আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার রাসুলগণকে যা করার আদেশ করেছেন ঈমানদারগণকেও সে কাজ করার আদেশ করেছেন। – কালের কন্ঠ
অতঃপর আল্লাহ বলেন, হে রাসুলগণ!তোমরা পবিত্র বস্তু(হালাল ) হতে ভক্ষণ করো, এবং নেক কাজ (আমলে সালিহ) করো।
(আল্লাহ তাআলা) আরো বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমাদেরকে আমি যেসব পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে দিয়েছি, তা থেকে আহার করো।
তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দূরদূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে তার চুলগুলো এলোমেলো ও ধূলি-ধূসরিত রুক্ষ হয়ে পড়েছে। সে আসমানের দিকে হাত উত্তোলন করে বলছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্য হারাম। এ অবস্থায় তিনি কেমন করে তার দোয়া কবুল করতে পারেন?(সহিহ মুসলিম হাদিস :২৩৯৩)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে মানুষের ইবাদত ও দোয়া কবুল হওয়ার জন্য পবিত্র দেহ ও আত্মার কেন প্রয়োজন, সেদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র সত্তার অধিকারী, তাই তিনি হালাল বস্তু ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। পবিত্র কোরআনেও এদিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে,তাঁরই দিকে ঊর্ধ্বারোহণ করে (দরবারে গৃহীত হয়) পবিত্র বাণীসমূহ ও নেক আমল তাকে উন্নীত করে। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ১০)
আমল কিভাবে পবিত্র হয়?
যে আমল ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার জন্য এবং তা হালাল খেয়ে ও হারাম খাওয়া ছেড়ে দিয়ে করা হয় তা পবিত্র। হালাল খাবার, বৈধ উপার্জন ও পবিত্র জীবন মুমিনের জন্য অপরিহার্য। এ ছাড়া তার জীবনের কোনো আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ জন্য পবিত্র কোরআনে বারবার হালাল আহার, অবৈধ উপার্জন ত্যাগ ও জীবনে পূত-পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে প্রদান করেছি তা হতে আহার করো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৫৭)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে দিয়েছি, তা হতে আহার করো এবং তাতে সীমা লঙ্ঘন কোরো না। (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৮১)
হারাম খাওয়া দোয়া কবুলের অন্তরায় –
আল্লাহ দোয়া কবুল করেন না—এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকের। আলোচ্য হাদিসে এসব অভিযোগের উত্তর রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) জানিয়েছেন, হারাম খাবার, পানীয় ও বস্ত্র অর্থাৎ হারাম উপার্জনে যাপিত জীবন দোয়া কবুলের অন্তরায়। যে ব্যক্তি হারাম পরিহার করতে পারে না, তার দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। বিপরীতে যার জীবিকা পবিত্র, তার দোয়া কবুল হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ (রা.)-কে বলেন, হে সাদ! তোমার খাদ্য পবিত্র করো, তাহলে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত (যার দোয়া কবুল হয়) হতে পারবে। (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৬৪৯৫)
যাদের দোয়া কবুল হয়
হাদিসে এসেছে, তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। তারা হলো, অত্যাচার ও অবিচারের শিকার ব্যক্তি, মুসাফির ও সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের দোয়া। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯০৫) এ ছাড়া হাদিসে অসুস্থ ব্যক্তি, এক মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে অপর মুসলিম ভাইয়ের দোয়াসহ একাধিক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় বলে জানানো হয়েছে।
তবে দোয়া কবুলের জন্য কিছু আদব রয়েছে। যা রক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন—বিনীত হয়ে দোয়া করা, পূর্ণ মনোযোগ থাকা, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আশা ও আস্থা রাখা, কান্না করা, হাত তুলে দোয়া করা, দোয়া কবুলের সময়গুলো অনুসরণ করা ইত্যাদি।