class="post-template-default single single-post postid-21051 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলাচলের বিধান

আমিন মুনশি : নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ এবং তা অত্যন্ত বড় গুনাহের কাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানতে পারতো এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে ৪০ বছর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাও নিজের জন্য ভালো মনে করতো।’ বর্ণনাকারী আবুন নাযর বলেন, আমার জানা নেই, হাদিসে ৪০ দ্বারা কী উদ্দেশ্য, ৪০ দিন, ৪০ মাস, নাকি ৪০ বছর! (সহীহ বুখারী, হাদিস : ৫১০; সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৫০৭)

এ ছাড়াও অন্যান্য হাদিসে নবীজি নামাজ শুরু করার আগে ‘সুতরা’ সামনে রেখে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা জেনে নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে নামাজির কয়েক অবস্থা হতে পারে-

১) মসজিদ যদি বড় হয় অর্থাৎ মসজিদের প্রশস্ততা চল্লিশ হাতের বেশি হয় তাহলে উক্ত মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। পক্ষান্তরে চল্লিশ হাতের চেয়ে ছোট মসজিদ হয়, সেক্ষেত্রে নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে ‘সুতরা (প্রতিবন্ধক) ব্যতীত’ অতিক্রম করা জায়েজ হবে না। সুতরা সামনে রেখেই প্রয়োজনে অতিক্রম করতে পারবে। (ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৪; ফতোয়ায়ে শামী ১/৬৩৭; আল-বাহরুর রায়েক ২/১৭)

২) তবে নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি অন্যদের যাতায়াতের সম্ভাবনা থাকে তাহলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই সামনে ‘সুতরা’ রেখে নামাজ আরম্ভ করা সুন্নত। আর সুতরার, সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো, “এক হাত হওয়া।” এক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.)কে সুতরার পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, হাওদার লাঠির মতো। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫০০) এর ব্যাখ্যায় হজরত আতা (রা.) বলেন, হাওদার লাঠির দৈর্ঘ্য হলো, “এক হাত বা তার চেয়ে একটু বেশি।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৬৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৮)

৩) কেউ যদি নামাজি ব্যক্তির সামনে উপবিষ্ট থাকে তাহলে তার জন্য সেখান থেকে চলে যাওয়া বা অন্যত্র সরে যাওয়ার সুযোগ আছে। কেননা হাদিসে অতিক্রম করাকে নিষেধ করা হয়েছে। আর সামনে থেকে চলে যাওয়া অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত হয় না। অবশ্য নামাজরত মুসল্লির সামনে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিনা প্রয়োজনে উঠে আসা অনুচিত। এতে তার নামাযে খুশুখুযু বিনষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য মুসল্লিরা তার সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। তাই নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত যথাস্থানে বসে থাকা উত্তম।

৪) কখনো নামাজি ব্যক্তির সামনে জুতার বক্স থাকে। তাই হাত বাড়িয়ে নামাজি ব্যক্তির সামনের জুতার বক্স থেকে জুতা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে খেয়াল রাখা দরকার, যেন তার নামাজের কোন ব্যাঘাত না ঘটে।

৫) মাঝে মাঝে মসজিদে কিছু মুসল্লিকে দেখা যায়, তারা দ্রুত বের হওয়ার জন্য নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে রুমাল বা হাতে থাকা জায়নামাজ সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে হাঁটতে থাকে। এই ধরনের ‘চলমান সুতরা’ নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার জন্য সুতরা হিসেবে যথেষ্ট নয়। তাই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; শরহুল মুনিয়াহ পৃ. ৩৬৭)

৬) কেউ যদি অজ্ঞতাবশত নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে তাকে হাত দিয়ে কিংবা একটু উচ্চস্বরে তাসবিহ পড়ে সতর্ক করাও জায়েজ আছে। তবে নামাজি ব্যক্তির জন্য এমন না করাই উত্তম। তবে হ্যাঁ, তার সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই সুতরা সামনে রাখা সুন্নত। (আলবাহরুর রায়েক ২/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯)

৭) অনেক সময় দেখা যায়, কোনো মুসল্লি নামাজরত ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করে এরপর আরেক জনের সামনে সুতরা রাখে। এইভাবে সে একাধিক ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে মসজিদ থেকে বের হয়। এইভাবে অতিক্রম করা নাজায়েজ নয়। তবে এতে নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য এরূপভাবে অতিক্রম করলেও অতিক্রমকারীর গুনাহ হবে না। তবে নামাজি ব্যক্তির উচিত মানুষ যাতায়াতের স্থানে সুতরা সামনে রেখেই নামাজে দাঁড়ানো। (ফতওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৩১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!