প্রাচীন মিশরীয়রা বিভিন্ন প্রাণীর পূজারি ছিল। এর মধ্যে কিছু প্রাণীর কদরই ছিল আলাদা।
গুবরে পোকার উপাসনা
মিশরে জনপ্রিয় ছিল গুবরে পোকার কবচ। মিশরীয়রা তখন বিশ্বাস করত, এই পোকার জাদুকরী শক্তি আছে এবং তারা গোবর থেকেই জন্মায়। এ জন্য ওরা এ পোকার পূজাও করত। তারা তখনো জানত না যে, গুবরে পোকাও ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম ফুটেই নতুন পোকা বেরিয়ে আসে। মিশরীয়রা আরও ভাবত, সূর্য হলো দেবতা গুবরে পোকার তৈরি একট বল।
কুমিরের শহর
মিশরের কোকডিলিপিলিস শহরটি ছিল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু, যার মূলে ছিল কুমির দেবতা সোবেক। এখানে তারা একটি কুমির রাখত, যার নাম ছিল সুকুস। বিশ্বের নানা প্রান্তের লোকেরা এখানে আসত সুকুসকে দেখতে। কুমিরটিকে মিশরীয় দামি অলংকারে মুড়ে রাখত। ওটার ২৪ ঘণ্টা দেখাশোনার জন্য থাকত পুরোহিত। লোকজন কুমিরটির জন্য খাবার ও উপহার নিয়ে আসত। মারা গেলে তাকে বীরের সম্মান দেওয়া হতো এবং যথারীতি মমি করে রাখত।
বিড়াল শোকে পাথর
পোষা বিড়াল মারা গেলে কষ্ট তো সবারই লাগবে। তবে প্রাচীন মিশরীয়দের মতো করে শোক পালন করতে এখন আর দেখা যায় না। বিড়ালের মৃত্যুর পরই পরিবারের সবাই ভ্রু কামিয়ে ফেলত। এরপর বিড়ালের দেহটিকে লিনেন কাপড়ে মুড়ে সেডার অয়েল ও আরও অনেক মসলা দিয়ে এমনভাবে মমি করা হতো, যেন তা থেকে সুগন্ধ ছড়ায়। সমাধিতে রেখে দেওয়া হতো দুধ, জ্যান্ত ইঁদুর। একটি-দুটি নয়, মিশরের বিভিন্ন জায়গায় এমন বিড়ালের মমি পাওয়া গেছে প্রায় ৮০ হাজার।
চিতা দিয়ে শিকার
মিশরীয়দের সাহস ছিল প্রশংসা করার মতো। ওরা সিংহ আর চিতাকেও ভয় করত না। এমনকি চিতাবাঘকে ব্যবহার করত শিকার করার জন্য। বিশেষ করে অবস্থাসম্পন্ন প্রাচীন মিশরীয় ও ফারাওদের চিতা পোষার শখ ছিল। রেমেসিস দ্বিতীয় তার প্রাসাদে অনেক সিংহ ও চিতা রাখতেন।
জলহস্তীর জন্য যুদ্ধ
মিশরের বড় একটা যুদ্ধ হয়েছিল দুই ফারাওর মাঝে। সেকেনেনরে তাও নামের এক ফারাওয়ের ছিল একগাদা জলহস্তী। তিনি তাদের এতটাই ভালোবাসতেন যে, তাদের জন্য প্রাণও দিতে পারতেন। সেকেনেনরে ছিলেন মিশরের সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও আপোপির নিয়ন্ত্রণে এবং এ জন্য তাকে নিয়মিত কর দিতে হতো। বাধ সাধল যখন আপোপি বললেন তিনি জলহস্তীর শব্দে ঘুমোতে পারেন না। অথচ আপোপি থাকতেন অন্তত ৭৫০ কিলোমিটার দূরে। সেকেনেনরে বুঝতে পারলেন তার পোষা জলহস্তী নিয়ে স্রেফ মশকরা করছেন আপোপি। সঙ্গে সঙ্গে আপোপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসলেন এবং যথারীতি প্রাণ হারালেন। এখানেই শেষ নয়, জলহস্তী-যুদ্ধের ধারাবাহিকতা টেনে নিয়েছেন সেকেনেনরের ছেলেও।
পোষা হায়েনা
এখন বনে-জঙ্গলে ভয়ানক শিকারির তকমা জুটলেও পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরীয়রা ঘরেই রাখত হায়েনা। প্রাচীন কিছু চিত্রে দেখা গেছে ৪৮০০ বছর আগেও হায়েনা দিয়ে শিকার করত ওরা। অবশ্য হায়েনার স্বভাবের কারণে বেশিদিন আর সেগুলোকে রাখেনি মিশরীয়রা। খুব দ্রুতই তাদের জায়গা দখল করে নেয় কুকুর আর বিড়াল।