ঈমান ঠিক না করে জীবনভর নেক আমল করলেও আখেরাতে কোনো লাভ হবে না। জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তাকদিরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার প্রতি।’ (বোখারি : ৫০)
উল্লিখিত হাদিসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’ এর ভিত্তি। এগুলোর বিস্তারিত হলো-
১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহর ওপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তাঁর কোনো কিছুর অভাব নেই। তিনিই সবার সব অভাব পূরণকারী। তিনি কারও বাবা নন, ছেলেও নন। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। একমাত্র তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা, বিধানদাতা। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর কোনো মৃত্যু নেই। তিনি ছাড়া অন্য সবকিছুই ক্ষয়শীল ও ধ্বংসশীল, কিন্তু তাঁর ক্ষয়ও নেই, ধ্বংসও নেই। সবকিছুর ওপরই তাঁর ক্ষমতা চলে। কিন্তু তাঁর ওপর কারও ক্ষমতা চলে না।
২. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস : ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপনের অর্থ হলো, ফেরেশতাদের অস্তিত্ব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বরং ফেরেশতারা তো আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তারা আগ বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।’ (সূরা আম্বিয়া : ২৬-২৭)
৩. কিতাবগুলোর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ তায়ালা মানুষের পথপ্রদর্শনের জন্য নবী-রাসুলদের ওপর বিভিন্ন আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। কিতাবগুলোর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপনের জন্য জরুরি হলো, এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে পোষণ করা যে, সব আসমানি কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আল্লাহ যে কিতাব নাজিল করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।’ (সূরা শুরা : ১৫)
৪. রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অনেক নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সব রাসুল সত্যবাদী, সত্যায়নকারী, পুণ্যবান, সঠিক পথের দিশারি, তাকওয়াবান ও বিশ্বস্ত। আল্লাহ বলেন, রাসুলদের দায়িত্ব তো শুধু সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া। (সূরা নাহল : ৩৫)
৫. পরকালে বিশ্বাস : পরকাল বা শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাসও ঈমানের মৌলিক স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের এরপর মৃত্যুবরণ করতে হবে। তারপর নিশ্চয়ই তোমাদের কেয়ামতের দিন আবার উঠানো হবে। (সূরা মোমিনুন : ১৫-১৬)
৬. তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস : তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তকদির হচ্ছে আল্লাহর বিশ্বজনীন নিয়মনীতি। এ নিয়মনীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার অধীনে বিশ্বজগৎ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।