class="post-template-default single single-post postid-10945 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

খুসখুসে কাশি হলে কী করবেন?

খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তকর ও বিব্রতকর অসুখ। একবার কাশি শুরু হলে যেন থামতেই চায় না। যখন-তখন, যেখানে–সেখানে শুরু হয়ে যেতে পারে কাশি। জ্বর নেই, কফ বের হওয়া নেই, বুকে ঘড় ঘড় নেই—কিন্তু খুক খুক কাশি, যা বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। যার অর্থ, কাশির সঙ্গে কখনো কফ বেরোয় না, কিন্তু একটা অস্বস্তি গলায়-বুকে লেগেই থাকে।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, খুক খুক শুকনো কাশি যখন-তখন অনেককে ভোগায়, বিব্রতও করে। কারও সারা বছর খুসখুসে কাশি লেগে থাকে। সব সময় কাশি সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক বা কাশির ওষুধের দরকার নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই বারবার শুকনো কাশির কারণ ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি নয়, বরং অন্য কিছু। যার কারণটা খুঁজে বের করে চিকিৎসা করা উচিত।

শ্বাসনালি আক্রান্ত বা সংক্রমণ
তীব্র কাশির জন্য সহজেই অনুমানযোগ্য বা সহজ কারণটি হলো, ঠান্ডা বা অন্য কোনো ভাইরাল সংক্রমণের পরিণাম বা ফল। অনেক ঠান্ডার উপসর্গ কিছুদিন পরে চলে যেতে পারে।
কাশি কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাসের জন্যও থাকতে পারে, কারণ ভাইরাসের কারণে শ্বাসনালি ফুলে এবং অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। এই কারণে কাশির স্থায়িত্বকালও বাড়তে পারে, এমনকি ভাইরাস চলে যাওয়ার পরও। ঋতু বদলের সময় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কাশির প্রকোপ বাড়ে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। কাশির সঙ্গে জ্বর, কফ ইত্যাদি থাকলে ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া কি না ভাবতে হবে। দীর্ঘদিনের (যেমন তিন সপ্তাহের বেশি) কাশি, ঘুসঘুসে জ্বর, ওজন হ্রাস, কাশির সঙ্গে রক্ত যক্ষ্মার লক্ষণ হতে পারে।

ধুলাবালু থেকে হাঁপানি, অ্যালার্জি ও খুসখুসে কাশি
সবার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমস্যা না করলেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সবারই করে। ধুলার আকার-আয়তন দৃশ্যমান থেকে অদৃশ্যমান হতে পারে। সাধারণত যেসব ধুলা খালি চোখে দেখা যায় না, সেগুলো সাধারণত বেশি ক্ষতিকর। সাধারণত শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বায়ুতে ধুলার পরিমাণ অন্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। ধুলার ধরন ও আকার-আয়তনের ওপর নির্ভর করে ক্ষতির মাত্রা। আবার ধুলার ঘনত্বের মাত্রা ও কত দিন ধুলায় বসবাস, তার ওপরও নির্ভর করে ক্ষতির মাত্রা। সামান্য পরিমাণ ধুলাও তাৎক্ষণিক সমস্যা করতে পারে। যেমন চোখ জ্বালাপোড়া, খুসখুসে কাশি, হাঁচি, আল্যার্জিক রাইনাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। আবার যাঁদের আগে থেকে ফুসফুসের সমস্যা আছে, তাঁদের অল্পতেই সমস্যা জটিল করে তুলতে পারে।
শ্বাসকষ্ট নয়, কেবল কাশিও হতে পারে হাঁপানি বা অ্যাজমার লক্ষণ। অ্যালার্জি ও অ্যাজমা হচ্ছে কাশির সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাতে কাশি বেড়ে যাওয়া, বুকে শব্দ ও পরিবারে হাঁপানির ইতিহাস থাকলে অ্যাজমা হতে পারে। একে বলে কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা। লক্ষ করুন, ধুলাবালু, ফুলের রেণু, এসির ঠান্ডা বাতাস ইত্যাদি কারণে কাশির প্রকোপ বেড়ে যায় কি না। তাহলে এটি অ্যালার্জিজনিত। কাজের দিন বেড়ে যায়, আবার ছুটির দিনে কমে আসে, এমন হলে বুঝতে হবে আপনার কর্মস্থলের পরিবেশে কোনো সমস্যা রয়েছে। ডাস্ট বা ধুলাবালুতে স্বাস্থ্যঝুঁকি

অ্যাসিডিটি বা অম্লতা
ভারী বা চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর বুকে জ্বালাপোড়া বা টক ঢেকুরের সঙ্গে খুক খুক কাশিও হতে পারে। পাকস্থলীর অম্ল খাদ্যনালিতে উঠে এসে এই কাশির সৃষ্টি করে। অনেক সময় ঠান্ডা–সর্দি লাগা থেকে নাকের পেছন দিক থেকে গলায় নিঃসরণের জন্য ইরিটেসন ও শুষ্ক কাশি হয়।

ক্যানসার
বয়স্ক ও ধূমপায়ী ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের কাশি, জ্বর, পুরোনো কাশির নতুন ধরন, কফের সঙ্গে রক্ত এসব উপসর্গ থাকলে সাবধান। ফুসফুসের ক্যানসার হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

হৃদরোগ
হৃদরোগের কারণেও ক্রনিক কাশি হয়। শরীরে পানি জমা, দুর্বলতা, সামান্য পরিশ্রমেই ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট এগুলো হৃদ্রোগের দিকেই নির্দেশ করে।

পর্যাপ্ত তরল পান না করা
যখন ঠান্ডা অথবা ফ্লু হবে, তখন প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পানি, জুস ও স্যুপ শ্বাসনালি থেকে কফ বা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। কিন্তু ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন চা বা কফি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে, যা বিপরীত কাজ করতে পারে। এ সময় শ্বাসনালিতে আর্দ্রতা যুক্ত করতে স্যালাইন ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

মানসিক চাপ
মানসিক চাপ, বিশেষ করে যখন এটি তীব্রতর হয়, তখন এটি ঠান্ডার স্থায়িত্বকালকে বাড়াতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাশির মোকাবিলা করতে, যখন আপনি অসুস্থ থাকবেন, তখন আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন। নিজের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করলে আপনি হয়তোবা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। প্রশান্তিতে থাকার একটি উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন, রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।

ওষুধ
কোনো কিছুতেই কাশি না সারলে ও পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া গেলে লক্ষ করুন কোনো ওষুধের জন্য এটি হচ্ছে কি না। যেমন উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোনো ওষুধ সেবনের কারণেও কাশি এত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তীব্র শুকনো কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

নিরাময়ের উপায়
 ধূমপান ও বায়ুদূষণ কাশির একটি অন্যতম কারণ। তাই ধূমপান বর্জন করুন।
 ধুলাবালুতে কাশি হলে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঝুল ঝাড়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
 ঠান্ডায় সমস্যা হলে গোসলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। খুব ঠান্ডা পানি খাবেন না।
 লিকার চা, কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস, গরম স্যুপ ইত্যাদি কাশি সারাতে সাহায্য করে।
 গরম পানির ভাপ নিতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগলে, বিশেষ করে ধূমপায়ীরা সতর্ক হোন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!