class="post-template-default single single-post postid-10602 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

হাত বাড়ালেই মহাকাশ

মহাকাশযদি মা বলতো যাও, চুপটি করে মহাকাশে বসে থাকো। জোর মজা হতো। সত্যি কিন্তু সম্ভব। প্লানেটরিয়াম তো মহাকাশই। সময় করে নিয়ে বসে যাও

ক্লাসের বিজ্ঞান বই পড়তে মোটেও ভালো লাগে না অর্ণবের। পড়ে ক্লাস ফাইভে। ধানমণ্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুলে। কিন্তু নভোথিয়েটারে এসে বিজ্ঞান সম্পর্কে ওর ধারণাই পাল্টে গেল। বিজ্ঞান বইয়ের গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ছিল কত দূরে দূরে। আর নভোথিয়েটারের গ্রহ-নক্ষত্রগুলো এত কাছে! মনে হচ্ছিল হাত বাড়ালেই বুঝি ছোঁয়া যাবে।

যারা এখনো নভোথিয়েটারে যাওনি, তারা যদি যেতে চাও, তাহলে চলে এসো ঢাকার বিজয় সরণিতে। এখানেই আছে দেশের একমাত্র প্লানেটারিয়াম নভোথিয়েটার। নভোথিয়েটারে দেখার অনেক কিছুই আছে। অর্ধগোলাকার কক্ষে আছে পারফোরেটেড অ্যালুমিনিয়াম পর্দা। ওই পর্দায় চোখ রাখলে ছাদটাও সিনেমার অংশ মনে হবে। বিভিন্ন স্পেশাল ইফেক্ট তৈরির জন্য রয়েছে জিএসএস হেলিয়াস প্রজেক্টর। অ্যালুমিনিয়ামের পর্দার সঙ্গে ওই প্রজেক্টরের সমন্বয়ে যখন তুমি কোনো ফিল্ম দেখবে, দৃশ্যগুলো মনে হবে জীবন্ত।

নভোথিয়েটারে নিয়মিত দুটি ফিল্ম দেখানো হয়। একটি মহাকাশবিষয়ক শো। নাম ‘জার্নি টু ইনফিনিটি’। অন্যটি বাংলাদেশবিষয়ক তথ্যচিত্র ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’। ‘জার্নি টু ইনফিনিটি’তে দেখতে পাবে মহাকাশবিষয়ক তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রটি বানিয়েছেন মার্কিন ডকুফিল্ম নির্মাতা ড. বিল গুস। ওই তথ্যচিত্র দেখতে দেখতে কখন যে তুমি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে পৌঁছে যাবে, টেরই পাবে না। মনে হবে, তুমি নিজেই বুঝি মহাকাশে ভাসছ। শুধু তা-ই নয়, চন্দ্রগ্রহণ আর সূর্যগ্রহণ নিয়ে যারা প্রশ্ন করে করে বড়দের কান ঝালাপালা করো, সেগুলো কেমন করে ঘটেÑদেখতে পাবে নিজের চোখে। দেখতে পাবে উল্কাপাতও। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের রাতের আকাশ, সূর্যের মধ্যে কী ঘটে, নক্ষত্রের জš§-মৃত্যুসহ এমন আরো অনেক কিছুই দেখতে পাবে, যেগুলোর কিছু হয়তো তুমি জানো, আবার কিছু জানো না।

আর দেখতে পাবে চিরচেনা বাংলাদেশকে। তবে অন্য রকম ভাবে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে অনেক কিছুই। জানতে পারবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিশ্বাস। মনেই হবে না তুমি কিছু জেনে নিচ্ছ। মনে হবে মজাদার কোনো ছবি দেখছ। ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’ নামের এই তথ্যচিত্রের পরিচালনা, চিত্রনাট্য তৈরি ও ধারাবিবরণী দিয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক।

আবার কেউ যদি বলো, ধ্যাৎ! ওখানে তো শুধু শেখায়, যাব না। আছে কোনো খেলনা? তারাও জেনে নাও, ওখানেও আছে ক্যাপসুল রাইড সিমুলেটর। মানে একটা রোলার কোস্টার। তবে এই রোলার কোস্টারে চড়ে তুমি কোথায় যাবে জানো? প্রাচীন পিরামিডের মধ্য দিয়ে সময়ের দরজা পেরিয়ে ভ্রমণ করবে মিসর নামের দেশটি। নভোথিয়েটারে গিয়ে একটা দেশ ভ্রমণ করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। মিসর ভ্রমণের জন্য আসন রয়েছে ৩০টি। আর টিকিটের দাম মাত্র ২০ টাকা।

এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞান যদি তোমাকে টানে, তাহলে দেখতে পারো সৌরজগতের গ্রহসহ চাঁদ-সূর্যের মডেল। যারা আরো আগ্রহী, তাদের জন্য রয়েছে টাচস্ক্রিন কম্পিউটার। আঙুল ছুঁইয়ে জানতে পারবে বিজ্ঞানভিত্তিক নানা তথ্য।

নভোথিয়েটারের মূল চত্বরের প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। তবে প্লানেটারিয়াম শো বা রাইড সিমুলেটরের টিকিট নিলে ১০ টাকার এই টিকিট কিনতে হবে না। প্লানেটারিয়াম শোর জন্য জনপ্রতি প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচটি প্রদর্শনী চলেÑসকাল ১১টা, দুপুর ১টা, বিকেল ৩টা, ৫টা ও সন্ধ্যা ৭টা। আর নভেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন চলে চারটি প্রদর্শনী। বুধবার সাপ্তাহিক ছুটি। অন্যান্য ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে। টিকিট পাওয়া যাবে প্রদর্শনীর আগে কাউন্টারে।

আমাদের এই নভোথিয়েটার বানানোর কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। শেষ হয় ২০০৪ সালে। উদ্বোধন করা হয় ২০০৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ১২৩ কোটি টাকা খরচ করে ২২ হাজার ৯৬ বর্গমিটারের এ নভোথিয়েটার বানায় বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এখানে প্রদর্শনীর জন্য যেসব জিনিস আছে, সেগুলো আনা হয়েছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে। আর এই নভোথিয়েটার বানানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাদের মতো শিক্ষার্থীদের মহাকাশবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেয়া। সঙ্গে সঙ্গে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করতে সহায়তা করা। সব মিলিয়ে তোমরাই যাতে হয়ে ওঠো একেকজন বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!