শখে বাজরিগার পোষেন। তবে কোনটি ছেলে আর কোনটি মেয়ে পাখি তা বুঝতে পারেন না। বিক্রেতার কথায় বিশ্বাস করে কিনলেন। পরে দেখা গেল পাখি ডিম দেয়া না। অথচ আপানার লক্ষ্য এই পাখির বাচ্চা বিক্রি করে বাড়তি আয়। বাজরিগার কেনার আগে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। সহজে স্ত্রী, পুরুষ, বয়স্ক ও বাচ্চা বাজরিগার চেনার উপায় জানাচ্ছেন শৌখিন পাখি পালক শহীদুল ইসলাম।
বাজরিগারকে বলা হয় কেইজ বার্ড বা খাঁচার পাখি। বন্যপাখি পালন করা বা ধরা আইনত অপরাধ। খাঁচায় পালন করা পাখি, জন্ম থেকে খাঁচাতেই বসবাস করে। এসব পাখি বাইরে ছেড়ে দিলে আশ্রয়স্থল খুঁজে তো পাবেই না, উল্টো তারা কাকের খাবার হয়ে যাবে নিশ্চিত। এই রকমই খাঁচার পাখি হচ্ছে বাজরিগার।
এই পাখি পালন করে শখ মেটাচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি আয়ও করছেন। শখের পাখি পালন করতে গিয়ে আবার বেশ সমস্যাও হতে পারে। প্রথম সমস্যা হচ্ছে পাখির বয়স নির্ণয়।
১ জোড়া বাজরিগার কিনতে সাধারণত খরচ পড়ে ৮শ’ টাকা। পাখিব্যবসায়ী বিক্রির স্বার্থে অনেক সময় বলেন, “আর কদিন পরেই এই জোড়া ডিম দেবে।”
কিনে আনার পর ৬ মাস পেরিয়ে যায় অথচ পাখি আর ডিম পাড়ে না।
কমবয়সী জোড়া পাখির দাম সাধারণত ৪শ’ টাকা। অথচ পূর্ণবয়স্ক পাখি ডিম পাড়ার কথা বলে ৮শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঠকছেন ক্রেতা।
শুধু তাই নয় অনেক সময় জোড়া মেলাতেও ভুল হয়। জোড়া পাখির মধ্যে দুটো পাখিই হয়ে যেতে পারে পুরুষ বা মেয়ে পাখি। আবার পূর্ণবয়স্ক বাজরিগারের সঙ্গে অল্পবয়স্ক পাখির জোড়া মিলিয়ে দিলেও বংশবিস্তার করবে না।
চেনার উপায়
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাজরিগারের নাকের ছিদ্রের চারপাশে নীল রংয়ের ঝিল্লি থাকে। এই ঝিল্লি কপাল ও ঠোঁটের মাঝে নাকের ছিদ্রসহ বিস্তৃত।
পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী বাজরিগারের নাকের ছিদ্রের চারপাশে বাদামি রংয়ের ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা থাকে। এই ঝিল্লি কপাল ও ঠোঁটের মাঝে নাকের ছিদ্রসহ বিস্তৃত।
অল্পবয়স্ক পুরুষ বাজরিগারের নাকের ছিদ্রের চারপাশে যে ঝিল্লি থাকে, সেটার রং হয় গোলাপি বা বেগুনি। সময়ের তালে এই রংয়ের পরিবর্তন হয়। ৬-৭ মাস বয়সে এই রং হয়ে যায় নীল।
কোনো কোনো সাদা বা হলুদ রংয়ের বাজরিগারের নাকের ঝিল্লির রং হয় হালকা সাদা-নীলের সংমিশ্রণ।
অপর দিকে অল্পবয়স্ক স্ত্রী বাজরিগারের নাকের চারদিকের ঝিল্লি হালকা সাদা, গোলাপি বা নীল রংয়ের হয়। আবার নীল-সাদার সংমিশ্রণও হতে পারে। ৬-৭ মাস বয়সে এই রং পরিবর্তিত হয়ে বাদামি রংয়ে পরিণত হতে থাকে।
এই কারণে ৩-৪ মাস বয়সের বাজরিগার স্ত্রী না পুরুষ তা চেনা তেমন সহজ নয়।
তারপরেও বেশি কিছু লক্ষণ দেখে বাজরিগারের বয়স চেনা যায়।
* অল্পবয়স্ক বাজরিগারের কপালে সাধারণত ডোরাকাটা দাগ থাকে। পূর্ণবয়স্ক বাজরিগারের কপালের রং পূর্ণতা পেয়ে ডোরাকাটা দাগ দূর হয়ে যায়।
* অল্পবয়স্ক বাজরিগারের চোখ বেশ বড় হয়। চোখের মণির চারপাশে কোনো রিং থাকে না। পূর্ণবয়স্ক বাজরিগারের চোখ বেশ ছোট। চোখের মণির চারপাশে রিং তৈরি হয়। আর চোখ ২টি একটু ভিতরে ঢুকে থাকে।
* অল্পবয়স্ক বাজরিগারের নাকের ঝিল্লি হয় হালকা গোলাপি। পূর্ণবয়স্ক হলে পুরুষ বাজরিগারের হবে নীল রং। আর পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী বাজরিগারের ঝিল্লি রং হবে বাদামি। এখানে ব্যতিক্রমও হতে পারে। সাদা বা হলুদ রংয়ের পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাজরিগারের ঝিল্লির রং হালকা সাদা ও নীলে মেশানো হতে পারে।
* অল্পবয়স্ক বাজরিগার পাখির গলার নিচে স্পট বা ফোটা ফোটা দাগ থাকে অস্পষ্ট ও ছোট। পূর্ণবয়স্ক হলে স্পট বা ফোটা ফোটা দাগ হয় স্পষ্ট ও বড়।