class="post-template-default single single-post postid-29240 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

নবজাতকের পরিচর্যা | নবজাতকের গোসল | নবজাতকের যত্ন

নবজাতকের পরিচর্যা
নবজাতকের পরিচর্যা

মায়ের পেটে দীর্ঘ ৮/৯ মাস কাটানোর পর এক কষ্টকর সময় পার হয়ে যে শিশু পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় তাকেই আমরা ‘নবজাতক’ বলি। জন্মানোর সাথে সাথেই শুরু করতে হয় নবজাতকের পরিচর্যা । নতুন জীবন শুরু হয়। জন্মের পর শিশুর প্রথম ভাষা হল ‘কান্না’। কান্নার মধ্য দিয়ে সে তার আশেপাশের সবাইকে জানিয়ে দেয় যে সে পৃথিবীতে এসেছে। আর এই চিৎকারের সাথে সাথে তার মাতৃগর্ভে  তৈরি হয়ে থাকা নিষ্ক্রিয় ফুসফুসটি বাতাসের সংস্পর্শে এসে সক্রিয় হয়ে উঠে। কারণ, মায়ের পেটে থাকাকালীন সময়ে সেখানে বাতাস ঢুকবার মতো কোনো উপায় ছিল না।

নবজাতকের শরীরের রক্ত বাতাসের অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয় আর রক্ত থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে চলে আসে। যদি জন্মের পর শিশু না কাঁদে তবে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করে না এবং শরীরে অক্সিজেনের অভাব ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রাচুর্য থেকে নবজাতকের গায়ের রং নীল বর্ণ ধারণ করে। তখন যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারলে শিশুর মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। তাই নবজাতকের পরিচর্যা মানে শুরুতেই শিশুকে কাঁদাতে হবে।

এজন্য জন্মের পর শিশুর কান্না খুবই প্রয়োজন। সাধারণত জন্মের পর দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে শিশু চিত্কার করে। প্রসবের পর পাঁচ মিনিটের বেশি সময় চিৎকার না করলে বা নিশ্বাস না নিতে পারলে বা নীল হয়ে গেলে তখনই শিশুর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। অবশ্যই তখন শিশুকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে শিশুর মুখ, গুহ্যদ্বার ইত্যাদি স্থানে ক্রমান্বয়ে গরম ও ঠাতা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এছাড়া নরম কিছু দিয়ে নাকের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়া যেতে পারে। এতে করে শিশু হঠাৎ করে গভীরভাবে শ্বাস নেয়। এছাড়া শিশুর মুখে মুখ রেখে বারবার (২০/৩০ বার) ফুঁ দিলেও অনেক সময় সে শ্বাস নেয়।

যদি মা সুস্থ থাকেন তবে নবজাতকের পরিচর্যা তার নিজের হাতেই করা উচিত। এতে করে শিশুর সাথে মায়ের মানসিক ও শারীরিক একাত্মতা গড়ে ওঠে। নবজাতকের পরিচর্যা বিষয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যেহেতু জন্মের পর শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই খুব সাবধানতার সঙ্গে অত্যন্ত যত্ন নিয়ে শিশুর পরিচর্যা করতে হবে।

১. জন্মের পর পরই নবজাতকের শরীর, মাথা, চুল ভালভাবে পরিষ্কার করে মায়ের কাছে দিতে হবে।

২. জন্মের পরই নবজাতকের শরীরের রং শ্বাসের গতি, দেহের তাপমাত্রা ও নাভির দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

৩. শিশুকে বাইরেরলোকের কাছে যত কম দেয়া যায় ততই ভাল।

৪. অপরিষ্কার হাতে ও শরীরে শিশুকে ধরা উচিত নয়। তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র (সাবান, ভোয়ালে) তার নিজস্ব থাকা দরকার। ৫. বাইরে থেকে ঘুরে আসা জামা কাপড়ে শিশুকে কোলে নেয়া, আদর করা, খাওয়ানো (দুধ, পানি) উচিত নয়।

নবজাতকের কাপড়চোপড়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা উচিত। খুব বেশি বা খুব কম কাপড় দিয়ে তাকে জড়ানো ঠিক নয়। ঘরের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রেখে তার কাপড়চোপড় পরানো উচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে, শিশু যাতে না ঘামে বা ঠাণ্ডা না লাগে।

নবজাতকের পরিচর্যা : নাভি

নবজাতকের জন্মের পর নাভির যত্ন নেয়া বিশেষ প্রয়োজন। নাভির ঠিকমতো যত্ন না হলে নবজাতকের নাভির প্রদাহ, টিটেনাস ছাড়া আরও অনেক সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন স্পিরিট দিয়ে নাভি পরিষ্কার করতে হবে। সম্পূর্ণভাবে শুকাবার আগে নাভি না ভেজানোই ভাল। গোসল করার সময়ও তাই নাভি না ভিজিয়ে গোসল করানো উচিত। তা না হলে গোসলের পানির মাধ্যমে নাভিতে জীবাণু প্রবেশ করবে। নাভি কখনই তুলা বা গজ বা অন্যকোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত নয়, নাভিতে কোনো রকম পাউডার বা তেল দেয়া ঠিক নয়। অনেক সময় দেখা যায়, জন্মের কিছু সময় পর নাভি মায়ের থেকে আলাদা করার কারণে রক্তপাত হয়। খুব সামান্য হলেও অবহেলা না করে এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সাধারণত ৮ থেকে ১০ দিনের ভিতর নাভির উপরের অংশ খসে পড়ে। যদি নাভিতে কোনো ঘা হয়ে থাকে তবে তা শুকাতে সময় লাগে। তবে এ অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করা উচিত।

নবজাতকের চোখের পরিচর্যা

নবজাতকের জন্মের পর, পরপর কয়েকদিন হালকা গরম পানিতে তুলো ভিজিয়ে চোখ দুটো পরিষ্কার করে মুছে দিতে হবে। যদি এক চোখে পিচুটি পড়ে তবে সেই চোখ মোছা তুলো দিয়ে অন্য চোখ মোছা ঠিক নয়। চোখের কোণ থেকে নীচের দিকে অর্থাৎ থুতনির দিকে নাকের দু’পাশটা কয়েকবার ডলে দিলে চোখের কোণ থেকে নাকের ভিতরের নীচের দিকে যে ছোট্ট নালি থাকে (চোখের পানি নাকে চলে আসার জন) সেটা যদি বন্ধ থাকে তবে তা খুলে যায়। তা না হলে বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- চোখ লাল হয়ে থাকা, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখে ব্যথা হতে পারে অন্যকোনো অসুবিধা থাকলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করা উচিত। অনেক সময় বুকের দুধের ফোঁটা চোখে পড়লে চোখে পিচুটি হতে পারে, এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই। এটা আপনা আপনি ভাল হয়ে যায়।

নবজাতকের পরিচর্যা : শিশুর কানের যত্ন

শিশুকে গোসল করানোর সময় তুলা দিয়ে কান বন্ধ রাখা উচিত। পরিষ্কার, পাতলা কাপড় দিয়ে খুব সাবধানে কানের বাইরে পরিষ্কার করা উচিত। কানে তেল বা ক্রিম কোনো মতেই দেয়া উচিত নয়। তবে COTTON BUD এ ভেসলীন বা অয়েল লাগিয়ে হালকাভাবে কানের ভিতরে ও বাইরে পরিষ্কার করলে কান ভালমতো পরিষ্কার হয়।

নবজাতকের গোসল

নবজাতকের গোসল খুবই প্রয়োজনীয়। অনেকে মনে করেন, গোসল করলেই বুঝি ঠাণ্ডা লেগে গেল, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কিছু নিয়ম মেনে শিশুকে গোসল করালে কোনো অসুবিধা তো হয়ই না বরং এতে করে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে, ভালভাবে ঘুমাতে পারে, খাবারে রুচি আসে।

১. ঘরের ভিতরেই কোনো এক জায়গায় গোসল করানো উচিত। বাইরে বা খোলামেলা জায়গায় গোসল করানো উচিত নয়। এতে করে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।

২. পরিষ্কার গামলায় ঠাণ্ডা ও গরম পানি মিশিয়ে পানির তাপমাত্রা শিশুর গ্রহণযোগ্য করে নিতে হবে।

৩. পাত্রের পাশেই বিছানার উপর শুকনো তোয়ালে রাখতে হবে, সাথে জামা কাপড়ও। গোসল শেষে সাথে সাথে গা মুছিয়ে কাপড় পরিয়ে নিতে হবে।

৪. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করানো উচিত। সকালের দিকে (১০টা/১১টা) গোসল করানো ভালো।

৫. শিশুকে গোসল করানোর আগে যিনি গোসল করাবেন টার হাত ভালো ভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

৬. খুব তাড়াতাড়ি গোসল করাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে কানে পানি না যায়। এবং নাভিতে (যদি না শুকিয়ে থাকে) যাতে পানি না লাগে, শরীরের প্রতিটি জায়গা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

৭. অনেকে গোসলের আগে শিশুর গায়ে অলিভ অয়েল বা তেল মালিশ করেন, খুব তাড়াতাড়ি তা করতে হবে। কারণ, বেশিক্ষণ খালি গায়ে রাখলে শিশুর ঠাণ্ডা লাগতে পারে।

৮. গোসল শেষে শিশুর শরীর খুব ভালভাবে মুছতে হবে। পাতলা কাপড় দিয়ে প্রতিটি জায়গায় মুছতে হবে। মোছবার সময় জোরে ঘষাঘষি না করে মৃদু চাপ দিয়ে মুতে হবে। গোসলের পর লোসন, পাউডার সমস্ত শরীরে লাগিয়ে দিলেও শিশু আরাম পায় এবং তার ভাল ঘুম হয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এই পাউডার যেন গলার নীচে, বগলে বা অন্যান্য ভাঁজে জমে না থাকে, শিশুকে ঢিলেঢালা ও পরিষ্কার জামা কাপড় পরাতে হবে। শিশুকে যত খোলামেলা ও মুক্ত অবস্থায় রাখা যাবে সে হাত-পা ঠিকভাবে ছোড়াছুড়ি করতে পারবে। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধিতে সূর্যের আলো একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে সূর্যের আলোতে ভিটামিন-ডি থাকে যেটা শিশুদের রিকেটস রোগের প্রতিরোধক। তাই প্রতিদিন সকালে নবজাতকের শরীরে সূর্যের আলো লাগানো খুবই উপকারী। জন্মের পর শিশুর প্রস্রাব ও পায়খানার দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন সাধারণত জন্মের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিশু প্রস্রাব করে অন্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। নবজাতকের প্রথম পায়খানা সবুজ ও কালচে হতে পারে। মিকোনিয়াম এর কারণে এ রকম হয়ে থাকে। কয়েকদিন এ রকম থাকে। মায়ের দুধ খেলে দিনে শিশু বেশ কয়েকবার পায়খানা করে, একটু পাতলা হতে পারে, এতে চিন্তা করার কিছু নেই। যদি বেশি পাতলা ও বারবার হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

নবজাতকের চুলের পরিচর্যা

ছোট শিশুর মাথার চুল প্রতিদিন ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে। গোসলের সমর ও পরে ভাল করে চুল মুছে শুকনা রাখতে হবে। শিশুর জন্মের দেড় বছর বয়স পর্যন্ত মাথার চুল না কাটাই ভাল। কারণ, জনের পর বেশ কিছুদিন শিশুর মাথা নরম থাকে, মস্তিষ্ক অপরিপক্ক থাকে। এ সময় সেখানে ব্রেড, কাঁচি বা ঐ জাতীয় কিছু না ছোঁয়ানই ভাল। এতে করে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।

নবজাতকের ওজন

জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন পর্যন্ত শিশুর দৈহিক ওজন কমতে থাকে কিন্তু কয়েকদিন পরেই তা আবার বাড়তে থাকে এবং প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে জন্মের ওজনের সমান হয়। তবে এই সময় শিশুর প্রতি খুবই যত্নবান হতে হয়।

নবজাতকের খাবার

নবজাতকের পরিচর্যা এর ক্ষেত্রে  শিশুর জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে বুকের দুধ দিতে হবে। নবজাতকের জন্মের সাথে সাথেই বুকের দুধ দিতে পারলে ভাল। কিন্তু অনেক সময় মায়ের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে জন্মের তিন চার ঘণ্টার ভেতর অর্থাৎ মায়ের প্রসবকাল কাটিয়ে উঠতে যে সময় লাগে ঐটুকু সময়ের পর দিতে হবে।

ছোট্ট শিশুর শরীরে খুব কম পরিমাণ শর্করা থাকে। মায়ের দেহ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তার নিজের শরীরে জমে থাকা শর্করা খুব অল্প সময়ের ভেতরেই শরীরের কাজে শেষ হয়ে যায়।

তাই এই সময়ের মধ্যে খাবার না দিলে গ্লুকোজ বা শর্করার অভাবে হাইলাইসেমিয়া (Hypoglycaemia) হয়ে যায়, যার ফলে শিশুর খিঁচুনি হয়ে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। নবজাতকের প্রথম কয়েক মাস মায়ের দুধই হচ্ছে সবচেয়ে উপকারী, উপাদেয় আর পুষ্টিকর খাদ্য প্রথম খাবার হিসেবে শিশুকে অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত।

অনেকে জন্মের পরপরই শিশুকে মিশ্রি, মধু, চিনির রস এই গুলো খাইয়ে থাকনে কিন্তু এগুলো প্রায়ই জীবাণুমুক্ত নয় বলে শিশুর নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন- বমি, পাতলা পায়খানা, পেটের পীড়া ইত্যাদি। তাই নবজাত শিশুকে এ সকল না খাওয়ানোই ভাল। শিশুর জন্মের পর মায়ের বুক থেকে ‘কোলস্ট্রাম’ (Colostrum) নামক হলুদাভ ঘন দুধ বেরিয়ে আসে—যা শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই দুধ অবশ্যই শিশুকে খাওয়ানো উচিত। যতক্ষণ শিশু বুকের দুধ খেতে চায় ততক্ষণই তাকে খাওয়ানো উচিত। পেট ভরে গেলে সে নিজেই ঘুমিয়ে পড়বে। বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পানি খাওয়ালে আরও ভাল। তবে চিনি বা মিত্রি পানি না নিয়ে স্বাভাবিক ফোটানো পানি দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধ ঠিকমতো খেলে শিশুকে আর কোনো কিছুর দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর আগে ওপরে তুলো ভিজিয়ে মায়ের বুক ভাল করে মুছে নিতে হবে। দুধ খাওয়ানো শেষ হলে শিশুকে কিছুক্ষণ কাঁধে রেখে বা কোলে বসিয়ে আস্তে করে পিঠে চাপড় দিলে যদি পেটে বাতাস ঢুকে থাকে তবে তা বের হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, পেটে যদি বাতাস থাকে তবে শিশুর পেটে যন্ত্রণাসহ অস্বস্তি হয়ে থাকে। দুধ খাওয়ার সময় ঠিকমতো না খাওয়ানোর ফলে শিশুর পেটে এই বাতাস ঢুকতে পারে।

জন্মের পর প্রথম এক দেড় বছর বয়স পর্যন্ত শিশু খুব দ্রুত বাড়ে। তাই এই সময় তার বাড়ন্ত শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন। আর নবজাতকের পুষ্টি বলতেই মায়ের দুধ বোঝায়। তাই তাকে নিয়মিত যত্ন সহকারে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। সুস্থ ও সবল শিশু গড়ে তোলার জন্য শিশুর শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকে খেয়াল রাখা উচিত এবং শিশুর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত।

 

নবজাতকের পরিচর্যা : দাঁতের যত্ন

প্রত্যেক অভিভাবকই চান তার শিশুসন্তানটি সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক। শিশুটি থাকুক সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্ত। শিশুদের যত্নে অন্যান্য দিকগুলো খেয়াল রাখার পাশাপাশি দাঁতের যত্নের প্রতিও খেয়াল রাখা কর্তব্য প্রত্যেক অভিভাবকের। শিশুদের দুধ দাঁত বা অস্থায়ী দাঁত উঠার সময় থেকে ঐ দাঁতগুলো পড়ে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ ৬ মাস বয়স থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের দাঁতের যত্ন নেয়া ও নবজাতকের পরিচর্যা  প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব। দুধ দাঁত বা অস্থায়ী দাঁত সাধারণত ৬ মাস বয়স থেকে উঠতে শুরু করে এবং আড়াই বছর বা ৩০ মাস বয়সে সবগুলো দুধ দাঁত বা অস্থায়ী দাঁত গজায় বা উঠে। এই অস্থায়ী দাঁত উপরের মাড়িতে ও নীচের মাড়িতে ১০টি করে মোট ২০টি থাকে। সাধারণত ৬ বছর বয়স থেকে ঐ দুধ দাঁতগুলো প্রথম নীচের মাড়ির সামনে থেকেও উপরের মাড়ির সামনে থেকে পড়ে স্থায়ী দাঁত গজাতে থাকে। এখানে লক্ষণীয় যে, ৬ মাস বয়স থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত মুখে শুধু দুধ দাঁত বা অস্থায়ী দাঁতই থাকে এবং ৬ বছর বয়স থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত ঐ দুধ দাঁত বা অস্থায়ী দাঁতগুলো ক্রমানুসারে পড়তে থাকে এবং সেই স্থানে স্থায়ী দাত উঠতে থাকে।

সুষ্ঠুভাবে দাঁতের গঠনের জন্য প্রত্যেক শিশু দেড় বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধপান করানো প্রয়োজন। একমাত্র বুকের দুধেই শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান থাকে, যা শিশুর শরীর গঠনে সাহায্য করে। বোতলের দুধ শিশুদের পান করানো উচিত নয়। যদি কখনও বোতলের দুধ পান করাতে হয় তবে দুধ পান করানোর পরপরই একটি নরম পাতলা ভিজানো কাপড় দিয়ে গুলো পরিষ্কার করে দেয়া প্রয়োজন। বোতলের দুধ শিশুদের দাঁতের ক্ষয় রোগ হওয়ার প্রধান কারণ।

দুধ দাঁত উঠার বয়সে শিশুদের মাড়িতে এক ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি হয়, তখন শিশুরা হাতের কাছে শক্ত যে কোন ধরনের জিনিস পায় তা বিচাতে থাকে। অপরিষ্কার ঐ শক্ত জিনিসটি চিবানোর কারণে শিশুটির পেটের পীড়া থেকে জ্বর বা অন্যান্য রোগও হতে পারে। শিশুরা যেন অপরিষ্কার কোন জিনিস এ সময় কামড়াতে না পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুদের মুখে সব দুধ দাঁত বা অস্থায়ী দাঁত উঠার পর থেকে তাদেরকে দাঁত ব্রাস করা শেখানো প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য। বিশেষ করে প্রতিদিন সকালে ও রাতে শোয়ার আগে যখন অভিভাবকরা নিজেরাও দাঁত ব্রাস করে।

আঠালো মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে শিশুদের বিরত রাধাই শ্রেয়। তারপরও যদি খায় তবে সাথে সাথে দাঁত ব্রাস করার অভ্যাসটিও তাদের বলে দেয়া দরকার। আঠালো মিষ্টি জাতীয় খাবার দাঁতের ক্ষয় রোগ হওয়ার প্রধানতম কারণ। ফল জাতীয় খাবার, বিশেষ করে আপেল, কমলা, পেয়ারা খাওয়ার জন্য বাচ্চাদের উৎসাহিত করা উচিত।

উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখার পরও কিন্তু শিশুদের দাঁতে নানা ধরনের অসুবিধা হতে পারে, যেমন- আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দাঁত পড়ে বা ভেঙে যেতে পারে, দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে, ব্রাস করার সময় দাঁত দিয়ে রক্ত পড়তে পারে; মুখে ঘা হতে পারে, দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও শিশুর দাঁতের বা মুখে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে।

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দাঁতের সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। শিশুর অস্থায়ী বা স্থায়ী দাঁতে যে কোন রোগই হোক না কেন, তার চিকিৎসা করানো প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য। তা না হলে পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিল ধরনের সমস্যা হতে পারে। ঐ ধরনের সমস্যা সম্বলিত দাঁত চিকিৎসা করা সম্ভব কিন্তু তা বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

আমাদের মুখে সব দাঁত এক সাথে গজায় না এবং একসাথে পড়েও না। প্রথম অস্থায়ী দাঁত বয়স ভিত্তিতে ক্রমানুসারে উঠে এবং বয়স ভিত্তিতে ক্রমানুসারে পড়ে স্থায়ী দাঁত উঠে। সঠিক বয়স পর্যন্ত অস্থায়ী দাঁত মুখে থাকা প্রতিটি শিশুর জন্যই প্রয়োজন। শিশুর স্থায়ী বা অস্থায়ী দাঁতে কোন রোগ হলে চিকিৎসা করিয়ে দাঁত রক্ষা করুন।

 

নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন?

নবজাতকের পরিচর্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মা-বাবা তাদের সন্তানকে কোলে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসছেন। শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে। নবজাতকের সাথে সাথে মা-বাবার নিদারুণ পেরেশানি। তারা পরপর একটা কথাই জানতে চান যে, তাদের সন্তান ভাল হবে তো? নবজাতকের পরিচর্যা কীভাবে করবো? আসলেই শিশুর হাঁপানি নিয়ে প্রত্যেক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞগণ প্রতিদিনই এ প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। শিশুর বক্ষব্যাধির মধ্যে হচ্ছে হাঁপানি একটি রোগ। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ২০ জন শিশু শিশুকালে হাপানিজনিত শ্বাসকষ্টের টানে কষ্ট পায়। শতকরা ৮০ ভাগ শিশুই সাধারণত ৭ বছরের মধ্যে আক্রান্ত হয় এ রোগে এবং ৪০ ভাগ শিশু ভোগে তাদের দুই বছর বয়সের মধ্যেই, যারা ক্রনিক হাঁপানির শিকার হয়ে থাকে। সাধারণত দেখা যায়, ছেলে শিশুরা মেয়েদের চেয়ে বেশি হাঁপানির শিকার হয়।

নবজাতকের হাঁপানির লক্ষণগুলো হলোঃ প্রতি রাত অথবা দিনে শ্বাসকষ্ট লেগে থাকা। বুক পরীক্ষা করলে বাশির মত আওয়াজ পাওয়া যায়। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি থেমে যায় এ রোগ হলে। রোগ পুরনো হয়ে গেলে বুকের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে কবুতরের বুকের মত হয়ে যায় এবং ফুসফুলের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। হাঁপানি ছাড়াও কিন্তু শিশু অনেক সময় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভোগে। তবে ভালমত রোগের ইতিহাস শিশুর মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া গেলে রোগ নির্ণয় ও নবজাতকের পরিচর্যা সহজ হয়। শিশু যদি তার নাক দিয়ে কোন জিনিস ঢুকিয়ে দেয় তাহলে সেই বস্তু শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে তীব্র শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করতে পারে এবং এমন ইতিহাস জানা গেলে সাথে সাথে বুকের এক্সরে করিয়ে সন্দেহের অবসান ঘটাতে হবে। আর তৎক্ষণাৎ কোন বক্ষ হাসপাতারে জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে হবে। শিশুর পেটে কৃমি থাকলেও অনেক সময় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত সংক্রমণে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

সিসটিক ফাইব্রোসিস বলে একটি রোগ আছে, তাতেও শিশু হাঁপানির মত শ্বাসকষ্টে ভোগে। শ্বাসকষ্ট হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে রোগের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে হবে। নবজাতকের পরিচর্যা য় বুকের এক্সরে খুবই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ফুসফুসের এবং শ্বাসনালির অবস্থা যাচাই করা সম্ভব। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও অনেক কিছু আবিষ্কৃত হয়। যেমন রক্তে ইয়োমিনোফিল গণনা করা। ত্বকের অ্যালার্জি পরীক্ষা করা। বিশেষ করে যে বাসায় গৃহপালিত পশু আছে। গত ২০ বছর ধরে শ্বাসনালি সংকোচন রোধের সুনির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে শিশুদের হাঁপানি চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নতি সম্ভব হয়েছে। অযথা দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য এবং নিয়মিত চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার জন্য মাতা-পিতাকে এ ব্যাপারে শিক্ষিত হতে হবে। তাদের হাঁপানির কারণ, ওষুধের ফলাফল এবং ওষুধের কার্যপ্রণালি সম্পর্কে তথ্য জানা থাকতে হবে। কারণ, কী অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে তাও জানা থাকতে হবে। প্রথম হতেই যদি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় এনে শিশুকে চিকিৎসা করানো হয় তাহলে শিশুর হাঁপানি রোগে খুব সুফল পাওয়া যায়। সাধারণ মাত্রার হাঁপানির প্রায় ৭৫% ভাগ শিশুর ১৪-১৫ বছর বয়সের দিকে ভাল হয়ে যায়। অপরদিকে মাঝারি মাত্রায়, হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৫০% ভাগ ঐ বয়সের কাছাকাছি সময় ভাল হয়ে যায়। অতিমাত্রায় হাঁপানি আক্রান্ত শিশুদের কেউ কেউ পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পরও রোগটিতে ভুগতে পারে। তাই মা, বাবা, অভিভাবকগণের কর্তব্য হল তাদের শিশু হাঁপানিতে আক্রান্ত সন্দেহ হলে শুরুতেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!