একটু নিরিবিলিতে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে অনেকেই জঙ্গল পছন্দ করেন। প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই জঙ্গলটিকেও অনেকেই পছন্দ করেন। তবে একটু অন্য কারণে। এই জঙ্গলটি প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০০ জন তাঁদের আত্মহত্যার জায়গা হিসেবে বেছে নেন। কোথায় এই জঙ্গল আর কেন এত মানুষ এখানে এসে আত্মহত্যা করেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক…
অদ্ভুত রহস্যে ঘেরা এই জঙ্গলটির নাম য়োকিগাহারা। জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই জঙ্গলটি। ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেছেন। ২০০২ সালে এই জঙ্গলে মোট ৭৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে এখান থেকে পাওয়া মৃতদেহের সংখ্যা বেড়ে হয় একশো। ২০০৪ সালে এই সংখ্যাটাই বেড়ে ১০৮-এ পৌঁছায়। ২০০৪ সালের পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন য়োকিগাহারা জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়।
শোনা যায়, ১৯৬০ সালে সেইকো মাটসুমোটো নামের এক জাপানি লেখকের দুটি উপন্যাস ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ ও ‘লিট’ প্রকাশের পর থেকেই এই অঞ্চলে এসে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যায়। এর কারণ হিসাবে স্থানীয়দের ধারণা, এই উপন্যাসের দু’টি চরিত্র পরিবার ও সন্তানের শুভ কামনায় এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল। মনে করা হয়, সেইকো মাটসুমোটোর জনপ্রিয় উপন্যাসের এই দু’টি চরিত্র স্থানীয় মানুষকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তাঁরাও পরিবারের মঙ্গল কামনায় এ খানে এসে আত্মহত্যা করেন।
স্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে, উনবিংশ শতাব্দীতে এই এলাকায় ‘উবাসুতে’ নামে এক বিচিত্র রীতি প্রচলিত ছিল। এই রীতি অনুযায়ী মৃত্যু পথযাত্রী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এই জঙ্গলে এসে ছেড়ে চলে যেতেন তাঁদের পরিবারের পরিজনরা। এর পর এখানেই মৃত্যু হত ওই সমস্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। স্থানীয়দের মধ্যে এখনও অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জঙ্গলে মৃত ব্যক্তির আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। এখানে কোনও জীবিত ব্যক্তি এলে তাঁকে আত্মহত্যার প্রভাবিত করে এই আত্মারা।
য়োকিগাহারা জঙ্গলে এত মানুষের আত্মহত্যার কারণ নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে, প্রচলিত রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনীও। আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার নানা পরামর্শ বা সতর্কবার্তা লেখা সাইন বোর্ড ঝোলানো রয়েছে এই জঙ্গলের আনাচে কানাচে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও এই জঙ্গল থেকে দেহ উদ্ধার হয়ে চলেছে।