Monday, December 23
Shadow

রোমান্টিক থ্রিলার গোয়েন্দা উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব-৫

রোমান্টিক থ্রিলার গোয়েন্দা উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব-৫

রোমান্টিক থ্রিলার ঘরানার বইটি মধ্যবয়সী পুরুষ তৈয়ব আখন্দকে ঘিরে। জীবন সংসারের প্রতি খানিকটা উন্নাসিক কিন্তু বুদ্ধিমান এ মানুষটা পালিয়ে বেড়াতে চায়। কিন্তু আচমকা টাঙন নদী ঘেঁষা গ্রাম পদ্মলতায় এসে সে আটকা পড়ে চাঁদের আলোয় ঝুলতে থাকা একটা লাশ আর লাবনীর জালে। তৈয়ব নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। চলতে থাকে জড়িয়ে পড়া ও ছাড়িয়ে আনার মাঝে এক সমঝোতা।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প ও একই সঙ্গে থ্রিলার স্বাদের উপন্যাস ছায়া এসে পড়ে । লেখক ধ্রুব নীল

কুরিয়ারে হার্ড কপি পেতে এই পেইজে অর্ডার করুন

 

ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -২  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৩  এর লিংক

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৪  এর লিংক

 

‘নেন স্যার, ভাবীর কল।’

এসআই শামীমের চেহারায় একটা লুকানো আনন্দ আছে। স্ত্রীর সঙ্গে গতরাতে নিশ্চয়ই তার ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়ার আনন্দ উপচে পড়ছে তার নাদুসনুদুস গালে। তাকে দেখে হিংসেই হলো তৈয়বে। ইচ্ছে করছে আবার আঠাশ-উনত্রিশ বয়সে ফিরে যেতে।

তৈয়ব ফোন কানে নিয়ে কিছু বলল না। ওপাশ থেকে মিনুর গলা শুনতেই জবাব দিল।

‘হ্যালো মিনু? তুমি নাস্তা খাইসো?’

‘মুড়ি খাবো বাবা। মুড়ি নিয়া আসো।’

‘তোমার জন্য একটা মুড়ির ফ্যাক্টরি দিবো আম্মা। তুমি হবা ফ্যাক্টরির ম্যানেজার।’

‘ম্যানেজার কী বাবা?’

ফোনটা নিয়ে নিল রেবেকা।

‘তুমি কি আর আসবে না? আরেকটা বিয়ে করেছো?’

‘হ্যাঁ করেছি। মেয়ে তোমার চেয়ে সুন্দরী। অড্রে হেপবার্নের মতো।’

‘মেয়েটা রাতে ঘুমায় না। রাতে তোমার জন্য কান্নাকাটিও করলো। একটু দেখা করে যেও অন্তত।’

‘মিনুকে আমার কাছে দিয়ে যাও। সৎমায়ের সঙ্গে থাকবে। ওর সৎমা খুব ভালো।’

‘ফালতু বক বক করবে না। ফালতু বক বক করলে ঘাড় ধরে জেলে ঢোকাবো।’

‘আমি আর ঢাকা যাব না রেবেকা। তুমি স্বাধীন।’

‘আমি পরাধীন ছিলাম কবে? তুমি শেকল পরিয়ে রেখেছিলে নাকি।’

‘হা হা হা। রেখেছিলাম। তুমি টের পাও নাই। এখন শেকল খুলে দিয়েছি। শেকল খুলে চাবিও ফেলে দিয়েছি।’

‘খুব ভালো করেছো। বিশাল কাজ হয়েছে। এখন মেয়েকে মুড়ি কিনে দিয়ে যাও। তোমার কেনা মুড়ি না পেলে সে খাবে না।’

আবার ধন্দে পড়ে গেলো তৈয়ব। এতো বিভ্রান্তি একসঙ্গে প্রসেস করতে ঝামেলা হচ্ছে।রেবেকার গলা অন্যরকম শোনাচ্ছে। তৈয়বের জন্য তার মনে আবার প্রেমের তলানি জমে নেই তো?

‘শোনো লাবনী, ডিভোর্স কী করে দিতে হয় আমার প্রসেসটা জানা নেই। তুমি তোমার পছন্দের ওই ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেলতে পারো।’

ওপারে কিছুক্ষণ নীরবতা।

‘মেয়ের নাম লাবনী?’

‘মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ব্যাপার না। তুমিও আমাকে অন্য নামে ভুলে ডাকতে পারো। এই যেমন সোহেল, আরিফ বা অন্য কিছু।’

লাইন কেটে গেলো। তৈয়ব শুয়ে থেকেই হাসলো এসআই শামীমের দিকে তাকিয়ে।

‘ভাই তো দেখি ব্যাপক গ্যাঞ্জামে পড়েছেন।’

‘আমি এখন আর ক্ষমতাবান কারো মেয়ের জামাই না।তবে মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। চিন্তার কারণ নাই। মেয়ে আমাকে পছন্দ করে। সে কান্নাকাটি শুরু করলে সাত খুন মাফ।’

‘হা হা হা। আপনে ভাই পারেন। তো গতরাইতে হইসে কি, আমি আপনার কথামতো ঝরনারে কইলাম, আমি তোমারে পছন্দ করি না। আমি আরেকজনরে বিয়া করবো। তুমি মেয়ে ভালো, তাই কষ্ট যাতে না পাও তাই আগেভাগে বললাম। মেয়ের নাম নাজিয়া। সে সদরে থাকে। কথা শুনে ঝরনা প্রথমে কিছুই কইল না। কইল, ঠিক আছে, আমি সতীনের ঘর করবো। তবু আপনারে ছাইড়া যামু না। কী একটা অবস্থা কন তো। লেজের মতো ঝুইলা থাকবে। তবু আমারে ছাড়বে না। আমি কইলাম, নতুন বউ আসলে তোমার দিকে আমি ফিরাও তাকামু না। নতুনটারে নিয়া ব্যস্ত থাকবো। সে চুপ মাইরা গেল। তারপর ঘটনা ঘটল। সে আমারে গায়ের জোরে মারল থাপ্পর। মাইয়া মাইনসের হাতের পুরাটাই হাড্ডি, বুঝলেন। আরেকটু হইলে গালের হাড্ডি ভাঙতো।’

সাসপেন্স তৈরির চেষ্টা করলো শামীম। তৈয়বের আগ্রহ বেড়েছে কিনা পরখ করছে। তৈয়ব শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শামীমের দিকে। শামীমকে অন্যরকম লাগছে। খুশি খুশি। তবে এ খুশিতে কেমন যেন বিষণ্নতার ছাপ।

খুশি ঢাকতে সিগারেট ধরালো শামীম। তৈয়বকে সাধলো। হাত বাড়িয়ে নিলো। আগে খেতো খুব। ইদানীং কমিয়েছিল। অবশ্য এখন রেবেকার মতো সেও স্বাধীন। ইচ্ছামতো খেলেই বা কী।

‘আগুনটা দেন।’

‘তারপর ভাই, আমি তো অবাক। ঝরনা একটা কথাও কইল না। আমারে থাপ্পর থুপ্পুর মাইরা সে পাকের ঘরে গেলো। আমি পড়লাম চিন্তায়। বিছানায় না গিয়া পাকের ঘরে গেল কেন।এরপর সে বাইর হইয়া আসলো বটি নিয়া।’

আবারও সাসপেন্স। সিগারেটে টান দিল দুজনই। ধোঁয়া চলে যাওয়ার জন্য জানালার কপাট খুলে দিল।

‘আমার তো কলিজা গেল উইড়া। দেখি ঝরনা বেগম বটিটা রাখলো দাওয়ায়। রাইতের বারোটায় পাতিল থেইকা জিয়ল মাছ নিয়া শুরু করলো মাছ কাটা।’

‘স্ট্রেঞ্জ! ভেরি স্ট্রেঞ্জ।’

‘রাইতে আর আমার ঘুমই আসলো না। আপনার কথা শোনা ঠিক হয় নাই ভাইজান। বড় চিন্তায় আছি।’

সিগারেটে টান দেওয়ার স্টাইল দেখেও বোঝা যায় কার মনের অবস্থা কেমন। তৈয়বের জন্য রেবেকা কখনই এমন ভালোবাসা দেখায়নি। সে ছিল তার বিজনেস আর মদের বোতল নিয়ে।

রোমান্টিক থ্রিলার উপন্যাস

তৈয়ব উঠে গিয়ে নাস্তা আছে কিনা দেখতে গেলো। রাতেই লাবনী চলে গেছে। তার খোঁজ নেওয়া হয়নি আর। বেঁচেই আছে মনে হয়। মরে গেলে এসআই শামীম তার বাসায় না এসে লোকমান মিয়ার বাড়ি যেত।

তৈয়ব কড়া করে চা বানালো। বয়াম থেকে বিস্কিট নিল। চা-বিস্কিট খেয়ে উঠে পড়লো শামীমের মোটরসাইকেলের পেছনে।

‘চলেন ওস্তাদ। আপনারে এক আজব লোক দেখাই। শহরে এই জিনিস পাইবেন না।’

‘কী দেখাইবেন?’

‘কী না, বলেন কে? সে হইল গাছি রবিউল। ওই বেটা সার্কাস জানে। উল্টা হয়া গাছে উঠবার পারে। আবার উল্টা হয়া বান্দরের মতো ঝুলে ডাবও পাড়ে।’

‘হুম। দেখা দরকার, দেখা দরকার।’

 

গাছি রবিউলকে খুঁজে পাওয়া গেলো না। বাড়িতেও কেউ নেই। একজন বলল সে নাকি লটারি জিতে ঢাকা চলে গেছে। ঘুরাফিরা করবে। তারপর ফিরবে। ঢাকার কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো তৈয়ব। লোকমান তো এখন পদ্মলতা গ্রামে। রবিউলের ঢাকায় কী কাজ?

 

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৬  এর লিংক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!