‘ঘাতক’-এর মুলুকে ঢুকল মানবসভ্যতা! এই প্রথম। দেড়শো বছর পর যার ধাক্কায় সাড়ে সর্বনাশের ভয়ে আপাতত থরহরিকম্প মানবসভ্যতা, সেই গ্রহাণু (অ্যাস্টারয়েড) ‘বেন্নু’র মুলুকে পৌঁছে গেল নাসার মহাকাশযান ‘ওসিরিস-রেক্স’। তার ‘মাটি’ তুলে আনতে। আগামী শতকের শেষের দিকে ওই ভয়ঙ্কর গ্রহাণুর ধাক্কা থেকে কী ভাবে বাঁচতে পারি, তার উপায় জানতে। কোথায় নামলে বেন্নুর ‘মাটি’ তুলে আনতে সুবিধা হবে, গ্রহাণুটির কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে তারও খোঁজখবর নেবে নাসার মহাকাশযান।
১১৭ বছর, ২১৩৫ সালে পৃথিবীর উপর প্রায় হামলে পড়ার মতো দশা হবে আকারে ৫টি ফুটবল মাঠের সমান গ্রহাণু বেন্নু। চওড়ায় যা ১ হাজার ৬০০ ফুট। বা, ৪৯২ মিটার। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়বে আমাদের খুব কাছাকাছি। অত কাছে এসে পড়ার ফলে পৃথিবীর অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টান অনেকটাই বাঁকিয়েচুরিয়ে দেবে গ্রহাণু বেন্নুর কক্ষপথকে। তারই জেরে আগামী শতাব্দীর শেষাশেষি বেন্নু খুব জোরে ধেয়ে এসে সরাসরি ধাক্কা মারতে পারে পৃথিবীকে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বহু কোটি কোটি বছর আগে যে ভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা, বেন্নুর ধাক্কায় তেমন দশাই হতে পারে আমাদের!
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি রওনা দেওয়ার পর মহাকাশে ২০০ কোটি কিলোমিটার বা ১২০ কোটি মাইল পাড়ি দিয়ে সোমবার গভীর রাতে ‘ঘাতক’ বেন্নুর ‘পাড়া’য় ঢুকে পড়ে নাসার মহাকাশযান। বেন্নুর কক্ষপতে পৌঁছতে আরও কিছুটা সময় লাগবে ওসিরিস-রেক্স-এর। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তা ঢুকে পড়বে বেন্নুর কক্ষপথে। বেন্নুর মতো এত ছোট আকারের কোনও মহাজাগতিক বস্তুর মুলুকে এর আগে যায়নি কোনও মহাকাশযান।
সেই ‘ঘাতক’ গ্রহাণু ‘বেন্নু’। অ্যানিমেশন: নাসা পৃথিবীকে
বেন্নুর যে দিকটি রয়েছে সূর্যমুখী হয়ে, সেই দিকে গ্রহাণুটি থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার বা ১১.৮ মাইল দূরের কক্ষপথে রয়েছে এখন ওসিরিস-রেক্স মহাকাশযান। আগামী দু’বছর ধরে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে করতে নাসার মহাকাশযানটি উড়ে যাবে গ্রহাণুর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং বিষূবরেখা ও তার লাগোয়া এলাকাগুলির উপর দিয়ে। পৃথিবীকে
কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করার সময় ওসিরিস-রেক্স যখন উড়ে যাবে বেন্নুর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং বিষূবরেখার উপর দিয়ে, তখন ‘ঘাতক’ গ্রহাণুর থেকে তার দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র ৭ কিলোমিটার বা ৪ মাইলে। তার পর তার মাটি তুলে আনতে আগামী বছরের মাঝামাঝি বেন্নুতে নামবে ওসিরিস-রেক্স। ঘাতকের মুলুক থেকে সেই মাটি নিয়ে নাসার মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরবে ৫ বছর পর। ২০২৩-এ।
আপাতত, বেন্নুর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করার সময় গ্রহাণুটির ভর মাপবে নাসার মহাকাশযান। কতটা জোরে বেন্নু নিজের চারপাশে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটাও মেপে দেখা হবে। বহু বহু দুরে থাকা বেন্নুর চেহারাটা আদতে কী রকম, সে কতটা ভারী, পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্ভাব্য সংঘর্ষ কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে আমাদের পক্ষে, তা ওই সব তথ্য থেকেই জানা ও বোঝার চেষ্টা হবে। ওই সব তথ্যের দৌলতেই বেন্নুর পিঠ থেকে মাটি তুলে আনতে আগামী বছরের মাঝামাঝি গ্রহাণুটিতে নামবে ওসিরিস-রেক্স।
নাসার লক্ষ্য, আগামী শতাব্দীতে যখন পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়বে বেন্নু, তখন যে ভাবে সম্ভব তার কক্ষপথ কিছুটা ঘুরিয়ে দিতে। বা, তাকে টুকরো করে দিতে। যাতে বেন্নু আগামী শতাব্দীর শেষাশেষি ধেয়ে এসে না ধাক্কা মারতে পারে আমাদের। তারই জন্য আগেভাগে বেন্নুতে পৌঁছে গিয়েছে সভ্য়তা।
নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স ডিভিশনের তদারকি অধিকর্তা লোরকি গ্লেজ জানিয়েছেন, বেন্নুর পাড়ায় ঢুকে পড়লেও এখনও গ্রহাণুর কক্ষপথে ‘পা’ রাখেনি ওসিরিস-রেক্স। কক্ষপথে ঢুকবে ৩১ ডিসেম্বর। তার পর আগামী বছরের মাঝামাঝি ওসিরিস-রেক্স নামবে বেন্নুর পিঠে।
গ্লেজের কথায়, ‘‘সেখান থেকে তুলে আনবে ২.১ আউন্স বা ৬০ গ্রাম ওজনের ‘মাটি’। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ধাতু, কার্বন ও নাইট্রোজেনের যৌগ। এমনকি, বেন্নুর পিঠে তরল জল বা বরফের চাঙর অথবা জৈব অণু পাওয়ারও আশা রয়েছে।’’ পৃথিবীকে পৃথিবীকে