চলে গেল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিবস পালন করা হয়। ‘সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ সুস্বাস্থ্য বলতে আমরা বুঝি নিরোগ ও সতেজ দেহ। এটি পার্থিব উন্নতির জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি কল্যাণময় পরকালের জন্যও। আর সুস্থ থাকার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো রোগমুক্ত থাকা। মানুষের রোগ সৃষ্টির ব্যাপারে ইসলাম ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা কী, সে সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। রোগের ব্যাপারে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা হলো, পরিবেশগত কারণেই মানুষের রোগ হয়। মানুষের আশপাশের পরিবেশ যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং শরীরে যখন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত চাপ পড়ে, তখনই মানুষ নানামুখী সমস্যায় পড়ে; অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত হয়।
স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শারীরিক স্বাস্থ্যের থেকে মানসিক স্বাস্থ্য আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নেয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে, সেটি হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। রসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে সুস্থতা দেইনি?’ (তিরমিজি)
তাই ইসলামে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে রয়েছে বিশদ আলোচনা। সবল ও সুস্থতা ইসলামে কাম্য। আল্লাহর ইবাদত সুন্দরভাবে পালন করার জন্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতা প্রয়োজন। তাই সুস্থ সব মুমিন আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন অধিক প্রিয়।’ (মুসলিম)।
চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে চিকিৎসাশাস্ত্রের কথা উল্লেখ করার অর্থ হলো, মানুষের কল্যাণে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বকে তুলে ধরা। কোরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক দিকগুলোর একটি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান, যা বিশ্বের গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা যদি মনোযোগের সঙ্গে কোরআনের আয়াতগুলো লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাই, আসমানি এ গ্রন্থে মানুষের দৈহিক ও মানসিক রোগ নিরাময়ের বিষয়টি একইসঙ্গে রয়েছে। সুরা রাদের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-জেনে রাখুন, কেবল আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।
মানবজীবনের অন্যতম নেয়ামত স্বাস্থ্য। এটি এমন এক সম্পদ, যা আমাদের ব্যবহারিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এমনকি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যও জরুরি। ইসলামের বিধি-বিধানগুলো সুন্দরভাবে পালন করার জন্যও স্বাস্থ্য ও সুস্থতা প্রয়োজন। কারণ শারীরিক শক্তি ও মানসিক মনোবল ছাড়া ইবাদতেও মন বসে না। হাদিসে আছে, ‘দুটি নেয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ অসতর্ক ও প্রতারিত। (বুখারি শরিফ ৫/২৩৫৭)
তাই কেউ যদি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলেন, তাহলে তিনি সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন। এতে তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব হতে পারবেন। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত মুসলিম হিসেবে ইসলাম প্রদত্ত স্বাস্থ্য নীতি মেনে সুন্দর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ ও জ্ঞানদান করুন। আমিন।