class="post-template-default single single-post postid-26482 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

রহস্যজট : রহস্য গল্প ধাঁধা – অন্তর্ঘাত

 

রহস্য গল্প রহস্যজট : রহস্য গল্প ধাঁধা – অন্তর্ঘাত

লিখেছেন: ধ্রুব নীল

অন্যসব দিনের মতো সূর্যের অতটা তেজ নেই। তবু কপাল বেয়ে এক ফোঁটা ঘাম গিয়ে পড়ল ডিইএম-ফিফটি রাইফেলের হাতলে। ঝটপট দুবার পলক ফেলে চোখের ঘাম ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করল এজেন্ট মেহরীন। এক মিলি সেকেন্ডের জন্যও চোখ সরাতে চায় না ব্রিটিশ স্নাইপার রাইফেলটির ভিউ ফাইন্ডার থেকে। কারণ এক সেকেন্ডই যথেষ্ট ওদের জন্য।
‘এজেন্ট নাইন। এজেন্ট নাইন। টুয়েলভ ও’ক্লক। মুভমেন্ট অন নাইনথ ফ্লোর। ওভার।’
‘ক্লিয়ার। ইটস এয়ার।’
বাতাসকেও বিশ্বাস করতে চাইছে না মেহরীন। মনে হচ্ছে, ওরা বাতাসে মিশে আছে। যেকোনো মুহূর্তে হামলে পড়বে মন্ত্রীর ওপর।
ঠিক ৩টায় ভাষণ দেবেন মন্ত্রী। সঙ্গে আছেন কয়েকজন বিদেশি অতিথি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। সরকারও চায় গজিয়ে ওঠা বিষদাঁত গুঁড়িয়ে দিতে; কিন্তু গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবরে গত দুই রাত কিছুতেই ঘুমাতে পারেনি ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের স্পেশাল উইংয়ের সদস্যরা। যেকোনো মুহূর্তে গুলি ছুড়তে পারে জঙ্গিরা।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সিকিউরিটির মধ্যেও বড় ধরনের গলদ আছে। প্রায় নিশ্চিত গোয়েন্দারা। এর আগে বেশ কয়েকবার খবর পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে; কিন্তু শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বিশ্বাসঘাতককে। তবে ওরা যে বেশ সক্রিয়, তাতে সন্দেহ নেই এনএসআইয়ের স্পেশাল উইংয়ের প্রধান মিস্টার আরমানের। আর তাই আপাতদৃষ্টে খুব সাধারণ অনুষ্ঠান হলেও পাঁচ দুর্ধর্ষ এজেন্টকে পাঠিয়েছেন মন্ত্রী ও অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য।
হলরুমে বিশেষভাবে বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা বসে আছেন। ভেতরে ঢোকার সময় কড়া চেকপোস্ট পেরিয়ে আসতে হয়েছে সবাইকে। জুনিয়র সিকিউরিটি অফিসারও বাদ পড়েনি।
হলরুমের ছাদে এক ঘণ্টা ধরে স্নাইপার নিয়ে শুয়ে আছে এজেন্ট মেহরীন। লবি ও লনে দুই ফুট দূরে দূরে অটোমেটিক হেকলার অ্যান্ড কোচ হাতে দাঁড়িয়ে আছে নিরাপত্তা বাহিনীর গোটা পঞ্চাশেক সদস্য। সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তার ওপাশে পাশাপাশি দুটি ভবন। ভবন দুটি ১২ তলা করে। ডান পাশের ভবনটির ১০ তলার পর্দা নড়তে দেখেছিল মেহরীন। ওটার ছাদে লং রেঞ্জ রাইফেল হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে শার্প শ্যুটার পল্লব। তিন সেকেন্ড সময় দিলে টার্গেটের ঘাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতে পারে। পকেটে আছে নাইন এমএম রিভলবার। একই ভবনের ১১ তলায় শুয়ে স্নাইপার  তাক করে আছে রিয়াজ। ও একটু বেশি অস্থির। তবে ট্রিগার টানার সময় আশ্চর্য এক স্থিরতা ভর করে। আর প্রিয় অস্ত্র সিক্স শ্যুটার ওয়ালথার পিপিকে সঙ্গে থাকলে এমনিতেই নিজেকে হিরো ভাবতে থাকে ও।
হলরুমের উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৫০ মিটার দূরে আরেকটি উঁচু ভবন। তার ঠিক পরেই নিরাপত্তা দেয়াল। ওটার ছাদে আছে সদ্য নিয়োগ পাওয়া তুষার। বয়সে তরুণ। তার হাতেও স্নাইপার। ব্যাকআপ রিভলবার রাখেনি ও।
মেহরীনের সঙ্গে একটু পর পর তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে হেড অফিসে।
‘এজেন্ট এমআর, কনফারমেশন।’
‘এনি সাসপেক্ট?’
‘নো, বি কেয়ারফুল।’
‘ওকে বস।’
‘নেক্সট টেন মিনিট। ওভার।’
‘ওভার।’
তার মানে আর ১০ মিনিট। এর মধ্যেই হামলা হতে পারে। আশঙ্কা প্রায় ১০০ ভাগ। মেহরীন ঠায় তাকিয়ে আছে সেই পর্দা দুলে ওঠা জানালার দিকে। মনে হচ্ছে, অশরীরী একটা কিছু আছে ওই জানালার আড়ালে।
‘এজেন্ট নাইন। পুব দিকের ভবনে চোখ রাখো।’
পাঁচতলার নিচে থাকলে গুলি করতে সমস্যা হবে  শত্রুদের। অবশ্য ভবনের ভেতর শত্রু থাকার কোনো আশঙ্কা নেই। সব সার্চ করা হয়েছে। ওগুলো সদ্য নির্মিত সরকারি ভবন। নিরাপত্তার জন্য দুদিন আগেই খালি করা হয়েছে। তবে কয়েকটি রুমে সিকিউরিটির লোকজন আছে। কারো হাতেই লং রেঞ্জ অস্ত্র নেই।
পর্দাটা দ্বিতীয়বার দুলে উঠতেই পাথর হয়ে গেল মেহরীন। সে ছাড়া অন্যরা দেখতে পাচ্ছে না।
‘ইয়েস এমআর, ভেতরে ফ্যান চলতে পারে।’
এজেন্ট নাইনের কথায় কান দিল না মেহরীন। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অন্য কথা বলছে। জানালা থেকে দুই ফুট পেছনে দাঁড়িয়ে রকেট লঞ্চার ছুড়লে সে কিছুই করতে পারবে না। অসহায় বোধ করছে মেহরীন। হলরুমে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভাষণ দিলেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। গোয়েন্দাদের কথামতো বেশিক্ষণ দেরি করতে রাজি নয় কেউই।
মেহরীনের চোখ সরছে না জানালা থেকে। এমন সময় একটা ছায়া দেখতে পেল। চোখে ঘাম জমে ছিল বলে দেখার ভুলও হতে পারে। আবার হতে পারে দেয়ালের মতো করে পোশাকে রং মেখে বসে আছে কেউ। মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল তার। আশঙ্কাটা মনে হতেই স্পষ্ট অবয়বটা দেখতে পেল। ক্যামোফ্লেজ! ধীরে ধীরে ট্রিগারে আঙুল বসাল; কিন্তু তার আগেই কান ফাটানো আওয়াজে হাত কেঁপে উঠল উত্তর-পশ্চিমের ভবনটা। হাত কেঁপে ওঠায় গুলিটা জায়গামতো পৌঁছাল না।

কানের কাছে হাজারটা প্রশ্ন। একটারও উত্তর দেওয়ার সময় নেই। সব কটি রাইফেল তাকিয়ে আছে উত্তর-পশ্চিমের ভবনটার দিকে। নিচতলায় ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। চিন্তার সুতো কেটে দিয়ে সামনের বাঁ দিকে থাকা দ্বিতীয় ভবনের পাঁচতলা থেকে স্পষ্ট দেখতে পেল একটি চেহারা। আলগোছে ছুড়ে দিল দুটি গ্রেনেড। সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠল পুরো লন। এদিক-সেদিক ছিটকে গেল নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকে। মেহরীন রাইফেল তাক করল জানালা বরাবর। গুলি ছুড়ল। কারো গায়ে লাগল বলে মনে হলো না।
থমথমে নীরবতা। দড়ি বেয়ে ২০ সেকেন্ডে ছাদ থেকে নিচে নেমে এল মেহরীন। হাতে রিভলবার। পল­ব কি টের পেয়েছে? রিয়াজকে দেখল ওয়ালথার হাতে দৌড়ে আসছে। ডান হাত বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে তার। রাইফেল হাতে এজেন্ট নাইনকে দেখল পাঁচতলা থেকে উঁকি দিতে। তার মানে, বাঁ দিকের ভবনে কেউ নেই। তুষার বেরিয়ে এল তার ভবন থেকে।
রাত ১০টা। স্পেশাল উইংয়ের প্রধান মিস্টার আরমানের রুমে সবাইকে আলাদা করে জেরা করা হয়েছে। মেহরীন জানে, তাদের মধ্যে কেউ একজন আছে, যার সহায়তায় তিনটি ভবনে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়ে অবলীলায় গুলি আর বোমা ছুড়তে পেরেছে। তবে ভিআইপিদের সবাই অক্ষত আছেন বলে রক্ষে। আর মেহরীন যে বিশ্বাসঘাতক নয়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত মিস্টার আরমান। গত দুই সপ্তাহ বিশেষ মিশনের কারণে সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে ট্রান্সমিটার ছিল। কোথায় ছিল এবং কী কী বলেছে, সব তথ্য আছে হেড অফিসে।
মোট সাত জঙ্গির লাশ পাওয়া গেছে। উত্তরের ভবনে দুজনকে সামনাসামনি গুলি করেছে তুষার। তার ভাষ্য, ‘সামনাসামনি দুটি গুলি করতেই দেখি বুলেট শেষ। প্রায় মরতে বসেছিলাম। কিন্তু দেয়ালের আড়ালে ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে যাই। রিলোড করে পর পর ছয়-সাতটি গুলি করি। সম্ভবত তার আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতেই মারা যায় ওরা।’
রিয়াজের সঙ্গে সরাসরি বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে তিন জঙ্গির। ও নিজে ডান হাতে গুলি খেয়েছে। তার বক্তব্য, ‘ভারী রাইফেল ফেলে হালকা সিক্স শ্যুটার তুলে নিই। এরপর দুই পা নামতেই পায়ের শব্দ পাই। পর পর দুটি গুলি করি। দুজনই মারা যায়। নেমে আসতেই হাতে গুলি খাই। একজনকে দেখলাম দরজার আড়ালে লুকাতে। দুটি গুলি ছুড়তেই পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। এরপর তিনটি গুলি করি। একজন অস্ত্র তুলে তাক করতেই বুক বরাবর আরো একটি ছুড়ে দিই।’
পল্লবের ভাষ্য, ‘১০ তলায় নামতেই দেখি রিয়াজ গুলি খেয়েছে। ওকে ধরে ধরে কিছুটা নামিয়ে আবার ওপরে উঠি। আর কাউকে খুঁজে না পেয়ে নিচে নেমে আসি। নামার সময় পাঁচতলায় নড়াচড়া টের পাই। সাত কিংবা আটতলায় পায়ের আওয়াজ পেয়ে আবার ছুটে যাই ওপরে। ততক্ষণে সিকিউরিটির অন্যরা চলে আসে। বাকি জঙ্গিরা সম্ভবত সিকিউরিটির ছদ্মবেশে পালিয়ে যায়।’
এজেন্ট নাইন বলল, ‘আমিও রাইফেল ফেলে পয়েন্ট ফর্টিফাইভ ক্যালিবার তুলে নিই। বাঁ দিকের ভবনের পাঁচতলায় গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল। নামতেই দুজনকে পেয়ে যাই। ওদের রাইফেলের ম্যাগাজিন খালি হয়ে গিয়েছিল। একেকজনকে চারটি বুলেট উপহার দিয়ে এসেছি।’
ভাবছেন মিস্টার আরমান। চারজনের মধ্যে কাউকেই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। গোপন শত্রু বেশ চালাক। জঙ্গিদের দিয়ে কাজ সারার পর তাদের আর বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি। তবে এ ক্ষেত্রে গোপন শত্রু হতে পারে এক বা একাধিক। একজনকে ধরতে পারলেই বেরিয়ে আসবে পুরো নেটওয়ার্ক। আপাতত তাকে ধরে ফেলেছেন আরমান সাহেব।
পাঠক, বলুন, বিশ্বাসঘাতক কে? কী করে নিশ্চিত হলেন মিস্টার আরমান?

 

উত্তর দেখুন এখানে

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!