কিশোরী মেয়েটি প্রতিদিন স্কুলে যায়। কিন্তু একদিন তার খুব মন খারাপ। তার মন খারাপের কারণ জানতে চায় তার বাবা। কিন্তু মেয়েটি মুখ ফুটে কিছুই বলে না। সে আগের মতো স্কুলেও যেতে চায় না। আবার গেলেও পথে ভয়ে ভয়ে থাকে।
পথে মেয়েটিকে এক বখাটে উত্যক্ত করতে শুরু করার পর থেকেই এমনটা হয়।
ছেলেটি মেয়েটিকে এও বলে, বাসার কাউকে কিছু জানালে তোর অনেক বড় ক্ষতি করবো। এটা শুনে মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়। সে বাসার কাউকে কিছু বলতে পারে না।
একদিন উত্যাক্ত করার পর মেয়েটি কাদতে কাদতে বাসায় আসে।
বাবা জানতে চান, কী হয়েছে তোর। মা বল। আমাকে খুলে বল।
মেয়েটির মনে পড়ে ওই বখাটের হুমকির কথা—কাউকে কিচ্ছু বলবি না!
মেয়েটি স্কুলে যাবে না ঠিক করে। সে তার ব্যাগ গুছিয়ে টেবিলেই রেখে দেয়।
বাবা এসে বলে, তুই আমাকে সব খুলে বল। স্কুলে কোনো সমস্যা? কেউ কিছু বলে?
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলে, না বাবা এমন কিছু না।
মেয়েটির বাবা আবার জানতে চান, তাহলে কি পড়াশোনা ভালো লাগে না তোর?
মেয়েটি বলে, না বাবা আমি পড়তে চাই। পড়াশোনা আমার ভালো লাগে।
এতে মেয়েটির বাবা আরও চিন্তায় পড়ে যান।
তিনি তার মেয়ের এক বান্ধবীকে ফোন করেন। সেই বান্ধবী মেয়েটির বাবাকে সব খুলে বলে।
বাবা এসে মেয়েকে এবার বকা দেন। তিনি বলতে থাকেন, আমাকে কেন বললি না। আমি দেখে নেবো কোন ছেলের এত বড় সাহস। এলাকার কাশেম ভাই আমাকে খুব স্নেহ করেন। কাশেম ভাইকে বললে ওই ছেলের বারোটা বাজিয়ে দেবে। কাশেম ভাইয়ের কাছে বিচার দিলে ওই ছেলেকে তিনি মেরেই ফেলবেন।
এসব বলার পর মেয়েটির মুখে হাসি ফিরে আসে। সে বলে, তাহলে তো বাবা খুব ভালো হয়। আমি আবার রোজ স্কুলে যেতে পারবো।
মেয়েটির বাবা ঝড়ের বেগে বের হয়ে যান।
কাশেম আলি এলাকার একজন গণমান্য ব্যক্তি। তাকে সবাই সমীহ করে চলে। মেয়েটির বাবা কাশেম আলির কাছে এসে বলেন, কাশেম ভাই, একটা ছেলে আমার মেয়েকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে রোজ ইভ টিজিং করে। আপনি এর একটা বিহীত করবেন।
কাশেম ভাই খুব রাগ করেন। তিনি মেয়েটির বাবাকে অভয় দিয়ে বলেন, আমি বেঁচে থাকতে তোমার মেয়ের দিকে কেউ চোখ তুলেও তাকাতে পারবে না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ওই হারামজাদার পিঠের চামড়া আমি তুলে ফেলবো।
এরপর তারা দুজন ঠিক করেন, পরদিন মেয়েটি যখন স্কুলে যাবে। তখন কাশেম আলি মেয়েটির পেছন পেছন যাবে। আড়াল থেকে দেখবেন কে তাকে উত্যক্ত করে।
পরদিন সকাল। মেয়েটি স্কুলব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে বের হলো। এদিকে আড়াল থেকে তার ওপর নজর রাখছেন কাশেম আলি।
একপর্যায়ে মেয়েটির পথ আগলে দাঁড়ায় সেই বখাটে। মেয়েটি সে উত্যক্ত করতে থাকে। মেয়েটি পেছনে ফিরে দেখে। তারমুখে হাসি। ছেলেটি বিভ্রান্ত হয়। এমন সময় তার সামনে এসে দাঁড়ায় কাশেম আলি। কাশেম আলি খুব অবাক হন। তিনি বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েন। ছেলেটিও মাথা নিচু করে ফেলল।
কাশেম আলি মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছেন। তার সামনে মেয়েটির বাবা ও সেই বখাটে। কাশেম আলি মুখ তুলে তাকাতেই ছেলেটা এসে কাশেম আলির পা জড়িয়ে ধরলো। বলল, বাবা আমি আর জীবনেও এ কাজ করবো না। বাবা। আমাকে মাফ করে দাও।
কাশেম আলি ছেলেকে তুলে একপাশে সরিয়ে দিলেন। এরপর তিনি ধীরপায়ে এগিয়ে গেলেন মেয়েটির বাবার সামনে। মেয়েটির বাবা কাচুমাচু করছেন। কারণ তিনি কী করবেন বা বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। কারণ কাশেম আলি এলাকার ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আর সেই বখাটে ছেলেটা হলো তারই সন্তান। এমন সময় কাশেম আলি যা করলেন তাতে চমকে গেলো সবাই। তিনি আচমকা জড়িয়ে ধরলেন মেয়েটির বাবার পা। বললেন, আমাকে ক্ষমা করো ভাই। ছেলের এ কাজে আমি খুবই লজ্জিত। মেয়েটির বাবা কাশেম আলিকে ধরে বললেন, আমার মনে হয় আপনার ছেলের উচিত শিক্ষা হয়ে গেছে। এরপর থেকে সে আর এ কাজ করবে না। তাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।