খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুলের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ডায়েট প্লানেট অ্যান্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্সির পুষ্টিবিদ মাহবুবা চৌধুরী
ভুল-১ : খালি পেটে ফল খেলে গ্যাস হয়।
শরীর সুস্থ রাখতে ফল খাওয়া জরুরি। নিয়মিত ফল খেলে শরীরের ভেতর জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যায়। বেশির ভাগ ফলে থাকা ভিটামিন ‘সি’, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পুষ্টি ঘাটতির সমস্যা দূর করে।
অনেকের ধারণা, খালি পেটে ফল খেলে এসিডিটির সমস্যা হয়—এটি ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, ফল খাওয়ার পর এসিড হওয়ার কোনো আশঙ্কা তো থাকেই না; বরং শরীরে এসিড ও অ্যালকেলাইনের ভারসাম্য সঠিক রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি খালি পেটে ফল খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ শরীর সতেজ ও কর্মক্ষম রাখে। তবে প্রতিদিন সকালে পরিমিত ফল খাওয়া ভালো। যাঁরা খালি পেটে ফল বা ফলের রস খেতে ভয় পান, তাঁরা সামান্য কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার গ্রহণের পর খেতে পারেন।
ভুল-২ : চিনির চেয়ে মধু খাওয়া ভালো।
বিভিন্ন শরবত কিংবা চায়ে চিনির পরিবর্তে ইদানীং মধু ব্যবহারের প্রবণতা বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে। মধু প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় বলে অনেকে মনে করেন, এটি চিনির চেয়ে কম ক্ষতিকর। কিন্তু ধারণাটি ভুল। মিষ্টতার দিক থেকে মধু চিনির চেয়ে এগিয়ে। এক টেবিল চামচ চিনিতে ৪৯ ক্যালরি এবং ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। অন্যদিকে এক টেবিল চামচ মধুতে ৬৮ ক্যালরি ১৭.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। মধুতে সামান্য পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং খনিজ লবণ থাকে। চিনি যেহেত প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তাই এতে শর্করার উপস্থিতি পর্যাপ্ত থাকে। যাদের স্থূলতা কিংবা বহুমূত্র রোগ রয়েছে—তাদের জন্য মধু খুব বেশি উপকারী নয়। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত মধু গ্রহণও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুলের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ডায়েট প্লানেট অ্যান্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্সির পুষ্টিবিদ মাহবুবা চৌধুরী
ভুল-৩ : বেশি বেশি পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
অনেকে মনে করেন, অধিক পরিমাণে পানি পান করলেই স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এটি ভুল ধারণা। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, রক্তে লবণের পরিমাণ কমে যায়, চোখের প্রেসার বেড়ে গ্লুকোমা হয়, দেহ ও মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয় ইত্যাদি। অতিরিক্ত পানি পানে মাথা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, ঘাম বের হওয়া, পেশির সংকোচন, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পায়। তাই একজন মানুষের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী যতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই পান করা উচিত।
ভুল-৪ : মসলা আলসার তৈরি করে।
খাদ্যকে সুস্বাদু করে এবং হজমে সহায়তা করে মসলা। বেশির ভাগ মসলায় থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। তবে অনেকের মধ্যে এমন ভুল ধারণা রয়েছে যে মসলার কারণে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে আলসার তৈরি হয়। মসলা আলসার তৈরি করে না; বরং কিছু মসলা আছে যেমন—হলুদ, তা বরং দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
হেলিকোবেকটর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ওষুধ যেমন—এসপিরিন ইত্যাদির কারণে আলসার হয়ে থাকে। গবেষণায়ও দেখা গেছে, যেসব দেশে খাদ্যে মসলার ব্যবহার বেশি হয়, সেসব দেশে পাকস্থলীর ক্যান্সার কম হয়। তবে আইবিএসজনিত কারণে কারো কারো মসলাজাতীয় খাবার সহ্য নাও হতে পারে। তাই অনেকে এই সমস্যাকে আলসার ভেবে ভুল করে থাকেন। পরামর্শ হলো—রান্নায় প্রয়োজন অনুযায়ী মসলার ব্যবহার করুন। খাদ্যাভ্যাস
https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM