হৃদরোগ হচ্ছে নিরব ঘাতক এবং যে কেউ এতে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাপনে অনিয়ম এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদরোগের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, ‘অবরুদ্ধ ধমনী প্রায়ক্ষেত্রে এ ধরনের হৃদরোগের দিকে চালিত করে যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর সাতটি মৃত্যুর মধ্যে একটি মৃত্যুর জন্য দায়ী।’
হৃদপিণ্ডের প্রধান প্রধান রক্তনালীতে প্লেক তৈরি হয়, যার ফলে মাংসপেশীর দিকে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
নিউ ইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাইয়ে অবস্থিত ইকান স্কুল অব মেডিসিনের কার্ডিওভাস্কুলার সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক সন্ধ্যা বালারাম বলেন, ‘এটি হচ্ছে হৃদরোগের এক নম্বর বা প্রধান ধরন যা আমরা তদারক করি।’
বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কারণ যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস অথবা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধমনী বন্ধ হয়ে যেতে থাকে এবং অনেক রোগী উল্লেখযোগ্য ব্লকেজ না হওয়া পর্যন্ত কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করে না। উপসর্গের মধ্যে আছে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা অথবা এমনকি হার্ট অ্যাটাক।
ভালভ ডিজিজ
হৃদপিণ্ড চারটি প্রধান ভালভ নিয়ে গঠিত যা দরজার মতো খুলে ও বন্ধ হয় এবং রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
ডা. বালারাম বলেন, ‘এগুলো সাধারণত টিস্যু পেপারের মতো নরম, কিন্তু তারা যখন ক্যালসিফায়েড (জমাটবদ্ধ ক্যালসিয়ামের শক্ত স্তর) হয়, তখন তারা শক্ত বা অনমনীয় ও সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায়।’ এছাড়া ভালভ সঠিকভাবে বন্ধ নাও হতে পারে, যে কারণে হৃদপিণ্ডে রক্ত লিক ব্যাক হতে পারে অথবা উল্টোদিকে প্রবাহিত হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, ‘প্রতিবছর ৭৩৫,০০০ আমেরিকান হার্ট অ্যাটাকে ভুগে।’
তখন হার্ট অ্যাটাক হয় যখন হৃদপিণ্ডের দিকে রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়- সাধারণত রক্ত জমাটবদ্ধতার কারণে তা হয়ে থাকে যার ফলে মাংসপেশীর মৃত্যুর সূচনা হয়। হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হচ্ছে সোল্ডার ব্লেড বা কাঁধের হাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যথা, গলা বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি, বাম বাহুতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অবসাদ, ঠান্ডা বা সেঁতসেঁতে ত্বক, ঘাম ঝরা অথবা জীবনহুমকিমূলক কিছু ঘটতে যাচ্ছে এমন অনুভূতি।
অ্যারিথমিয়া
সাধারণত হৃদপিণ্ডের নিজস্ব নিয়মিত স্পন্দন থাকে। কিন্তু এটির স্পন্দন খুব ধীরে হলে (প্রতিমিনিটে স্পন্দন ৬০ এর কম) অথবা অতি দ্রুত হলে (প্রতিমিনিটে স্পন্দন ১০০ এর বেশি) কিংবা অনিয়মিত হলে তা অ্যারিথমিয়ার সিগন্যাল হতে পারে। এটি হৃদপিণ্ডের রক্ত পাম্পিংয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং ওষুধ বা পেসমেকার দিয়ে এর চিকিৎসা করা যায়।
পেরিকার্ডিয়াল ডিজিজ
পুরু টিস্যুর পর্দা দ্বারা হৃদপিণ্ড বেষ্টিত থাকে। এটি ইনফেকশন, হার্ট সার্জারি, হার্ট অ্যাটাক অথবা কোনো অটোইমিউন ডিজিজের কারণে উদ্দীপ্ত হলে বুক ব্যথা, নিম্নমাত্রার জ্বর অথবা বর্ধিত হৃদস্পন্দনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি অ্যাজেন্ট, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট