Friday, April 19
Shadow

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীরা ঝুঁকিতে

ডায়াবেটিসডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি, যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ডায়াবেটিসের রোগীর কমপক্ষে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ শুধু গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ হার মোট ডায়াবেটিসের রোগীর ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে একশ জনের মধ্যে ২০জনই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যারা সবসময় বড় ধরণের ঝুঁকিতে থাকেন। যাদের অর্ধেকের বেশি পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। পাশাপাশি যেসব মায়ের গার্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকে তাদের শিশুদেরও পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি থাকে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে তাদের ওয়েব সাইটে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নারী ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পরিকল্পিত গর্ভধারণের ওপর এবার বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের পর্যাপ্ত অত্যাবশকীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপণা সুনিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে চিকিৎসা উপাদান (ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি) ডায়াবেটিস চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ফলো-আপ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ নীতিমালা ও পরিকল্পনায় নারীদের সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং প্রাক-গর্ভকালীন ও গর্ভকালীন এবং নবজাতকের ও শৈশবকালীন পুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। নারীদের গর্ভকালীন দ্রুত ডায়াবেটিস স্কিনিং, ডায়বেটিস সংক্রান্ত শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিশেষ গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করতে হবে। আইডিএফ প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নারী ও ডায়াবেটিস : স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ আমাদের অধিকার’। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৭১ লাখ শনাক্তকৃত ডায়াবেটিসের রোগী। যাদের অর্ধেই নারী। প্রতি ৫ জন ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারী প্রজনন সময়কালের মধ্যে আছেন। যা প্রায় ৬০ মিলিয়ন। আর যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস আছে তাদের গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রতি ৭টি প্রসবের মধ্যে ১জন মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত। এর অর্ধেকেরই বেশি ৩০ বছরের কম বয়সী প্রসূতিদের ক্ষেত্রে ঘটে। যাদের গর্ভকালীন ডায়বেটিস আছে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে এদের অর্ধেকেরও বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। অধিকাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের বসবাস অনুন্নত দেশগুলোতে।
সংস্থাটি আরও জানায় ২০১৬ সালে বিশ্বব্যপী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯৯ মিলিয়ন। ২০৪০ সালে এই সংখ্যা ৩১৩ মিলিয়নে উন্নীত হবে। অন্যান্য অসংক্রামক রোগের সঙ্গে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে বিবেচনায় না আনার পরামর্শ আইডএফ’র। সংস্থাটির মতে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে গর্ভবতীকে আক্রান্ত করলেও, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে গর্ভস্থ শিশুর। অর্থাৎ সরাসরি রোগটি সংক্রামক না হলেও এর সদূর প্রসারি ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। এক্ষেত্রে এসব শিশুদের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসে (টাইপ-২) হওয়ার আশংকা তার সমসাময়িকদের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম বলেন, যারা ডায়াবেটিসকে নিয়ে সন্তান ধারণ করতে চান, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে গর্ভধারণের আগে থেকেই গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন সময়ের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভ‚ল না হয়ে। কন্যা শিশু ও নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় কায়িক শ্রমের বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু নারী ও কন্যা শিশুরাই ভবিষ্যত জাতি গঠনে মূখ্য ভুিমকা রাখবে তাই তাদের সুস্বাস্থ্য, স্বাভাবিক নিরোগ শারীরিক কাঠামো তৈরিতে উদ্যোগী হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!