকায় এসে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ব্যাপারগুলো তখন আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি। এমন মানুষদের কাছ থেকে আপত্তিকর প্রস্তাব পেয়েছি, যা ছিল সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। আমার কী করা উচিত, বুঝতে পারছিলাম না। এখন যিনি আমার স্বামী, তখন তিনি ছিলেন বন্ধু; তাঁকে জানাই। তিনি মানসিকভাবে সাপোর্ট দেন। ওই সময় তিনি আমার পাশে ছিলেন। তাঁর ইতিবাচক সহযোগিতার কারণে সেই কঠিন অবস্থা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। যেসব কারণে এমন আপত্তিকর প্রস্তাব পাওয়ার উপক্রম হতো, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি। আমার শোবিজ জীবনে এমন ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। কৌশলে তা এড়িয়ে গেছি।
আপনার বাবা কবি। বাবার কারণেই নিজে লেখালেখির চর্চা করছেন?
তেমনটাই হবে হয়তো। লেখালেখি আমার রক্তেই ছিল। লেখালেখি নিয়ে এতটা এগোতে পারব, ভাবিনি। লেখালেখির ব্যাপারে আমার নিজেরও ততটা আত্মবিশ্বাস ছিল না। এরপরও সবার কাছ থেকে যেভাবে প্রশংসা পাচ্ছি, সেটা আমাকে অনেক বেশি উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। আগে কবিতা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করার পর অনেকেই লেখালেখির চর্চা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। সবার উৎসাহে এ পর্যন্ত চারটি বই প্রকাশ করেছি।
ভবিষ্যতে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে আপনার নতুন কোনো বই আসছে?
আগামী বছর বইমেলায় আমার একটি উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। লেখা শেষ। একটি প্রকাশনী সংস্থা আমার কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি চেয়েছে। উপন্যাসটির নাম ‘একলা আকাশ’।