Monday, December 23
Shadow

Bangla Horror Story হরর গল্প : অন্ধ চাঁদের কালো আলো

ধ্রুব নীলের লেখা ভয়ানক এ আধিভৌতিক এ Bangla Horror Story হরর গল্প দুর্বলচিত্তের পাঠকদের জন্য নয়। গল্পটি লেখকের প্রকাশিতব্য ভয়াল সিরিজের পাণ্ডুলিপি থেকে নেওয়া।

ভোরের আগে

ব্রিটিশ আমলের গোডাউন। ঝাড়পোঁচ করার পরও স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা কাটেনি। শূন্য ঘরের মাঝে চার ফুট উঁচু বেঞ্চি। তাতে নিথর দেহটি রাখা। ঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরানো হয়েছে। হারিকেন আর মোমবাতির ব্যবস্থা করা ছিল আগেই। ওগুলো জ¦লছে স্থির শিখায়। পুরো প্রক্রিয়াটার তারাও সাক্ষী হতে এসেছে যেন।

বেঞ্চির একপাশে মনোয়ারা। অন্যপাশে বৃদ্ধ জিঁয়ৎ কুন্ডু। অশীতিপর বৃদ্ধ তার ধাতব বাক্সটা গোছালেন ধীরেসুস্থে। মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন কোনো একটা তরল। যে কারণে জমাট রক্ত ও অন্যান্য জৈবিক অংশগুলো থেকে বোঁটকা গন্ধ নাকে বাড়ি খেল না।

মনোয়ারা তার হাতব্যাগ থেকে টাকাটা এগিয়ে দিল। বৃদ্ধ ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল তাকে।

ধাতব বাক্সটায় ছুরি, কাঁচি, সেলাইয়ের যন্ত্রপাতি, রাসায়নিকের বোতল; প্রতিটি জিনিসের জন্য আলাদা খোপ আছে। খাপে খাপে সব মিলে যেতেই প্রশান্তির এক চিলতে হাসি। তারপর খপ করে টেনে নিল টাকার বান্ডিল। গুনে নেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় আছে তার হাতে।

‘কতক্ষণ লাগবো?’

‘জানি না।’

মনোয়ারার আর কিছু জানার সাহস হলো না। বৃদ্ধের বিরক্ত চাহনি দেখে তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।  কাজ না হলে এত সময় নিয়ে টাকা গুনতো না লোকটা। গোনা শেষে টাকাটা জোব্বার পকেটে ভরে বেরিয়ে গেল বৃদ্ধ। এখন অপেক্ষার পালা মনোয়ারার। ভোর হওয়ার আগেই জেগে উঠবে তার স্বামী জয়নাল। যে কিনা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছিল সকালে।

Bangla Horror Story হরর গল্প

সকালের কথা

জীবিত মানুষের লাশ দেখার কৌতুহল থাকে। মিঠাইনদী গ্রামের লোকজন যখন মনোয়ারার বাড়িতে তার স্বামী জয়নালের মরদেহ দেখতে ভিড় জমাল তখন তাদের কেউ কেউ ভাবল, মনোয়ারা অধিক শোকে পাথর হয়েছে।

মনোয়ারার চেহারায় পাথর ভাব আসেনি। এ নিয়ে তাকে খানিকটা বিচলিতও দেখাল। দেয়ালঘড়িতে সময় দেখল সাবধানে। লোকের ভিড় কমুক। যাদের আসার কথা তারা আসবে। মোবাইলে খবর দেওয়া হয়েছে। ওদের আসার কথা চারটায়। টাকা অ্যাডভান্স করা আছে।

লাশ দাফনের সময় ঠিক করা হয়েছে। জয়নালের বড় ভাই মানে মনোয়ারার ভাসুর ঘোষণা দিল জানাজা হবে বাদ আসর। মনোয়ারা আবার ঘড়ি দেখল।

Bangla Horror Story হরর গল্প

জয়নালকে নিতে যাদের আসার কথা তারা সময়মতো এলে চিন্তা নেই। আসরের নামাজের টাইম সাড়ে চারটায়।

হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে জয়নাল। সবার কাছে এখন সে লাশ। মনোয়ারার কাছে এখনও জয়নাল মিয়া।

মনোয়ারা ধরেই নিয়েছিল তার স্বামীর এমন কিছু ঘটবে। প্রণব ডাক্তারও বলেছিল। যেকোনও দিন বুকে হাত দিয়ে বসে পড়বে লোকটা। বেঢপ মোটা হয়ে গিয়েছিল। বলতো বুকে চিন চিন ব্যথা করে। মনোয়ারা বুঝতে পেরেছিল তার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় হয়েছে। যে প্রস্তুতিটা সে বহু আগে থেকেই নেবে নেবে করছিল। বহু হাত ঘুরে বহু টাকা খরচ করে বের করেছিল বৃদ্ধ জিঁয়ৎ কুন্ডুকে।

Bangla Horror Story হরর গল্প

লোক এলো তিনজন। আসার কথা চারজনের। পিকআপে করে নতুন কেরোসিন কাঠের খাটিয়া এনেছে ওরা। কিন্তু ভারী দেহটা তোলার পর তিনজনে খাটিয়া ধরবে কী করে? একজন সমাধান দিল, স্থানীয় কাউকে ভাড়া করেন। ট্যাকা দিলে সব হবে। পিকআপ ভাড়ার দশ হাজার টাকা তার হাতেই দিল মনোয়ারা।

মনোয়ারা সবাইকে জানাল, জয়নালের শেষ ইচ্ছা ছিল এ কাঠের খাটিয়ায় শেষবারের মতো শোবে। আরেকটা ইচ্ছা ছিল, ইছাপুরা গ্রামে তার মায়ের কবরের পাশে যেন দাফন করা হয়। শেষের কথাটা মনোয়ারা উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে এই মাত্র বলল। ভাড়া করা লোকগুলো মনোয়ারার বুদ্ধিকে সমীহ করে বলল, এই মহিলা কঠিন আছে।

যথারীতি নতুন খাটিয়ায় চড়ে জয়নালের ভারী শরীরটা খুঁড়ে রাখা কবরে নিয়ে যাওয়া হলো না। ওঠানো হলো পিকআপে। সেখানে লাশটাকে রাখা হলো বরফের টুকরো ভরা বাক্সে। জিঁয়ৎ কুন্ডু যা যা বলেছে তার ব্যতিক্রম কিছু করছে না মনোয়ারা। গ্রামের কেউ আর জোর করে সন্দেহ বাড়াল না। বরং কবর দেওয়ার বিষণ্ন দৃশ্যটা দেখতে হবে না ভেবে হাঁফ ছেড়ে যে যার পথ ধরল।

Bangla Horror Story হরর গল্প

৩০ বছর আগের এক রাত

মনোয়ারার বয়স নয়-দশ বছর হবে। কুমরুলপাড়ায় নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে সকালে। এসেই শুনে পাশের বাড়ির মনু মাস্টারের বউ মারা গেছে। বউ মরার পর লোকটা চিৎকার করে বলে যাচ্ছে, পরশুরাম গ্রাম থেকে জিঁয়ৎ কুন্ডুকে ডেকে আনবে। কেউ যেন তার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য কবর না খোঁড়ে। কারণ মাস্টারের কথামতো আজব বিদ্যা জানা জিঁয়ৎ কুন্ডু লোকটা মরা মানুষকে জীবিত করতে পারে। এমনি এমনি করে না। বিনিময়ে অনেক টাকা নেয়।

মনু মাস্টার সেদিন তার বউকে কবর দিতে দেয়নি। জানাজাও হয়নি। মানুষজনও গরজ না দেখিয়ে যে যার কাজে চলে যায়।

অতি আগ্রহের কারণে তক্কে তক্কে ছিল মনোয়ারা। গভীর রাতে কৌতুহল দমাতে না পেরে মনু মাস্টারের পিছু নেয়। জংলার পাশে পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতরটায় উঁকি দিতে মোটেও ভয় পায়নি। কূপিবাতি আর হারিকেনের আলোয় জিঁয়ৎ কুন্ডুকে দেখল বিচিত্র সব কাজ করতে। লাশের বুক কাটা, একটার পর একটা ইনজেকশন দেওয়া, টর্চ থেকে খুলে নেওয়া মোটা মোটা ব্যাটারিগুলোকে একটা বাক্সের ভেতর ঢোকানো, সেখান থেকে তার বের করে আরেকটা যন্ত্রে লাগানো, আলোর ঝলকানি; আবছায়া সব মনে আছে মনোয়ারার। এরপর ভোরের আগেই দেখল ভয়ানক সেই দৃশ্য। চোখের সামনে নড়েচড়ে উঠতে দেখে মনু মাস্টারের বউকে। জেগে ওঠার পর দেহটা বুঝতে পারছিল না তার মাথাটা কতটা ঘোরাতে হবে। লাশটার ঘাড়ের হাড় ভাঙার শব্দটা এখনও কানে বাজে মনোয়ারার। প্রচণ্ড ভয় জেঁকে ধরে। দৌড়ে পালায়। জ¦রে পড়ে শুয়ে থাকে টানা ছদিন।

সে রাতের পর দিনই মনু মাস্টার গায়েব। তার বউয়ের লাশও কেউ দেখল না। শুধু মনোয়ারা জানে, ওটা ঠিক লাশ ছিল না। দিনে দিনে ঘটনাটা গল্প হয়ে উঠতে না পারলেও মনোয়ারার মগজের একটা বড় অংশজুড়ে মহাজাগতিক বিস্ময় হয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।

ঘটমান বর্তমান

জিঁয়ৎ কুন্ডু চলে গেছে কতক্ষণ হলো জানে না। কারণ এই ঘরে ঘড়ি নেই। মনোয়ারা ভাবল, মহাবিশ্বের ঘড়িটাকে উল্টোপথে হাঁটানোর মতো কিছু যদি ঘটে থাকে এই রুমে তবে সময় নিয়ে চিন্তা করা অর্থহীন।

‘পানি। বাতাস।’

জিঁয়ৎ কুন্ডুর কথামতোই ঘটল ঘটনা। নড়ে উঠল জয়নালের দেহ। শব্দ দুটো কেমন ফ্যাঁসফ্যাঁসে শোনাল। এমন কণ্ঠ ছিল না জয়নালের।

মানসিকভাবে তৈরিই ছিল মনোয়ারা। তা না হলে এতদূর লাশ বয়ে বেড়াত না। জয়নালের শরীরটা নড়তেই এক লহমায় ফিরে গেল ত্রিশ বছর আগের সেই রাতে। ধসে পড়ল সাহসের বাঁধ। মনু মাস্টারের বউটা জেগে উঠেই এলোমেলোভাবে পা ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল স্বামীর কাছে। গন্ধ শুঁকে বলেছিল, ওমা! আফনে দেহি জ্যাঁতা। আমি তো মরা। আফনে জ্যাঁতা ক্যান গো? মনু মাস্টারের ভয়ার্ত চেহারা দেখার পরই ছুটে পালায় মনোয়ারা।

জানালা দিয়ে আসা বাতাসে একযোগে তিরতির করে কেঁপে উঠল সবকটা মোম আর হারিকেন। মনোয়ারার মনে হলো এই ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। জিঁয়ৎ কুন্ডু বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকেই দেয়াল হয়ে গেছে।

‘পানি, বাতাস।’

‘আপনার পানি লাগবে না। বাতাসও লাগবে না। একটু ধৈর্য ধরেন, তিয়াস চইলা যাবে। শান্ত হইয়া থাকেন। মরা মানুষের এসব লাগে না।’

জয়নাল স্থির ও পাথর চোখে চেয়ে রইল মনোয়ারার দিকে। তার দৃষ্টি দেখে মনে হলো বাইশ বছর সংসার করা স্ত্রীকে সে চিনেছে। শুধু কথাগুলো বুঝতে পারল না।

জয়নালের শ্বাস নেওয়ার শব্দ নেই ঘরটায়। জিঁয়ৎ কুন্ডুর কাজকর্ম মনোয়ারা বুঝে উঠতে না পারলেও সে দেখেছে জয়নালের বুকে একটা বাক্স বসিয়েছে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট বিরতিতে শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে। পুরো ব্যাপারটাই লাশ নিয়ে একটা ভোজবাজি নয়তো? লাশ হাঁটবে, কথা বলবে, পানি খেতে চাইবে; এর জন্য মানুষ টাকা খরচ করবেই। জয়নালের শিরায় শিরায় একটা কিছু ঘটছে। অল্প আলোতেও মনোয়ারা দেখতে পাচ্ছে সব। যেন ঠিক জয়নাল নিজেকে নয়, তার শরীরটাই তাকে চালাচ্ছে।

জয়নালের শরীরে অজস্র কাটাকুটি। রক্ত পড়ছে না এক ফোঁটাও। নাক-মুখ দিয়ে বাতাসও টানতে হচ্ছে না। বুকের ভেতর বসানো শূকরের হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি শুধু পরিষ্কার শুনছে মনোয়ারা।

‘কাছে আসো বউ। কতদিন তোমারে জড়ায়ে ধরি না।’

‘আপনি তো সকালে…।’

জিঁয়ৎ কুন্ডু একগাদা পরামর্শ দিয়ে গেছে মনোয়ারাকে। সেসব মনে পড়ছে না। জয়নালকে কি সে জানাবে মরে যাওয়ার ব্যাপারটা? এ ব্যাপারে নির্দেশনা কী ছিল?

‘সকালে আমি মইরা গেছিলাম। মনে পড়ছে। আমি এখনও মরা। আমার জীবন নাই। আমি বুঝতে পারতেসি বউ। বউ তুমি কাছে আসো। ডরাইও না। মরে গেলে কী হবে আমি তো তোমার স্বামী ছিলাম।’

মনোয়ারা ভয়ের স্রোতে খাবি খাচ্ছে। জয়নালের মগজ ভুল করছে না। নিজেকে অতীত বানিয়ে ফেলেছে। বলল, স্বামী ছিল। এখন নেই? এখন মৃত? মৃতের পরিচয় শুধুই লাশ? এ তাহলে কে? কাকে ফিরিয়ে আনল মনোয়ারা?

‘মইরা গেছি বউ। গলায় বাতাস নাই। গলা শুকনা। পানি নাই। পানি দাও।’

‘আপনার পানি খাওয়া নিষেধ। কবিরাজ মানা করসে।’

‘আমার মাথার মইদ্যে আমি মরা। আমি কথা কইতাসি, মানে মরা মানুষ কতা কইতাসে। বউ তুমি কাছে আসো। আমার হাত ধরো। ডরাইও না।’

জয়নাল যতবার ভয় পেতে মানা করছে ততই কুঁকড়ে আসছে মনোয়ারা। জয়নাল সটান বসে পড়ল বেঞ্চিতে। যেন শক্তিশালী কেউ তাকে ধরে বসিয়েছে। সেই শক্তিশালীটা কে? জয়নালের মগজ? যে মগজ এখনও জানে না যে সে মারা গেছে? জিঁয়ৎ কুন্ডু অবশ্য বলেছিল এমনটা। প্রথম কিছুক্ষণ নাকি কিছুদিন জয়নাল থাকবে জীবন্মৃতের মতো। তারপর কোন দিকে কী মোড় নেবে তা বলা যায় না। জিঁয়ৎ কুন্ডুর এসব শুনেও রাজি ছিল মনোয়ারা। হতে পারে শৈশবের ওই রাতের অলৌকিক দৃশ্যটা আবার দেখার জন্য মূলত সে অপেক্ষাই করছিল এ রাতটার।

উঠে দাঁড়াল জয়নালের শরীর। পরক্ষণে হুড়মুড় করে পড়ে গেল ভারী দেহটা। কোথাও মনে হলো থেঁতলেও গেছে। কবিরাজের ওষুধের কারণে এ শরীরে সহজে পচন ধরবে না। মনোয়ারার মনে হলো একটা জ্যান্ত মাংস পিণ্ডই কেবল হামাগুড়ি দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে চাইছে।

‘মইরা গেছি বউ। গলায় বাতাস নাই। গলা শুকনা। পানি নাই। পানি দাও।’

ঠিক একইভাবে একই লয়ে কথাটা আবার বলল জয়নাল। জয়নালের মগজ তাকে দিয়ে বলাচ্ছে নির্ঘাৎ। বেঁচে থাকতেও কি সেটাই ঘটে না? দুই উপস্থাপনার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য কেন? মনোয়ারার মনোবল ভেঙে চুরমার ততক্ষণে।

‘আপনি যান। আপনি যান!’

‘বউ কাছে আসো। পানি দাও। গলা শুকনা।’

জয়নাল হামাগুড়ি দিচ্ছে শিশুর মতো। যেন নতুন করে হাঁটা শিখছে।

‘কাছে আসবি না! ছু! যাহ! যাহ!’

‘ও বউ। ডরাইও না। আমি মরা। তুমিও মইরা যাও। মইরা যাবা? আমার খিদা লাগসে। বাতাস খামু, পানি খামু।’

‘তোরে আমার দরকার নাই। তুই মুর্দা। তুই মরা। মরার আবার খিদা কীসের!’

মনোয়ারার মন এখন নিশ্চিত তার সামনের চলমান দেহটা জয়নাল নয়। ওটার মগজে জয়নালেরই স্মৃতি। সে নিজেকে জয়নালই ভাবছে। লাশ মানে লাশ। লাশ কখনও জয়নাল নয়। অথচ লাশটা জানে যে মনোয়ারা তার বউ। ছি! বমি করে দিল মনোয়ারা। দুর্বল শরীরটাকে দাঁড় করিয়ে রাখতেও কষ্ট হচ্ছে খুব।

‘বউ, কাছে আসো। আমারে ধরো। পানি দাও। এট্টু বাতাস দাও।’

‘যাহ যাহ। সর সর!’

জয়নাল তাকাল মনোয়ারার দিকে। চোখে কাতরতা নেই। পাথরের মতো শীতল চোখের মণি।

জিঁয়ৎ কুন্ডুর রেখে যাওয়া ইনজেকশনের বাক্সটা দেখল মনোয়ারা। প্রতি মাসে একটা করে দেওয়ার কথা জয়নালের শিরায়। জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি ঝুলে থাকার জন্য শরীরটাকে অভ্যস্ত করানোর জন্যই এ ইনজেকশন।

উবু হয়ে বাক্সটা তুলল মনোয়ারা। খরচ করেছে পাঁচ লাখেরও বেশি। চুলোয় যাক টাকা। আফসোস হলো না একটুও। বাক্সটা নিয়ে দুই পা এগুলো। ছুড়ল জয়নালের মাথা বরাবর। থপ করে শব্দ হলো। খুলির একপাশ দেবে গেল জয়নালের। ব্যথার চিহ্ন নেই তার মুখে। তবে এ ঘটনায় সায় দিল না জয়নালের একগুঁয়ে মগজ। ঝট করে গায়ে শক্তি গজিয়ে নিল ওটা। উঠে দাঁড়াল ভারী শরীরটা। থপ থপ করে এগিয়ে আসতে লাগল মনোয়ারার দিকে। ওই তার বউ। যে কিনা বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে। যার শরীরে রক্ত আছে। যে রক্তে পানি আছে।

আধিভৌতিক গল্প Bangla Horror Story হরর গল্প

‘কাছে আইস না! আইস না! তুমি মইরা গেছো জয়নাল।’

‘কাছে আসো মনোয়ারা। বাতাস, পানি।’

নাম ধরে বলায় কেঁপে উঠল মনোয়ারা। নড়তে গিয়ে দেখল বেশ কাছে চলে এসেছে জয়নালের শরীরটা। মনোয়ারাকে জড়িয়ে ধরল। তার শরীর থেকে ভুর ভুর করে আসা রাসায়নিকের ঝাঁঝাল গন্ধ মনোয়ারার মাথায় সূঁচের মতো বিঁধতে লাগল। অবশ হয়ে পড়ল গোটা শরীর। জীবন্মৃত জয়নাল কামড় বসাল মনোয়ারার গলায়। মনোয়ারার শ্বাসনালি দিয়েই যেন সে বাতাস নিতে চায়। কাটা গলার ফিনকি দিয়ে তাজা রক্ত এসে জয়নালের মুখে লাগল। জিভ দিয়ে স্বাদ নিতে চাইল। পেল না। মৃত বলে তার স্বাদ নেওয়ার অধিকারটুকু নেই। খেপে গেল জয়নালের অবেলায় জেগে ওঠা মস্তিষ্ক। আরও কামড় বসাল। পেল না বাতাস, পেল না পানির স্বাদ। এরপর জানালা গলে আসা চাঁদের আলোয় পুরোনো আমলের গুদামঘরটার ভেতর মৃত্যু এসে থমকে দাঁড়াল। যেখানে জীবিত ও মৃত; দুজনই অপেক্ষা করছে মৃত্যুর।

Bangla Horror Story হরর গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!