Thursday, April 25
Shadow

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ | কিডনি রোগের লক্ষণ

 কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসামানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে রেচন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ গুলো নিষ্কাশন করে থাকে। এই রেচন প্রক্রিয়া সফলভাবে পরিচালনের লক্ষে যেসব অঙ্গ কাজ করে থাকে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে বৃক্ক বা কিডনি। শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া সম্পাদনকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিতে অনেকসময় বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় যার প্রভাব পড়ে পুরো শরীরেই, সাধারণ অসুস্থতা থেকে মৃত্যুও হতে পারে কিডনি বিকলের কারণে। তাই আজ রইল কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ এবং কিডনি রোগের লক্ষণ ।

 

 

কিডনি যেসকল কাজ করে

 

  • শরীরে অ্যাসিড ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা – রক্তের স্বাভাবিক pH ৭.৩৫ থেকে, ৭.৪৫ পর্যন্ত হয়ে থাকে। রক্ত ফিল্টারের মাধ্যমে অ্যাসিড ক্ষার ধরে রাখা কিংবা অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষার নির্গমনের মাধ্যমে কিডনি শরীরে অ্যাসিড ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

 

  • পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ – যখন আমরা অতিরিক্ত পানি গ্রহণ করি তখন কিডনি অতিরিক্ত মূত্র তৈরি করে অপরদিকে যখন পানির অভাব থাকে শরীরে তখন কিডনি কম মূত্র তৈরি করে এভাবে কিডনি আমাদের শরীরে পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

 

  • ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা – ইলেক্ট্রোলাইট হচ্ছে সোডিয়াম, পটাসিয়াম সহ আরও কিছু আয়ন যা মানবদেহে বিশেষ কিছু কাজে অংশগ্রহন করে থাকে। কিডনি রেচন এবং বিভিন্ন আয়নের পুনর্শোষণের মাধ্যমে রক্তে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।  

 

  • শরীর থেকে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ – কিডনি মূলত ৩ টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করে: (১) গ্লোমেরুলির মাধ্যমে পরিস্রাবণ; (২) প্যাসিভ ডিফিউশন; এবং (৩) সক্রিয় প্রক্রিয়া যেখানে টক্সিনগুলি রক্তের পাশাপাশি প্রস্রাবেও পরিবাহিত হয়।

 

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিডনি একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

  • ইরিথ্রোপোয়েটিন হরমোন তৈরি করা – ইরিথ্রোপয়েটিন (ইপিও) হল একটি হরমোন যা মূলত কিডনির অন্তর্বর্তী কোষ নামক একটি বিশেষ কোষ থেকে উৎপাদিত হয়। এই হরমোনটি টি লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়াতে অস্থি মজ্জার স্টেম সেলকে উদ্দীপিত করে।

 

  • ভিটামিন ডি সক্রিয় করা – কিডনি ভিটামিন ডি কে পরিপূরক বা ভিটামিন ডি এর সক্রিয় ফর্মে রূপান্তর করে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ

২০২০ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ৮৫০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের কোনো না কোনো ধরনের কিডনি রোগ রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বিভিন্ন দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত স্ট্রেস এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারনে কিডনিতে সাধারণ সমস্যা থেকে জটিল সমস্যা ধরা দিতে পারে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে কিডনি রোগগুলো মৃত্যু ডেকে আনতে পারে এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সূচনা করে থাকে। তাই, প্র‍থম থেকেই নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের প্রতি জোর দিতে হবে যাতে করে শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি সুস্থ থাকে এবং মানবদেহে এর নির্দিষ্ট কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : কিডনি রোগগুলো সম্পর্কে জানুন

কিডনির রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে হলে সবথেকে জরুরি হচ্ছে কিডনির রোগ গুলো সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী সাবধানতা অবলম্বন করা। সাধারণত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।

কিডনিতে সাধারণত যেসকল সমস্যা দেখা দিতে পারে :

 

ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ – কিডনি রোগের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হল ক্রনিক কিডনি রোগ। এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়।উচ্চ রক্তচাপ কিডনির জন্য বিপজ্জনক কারণ এটি গ্লোমেরুলির উপর চাপ বাড়াতে পারে। গ্লোমেরুলি হল কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালী যেখানে রক্ত ​ফিল্টার হয়। সময়ের সাথে সাথে এই বর্ধিত চাপ গ্লোমেরুলির ক্ষতি করে এবং কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে শুরু করে।এর আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। রক্তে শর্করার বর্ধিত মাত্রা সময়ের সাথে সাথে কিডনির রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে কিডনি সঠিকভাবে রক্ত ​​পরিষ্কার করতে পারে না এবং বিষাক্ত পদার্থ গুলো শরীরে জমতে থাকে।

 

কিডনিতে পাথর – কিডনিতে পাথর আরেকটি সাধারণ কিডনির সমস্যা। এটি ঘটে যখন রক্তে খনিজ এবং অন্যান্য পদার্থ কিডনিতে স্ফটিক হয়ে শক্ত হয়ে যায়। কিডনিতে পাথর সাধারণত প্রস্রাবের সময় ও শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। তবে এর পরিমাণ বেশি হলে মূত্রত্যাগে সমস্যা হতে পারে এবং প্রচুর ব্যাথা ও হতে পারে।

 

গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস– গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস হল গ্লোমেরুলির একটি প্রদাহ। গ্লোমেরুলি কিডনির অভ্যন্তরে অত্যন্ত ছোট গঠন যা রক্তকে ফিল্টার করে। গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস সংক্রমণ, ওষুধ বা জন্মগত অস্বাভাবিকতার কারণে হতে পারে। এটি প্রায়শই নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। তবে অনেকসময় জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

পলিসিস্টিক কিডনি রোগ – পলিসিস্টিক কিডনি রোগ হল একটি জেনেটিক ব্যাধি যাতে কিডনিতে অসংখ্য সিস্ট জন্মায়। এই সিস্টগুলি কিডনির কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং কিডনি বিকলের কারণ হতে পারে।

 

মূত্রনালীর সংক্রমণ – ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বা মূত্রনালী ইনফেকশন হল ইউরিনারি সিস্টেমের যেকোনো অংশে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। মূত্রাশয় এবং মূত্রনালীতে সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এগুলো সহজেই চিকিৎসাযোগ্য এবং খুব কমই অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে। কিন্তু যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তবে এই সংক্রমণগুলি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিডনি বিকলের কারণ হতে পারে।

 

একিউট কিডনি ইনজুরি – একিউট কিডনি ইনজুরি যা একিউট রেনাল ফেইলিউর নামেও পরিচিত হচ্ছে কিডনি ফেইলিওর বা কিডনি বিকলের একটি আকস্মিক পর্ব যা কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে ঘটতে পারে। এই সমস্যাটি মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং ফুসফুসের মতো অন্যান্য অঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে।

 

অ্যালপোর্ট সিনড্রোম – এটি এমন একটি রোগ যা কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে কিডনি বিকল হতে পারে। এটি শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং চোখের মধ্যে সমস্যা ও সৃষ্টি করতে পারে।

 

ফ্যাব্রি ডিজিজ – এটি একটি বিরল ব্যাধি যা ঘটে যখন শরীরে আলফা-গ্যালাক্টোসিডেস এ (আলফা জিএএল) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমের অভাব হয়।এর ফলে কিডনি বিকল সহ অন্যান্য মারাত্মক অসুস্থতা ও দেখা দিতে পারে।

 

নেফ্রোপ্যাথিক সিস্টিনোসিস – এটি একটি বিরল রোগ যা সাধারণত অল্প শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।এই রোগটি অ্যামিনো অ্যাসিডের অস্বাভাবিক গঠনের কারণে ঘটে। এটি একটি বিরল, কিন্তু গুরুতর রোগ।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো চিনুন

আপনার দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো হচ্ছে :

 

১. ডায়াবেটিস

২. উচ্চ রক্তচাপ

৩. হার্ট (কার্ডিওভাসকুলার) রোগ

৪. ধূমপান

৫. স্থূলতা

৬. কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস

৭. অস্বাভাবিক কিডনি গঠন

৮. বার্ধক্য

৯. কিডনির ক্ষতি করতে পারে এমন ওষুধের যেমন বিভিন্ন পেইন কিলারের ঘন ঘন ব্যাবহার।

 

কিডনি রোগের লক্ষণ 

কিডনিতে কোনো রোগ হলে শরীরে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব উপসর্গ দেখে প্রথম থেকেই সাবধান হলে কিডনি বিকলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো হচ্ছে :

 

১. বমি বমি ভাব

২. বমি

৩. ক্ষুধামান্দ্য

৪. ক্লান্তি এবং দুর্বলতা

৫. ঘুমের সমস্যা

৬. কমবেশি প্রস্রাব করা

৭. মানসিক তীক্ষ্ণতা হ্রাস

৮. পেশীতে ব্যাথা

৯. পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া

১০. শুষ্ক ত্বক ও চুলকানি

১১. উচ্চ রক্তচাপ

১২. শ্বাসকষ্ট

১৩. বুকে ব্যথা

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ

সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ বলতে বুঝায় মূলত লবণ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ যা কিডনি রোগীদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন কিডনিতে কোনো রোগ হয় অর্থাৎ কিডনি ভালোভাবে রক্ত ফিল্টার করতে পারেনা তখন শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং তরল জমা হয়। এর ফলে গোড়ালি ফোলা, ফোলাভাব, রক্তচাপ বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। একজন কিডনি রোগীর জন্য প্রতিদিন ২৩০০ মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহন করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই দৈনন্দিন খাদ্যে লবনের ব্যবহার কমাতে হবে এছাড়াও আরও কিছু সোডিয়ামযুক্ত খাবার হচ্ছে –

 

১.বার্বিকিউ সস,স্টেক সস,সয়া সস, টেরিয়াকি সস।

২.আলুর চিপস,টর্টিলা চিপস,বাদাম, ভুট্টার খই,সূর্যমুখী বীজ

৩.হট ডগ, সসেজ এবং যেকোনো ক্যানড ফুড।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : পটাসিয়াম নিয়ন্ত্রণ

প্রত্যেকের বেঁচে থাকার জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজন। পটাসিয়াম একটি খনিজ এবং একটি ইলেক্ট্রোলাইট। এটি হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে ভূমিকা রাখে। খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পটাসিয়াম সরবরাহ হয় এবং অতিরিক্ত পটাসিয়াম কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাষিত হয়। কিন্তু কিডনি রোগ হলে কিডনি সঠিক উপায়ে অতিরিক্ত পটাসিয়াম অপসারণ করতে পারে না এবং অত্যধিক পটাসিয়াম রক্তে থেকে যায়। রক্তে খুব বেশি পটাসিয়াম জমা হয়ে একটি রোগের সৃষ্টি হয় যাকে হাইপারক্যালেমিয়া বলা হয়। এটি হার্ট অ্যাটাক বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। পটাসিয়াম যুক্ত খাবার গুলো হচ্ছে –

 

১. কলা

২. আলু

৩. শিমের বিচি

৪. পনির

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ

ফসফরাস একটি খনিজ যা শরীরের অনেক কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাধারণত হাড়ের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এটি শরীরকে কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে এবং কোষ জুড়ে শক্তি স্থানান্তর করতে সহায়তা করে। যখন কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে তখন এটি রক্ত থেকে অতিরিক্ত ফসফরাস অপসারণ করে। কিন্তু যখন কিডনি ভালোভাবে কাজ করে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত ফসফরাস জমতে থাকে। শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এবং ফসফরাসের পরিমাণের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ভারসাম্য অত্যাবশ্যক। যদি অতিরিক্ত ফসফরাস শরীর থেকে বের হতে না পারে তবে রক্তে জমা হওয়ার ফলে ক্যালসিয়াম ফরফরাস ভারসাম্য রক্ষার জন্য হাড় থেকে ক্যালসিয়াম টেনে নেওয়া হয়। এর ফলে হাড় ভঙ্গুর এবং দুর্বল হতে পারে। তাই, কিডনি সমস্যায় ফসফরাস গ্রহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উচ্চ ফসফরাস যুক্ত খাদ্য গুলো হচ্ছে –

 

১.দুগ্ধজাত খাবার

২.মটরশুটি

৩.মসুর ডাল

৪.বাদাম

৫.ব্রান সিরিয়াল

  ৬.ওটমিল

৭.ফসফেট যুক্ত কোলা এবং অন্যান্য পানীয়।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : উপকারী খাদ্য সামগ্রী

সুস্থ থাকতে হলে কিডনি রোগীদের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় সেসকল খাদ্যই যুক্ত করতে হবে যেগুলোতে উপরে উল্লেখিত খনিজের পরিমাণ কম থাকে এবং অন্যান্য খাদ্য উপাদান থাকে যা কিডনি রোগীদের জন্য উপকারী। এরকম কিছু খাদ্য সামগ্রী হচ্ছে –

 

বাঁধাকপি : এটি ফাইটোকেমিক্যাল দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে যা ক্ষতি করার আগেই ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলিকে ভেঙে দেয়। এছাড়াও এই সবজি ভিটামিন কে, ভিটামিন সি,ভিটামিন বি ৬, ফাইবার এবং ফলিক অ্যাসিডেরও ভালো উৎস। এতে পটাসিয়াম কম থাকে এবং এটি কিডনি রোগীদের ডায়েটে একটি উপর্যুক্ত সংযোজন।

 

ফুলকপি : CKD আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ফুলকপি একটি উপকারী সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট ও অন্যান্য ভিটামিন থাকে এবং সোডিয়াম, পটাসিয়াম,  ফসফরাস খুবই কম পরিমানে থাকে।

 

আপেল : আপেল একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যাতে পেকটিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইবার থাকে। পেকটিন কিডনির ক্ষতির জন্য কিছু ঝুঁকির কারণ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যেমন : রক্তে উচ্চ শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা।

 

ব্লুবেরি : ব্লুবেরি একটি সুপাফুড হিসেবে বিবেচিত হয়। কিডনি রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী। এটা ফাইবার এবং ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস।

 

ডিমের সাদা অংশ : সাধারণত ডিমের কুসুমে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে যা কিডনি রোগীদের জন্য বেশি ক্ষতিকারক। সেক্ষেত্রে শুধু ডিমের সাদা অংশ গ্রহন প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হতে পারে।

 

ক্যাপসিকাম : লাল ক্যাপসিকাম ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, সেইসাথে ভিটামিন বি 6, ফলিক অ্যাসিড এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস এবং এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ ও কম থাকে যা কিডনি রোগীদের জন্য উত্তম।

 

পেঁয়াজ : পেঁয়াজে পটাসিয়াম কম থাকে এবং এটি ক্রোমিয়ামের একটি ভাল উৎস। ক্রোমিয়াম কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং প্রোটিন বিপাকের সাথে সাহায্য করে।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ  : যেসকল খাবার বর্জন করতে হবে

কিডনিই সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ গুলো অপসারনে কিন্তু যখন আমাদের এই কিডনিই হয়ে যায় রোগাক্রান্ত তখন এ ঘটনা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের জন্যও ডেকে আনে অনেকটা বিপদ। কারণ সঠিক ভাবে রক্ত ফিল্টার না হওয়া এবং শরীরে টক্সিন জমতে থাকা। এক্ষেত্রে যদি আমরা সেসকল খাবারই গ্রহণ করি যেগুলো থেকে সাধারণত বেশি টক্সিক উপাদান তৈরি হতে পারে তাহলে তা মারাত্মক হতে পারে আমাদের জন্য। তাই কিডনি রোগীদের জন্য সঠিক খাবারের  বাছাই টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এর পাশাপাশি কোন খাবার গুলো বিপাক না হলে কিংবা কম বিপাক হলে অনেক বেশি বিষাক্ত উপাদান জমতে পারে এ সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই খাদ্য ও পানীয় বর্জন করতে হবে।

যেসকল খাবার ও পানীয় বর্জন করতে হবে

১. অ্যালকোহল

২. বিভিন্ন ধরনের সোডা

৩. প্রসেসড মিট

৪. ক্যান ফুড

৫. বাদামী চাল

৬. দুগ্ধজাত খাদ্য

৭. কলা

৮. অ্যাভোকাডো

৯. কমলা এবং কমলার জুস

১০. আচার

১১. আলু এবং মিষ্টি আলু

১২. টমেটো

 

কিডনি রোগীদের জন্য ব্যায়াম

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ কারণ –

১. যখন কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়, তখন এটি পেশী এবং হাড়কে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে তখন কিডনি রোগীরা অনেকসময় অনুভব করে যে ক্লান্ত লাগছে, দুর্বল লাগছে, জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হচ্ছে। এগুলো বেশি ঘটে যাদের ক্ষেত্রে পেশির ব্যবহার খুবই সামান্য করা হয়। অর্থাৎ হাটা চলা বা ব্যায়াম না করা।

২.সাধারণত ঘামের মাধ্যমেও আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থের অপসারন হয়। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে কিডনি যেহেতু সঠিক ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে না সেক্ষেত্রে ঘামের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারন কিন্তু বড় একটি সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। এক্সারসাইজ করলে স্বাভাবিকভাবেই বেশ ঘাম হয় এবং এটি কিডনি রোগীদের জন্য অবশ্যই উত্তম। তাই,নিয়মিত এক্সারসাইজ চালিয়ে যেতে হবে। সাইক্লিং, সাঁতার, হাঁটা এধরনের হালকা ব্যায়াম গুলো কিডনি রোগীরা করতে পারেন।

 

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : নিয়মিত চেকাপ

কিডনি রোগীদের জন্য বছরে একবার কিডনি চেকাপ করানো ভালো। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা একটি রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা এবং আরও কিছু পরীক্ষা করে থাকেন। কিডনি কতটা রক্ত ফিল্টার করতে পারছে। রক্তে ক্রিয়েটিনিন, অ্যালবুমিনের হার কত এসবকিছুই চেকাপের মাধ্যমে জানা সম্ভব এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মারাত্মক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

কিডনি রোগীদের সুগার কন্ট্রোল

আমরা ইতিমধ্যেই জানি ডায়াবেটিস কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে একটি রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তাই, কিডনি রোগ থাকলে সুগ্যার কন্ট্রোলে রাখা খুব জরুরি। সময়ের সাথে সাথে, রক্তে চিনির উচ্চ মাত্রা প্রতিটি কিডনির মধ্যে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ফিল্টারিং ইউনিটের ক্ষতি করে। এবং এ অবস্থা কিডনি বিকল পর্যন্ত গড়াতে পারে।

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : কিডনি রোগীদের ঘুম

কিডনির কার্যকারিতা আসলে ঘুম-জাগরণ চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি ২৪ ঘন্টা ধরে কিডনির কাজের চাপ সমন্বয় করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে লোকেরা কম ঘুমায় তাদের কিডনির কার্যকারিতা দ্রুত হ্রাস পায়।

কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ : ধূমপান ত্যাগ করুন

ধূমপান কিডনি রোগীদের জন্য মারাত্মক অসুস্থতার কারন হতে পারে। ধূমপান বেশ তামাক সহ কিছু বিষাক্ত পদার্থ শরীরে অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় এছাড়াও ধূমপান যেভাবে কিডনির ক্ষতি করে থাকে তা হচ্ছে –

১. রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে

২. কিডনিতে রক্ত ​​চলাচল কমায়

৩. এনজিওটেনসিন নামক একটি হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে

৪.কিডনির রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে

৫.ধমনীর ক্ষতি করে

৬. বৃক্কের ধমনীতে ধমনী স্কেলেরোসিস (ঘন এবং শক্ত হওয়া) গঠন করে

৭. কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস ত্বরান্বিত করে

 

কিডনি রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণ

বিশেষজ্ঞ রা ধারনা করে থাকেন স্থূলতা ও কিডনি রোগের মধ্যে নিবিড় সম্বন্ধ আছে। স্বাভাবিক ওজনের ব্যাক্তিদের থেকে স্থূল ব্যাক্তিদের কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭ গুণ বেশি। এছাড়া কিডনিতে রোগ হওয়ার পর স্থূলতা সুস্থতা নয় বরং কিডনি বিকলের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই, যেকোনো স্বাস্থ্য অবস্থায় ই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি ।

 

কিডনি রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

কিডনি রোগীদের জন্য প্রধান একটি রিস্ক ফ্যাক্টর হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। কিডনি রক্ত ​​থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করতে সাহায্য করে এবং এটি করার জন্য তারা প্রচুর রক্তনালী ব্যবহার করে। রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে,কিডনিতে অবস্থিত নেফ্রনগুলি যেগুলো রক্তকে ফিল্টার করে সেগুলো ভালভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পুষ্টি পায় না। এই কারণেই উচ্চ রক্তচাপ কিডনি ব্যর্থতার দ্বিতীয় প্রধান কারণ। সময়ের সাথে সাথে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির চারপাশের ধমনীগুলো সরু, দুর্বল বা শক্ত হতে পারে। এই ক্ষতিগ্রস্ত ধমনীগুলি কিডনি টিস্যুতে পর্যাপ্ত রক্ত ​​সরবরাহ করতে সক্ষম হয় না। তাই, কিডনি রোগীদের জন্য সবসময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে রক্তচাপ বেড়ে যায় এমন যেকোনো কাজ বা খাদ্য গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

অপ্রয়োজনে বেশি ওষুধ বর্জন করুন 

প্রতিটি ওষুধেরই সাইড ইফেক্ট থাকে এবং অনেকক্ষেত্রে এগুলো কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। অপ্রয়োজনে ওষুধ গ্রহন, অতিরিক্ত পেইন কিলার বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া কিডনিতে খুব বাজে প্রভাব ফেলে থাকে। কিডনিতে পাথর হতে পারে, গ্লোমেরুলাস গুলোর ক্ষতি হতে পারে এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। যারা ইইতিমধ্যেই বিভিন্ন কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহন কিডনি প্রক্রিয়াকে ত্বরানিত করতে পারে।

 

  1. কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায় যে খাবার
  2. কিডনি বিকল করে ফেলে কামরাঙ্গা !
  3. কিডনির জন্য ক্ষতিকর ছয় অভ্যাস
  4. ল্যাবএইড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সামাদের পরামর্শ
  5. কিডনি রোগ ও খাবার : ডা. শহিদুল ইসলাম সেলিম
  6. কিডনি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা ডা. হারুন আর রশিদ বললেন, জটিলতা বাড়ে ভিটামিন ‘ডি’ র অভাবে
  7. কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ ও কারণ
  8. কিডনির অসুস্থতার ছয় লক্ষণ
  9. কিডনির সমস্যা দূরে রাখতে যা করবেন
  10. কিডনি রোগের ১০ লক্ষণ, জানেন কি?
  11. কিডনি সুস্থ রাখার ৫ উপায়
  12. এই ৫টি নিয়ম মেনে চলুন, দূরে থাকবে কিডনির সমস্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!