শিশুর জ্বর হলে যা করতে হবে
১। শরীরের জামা-কাপড় খুলে ফেলা এবং ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।
২। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি নিয়ে প্রতিদিন স্নান বা গোসল করা। মনে রাখা উচিত যে, শিশুর জ্বর হলে প্রথম ও মূল ওষুধ হচ্ছে ‘পানি’। তাই জ্বর হলে একটি পরিষ্কার তোয়ালে গামছা বা অন্য কোন সূতী কাপড় পানিতে ভিজিয়ে পানি নিংড়ে ফেলে দিয়ে ওই ভেজা কাপড় দিয়ে পর্যায়ক্রমে কপাল, বুক, পেট, পিঠ, হাত ও পা বারবার মুছাতে হয়।
যদি শরীরের তাপমাত্রা ১০২ ফারেনহাইটের বেশি হয় তাহলে শরীর স্পঞ্জ করার পাশাপাশি বেশ কিছুক্ষণ মাথায় পানি ঢালতে হয় এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিক মাত্রায় না কমা পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে হয়। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ১৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট যা থার্মোমিটার দিয়ে মাপতে হয়। মাথায় পানি ঢালার সময় খেয়াল রাখতে হয় যাতে কানে পানি না যায় এবং জ্বর কমে যাওয়ার পর শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা ও চুল ভালভাবে মুছে দিতে হয় যেন ভিজা চুল বেশিক্ষণ থেকে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে না যায়।
এখানে জেনে রাখা ভাল যে, শীতকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে মাথা ধোয়ানো ও শরীর-হাত-পা স্পঞ্জ করা উচিত। কারণ এতে একদিকে যেমন রোগী আরামবোধ করে অন্যদিকে কুসুম গরম পানির প্রভাবে রক্তবাহী শিরা উপশিরা প্রসারিত হওয়ায় শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়।
৩। স্পঞ্জ করার পরও শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের অধিক হলে প্যারাসিটামল সিরাপ কিংবা সাপোজিটরি শিশুর ওজন অনুযায়ী এর মাত্রা নির্ধারণ করে তারপর তা ব্যবহার করা। নিম্নে প্যারাসিটামল ওষুধের পরিমাণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলঃ
শিশুর জ্বর : তাপমাত্রা ১০০-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলেঃ
- ১ বছর পর্যন্ত শিশুকে আধা হতে ১ চামচ প্যারাসিটামল সিরাপ দৈনিক ৩-৪ বার খাবার পর খাওয়ানো।
- ১ হতে ৫ বছর বয়সী শিশুকে ১-২ চামচ প্যারাসিটামল সিরাপ দৈনিক ৩-৪ বার খাবার পর খাওয়ানো।
শিশুর জ্বর : তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের অধিক হলেঃ
এ সময় শিশুকে মুখে না দিয়ে বরং তার পায়খানার রাস্তা দিয়ে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করা ভাল। এর মাত্রা হল
- ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে ১২৫ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল সাপোজিটরি।
- ২ বছরের অধিক শিশুকে ২৫০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল সাপোজিটরি।
জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম হলে পুনরায় একই নিয়মে শিশুকে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো যায়। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা যাতে ১০২ ডিগ্রী ফারেনহাইটের অধিক না হয় এর ফলে তার ‘খিচুনীর’ মত ভয়াবহ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব, জ্বরজনিত খিচুনী প্রতিরোধের প্রধান দুটি উপায় হল ।
ক। পানি
খ। প্যারাসিটামল ওষুধ।
৪। জ্বরের সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার যেমন লেবুর সরবত, আনারস, কমলা, পেয়ারা, জাম্বুরা ইত্যাদি এবং ভাত, কলা, ডাব, গ্লুকোজসহ রুচী অনুযায়ী পুষ্টিদায়ক সব খাবার ইচ্ছামত নির্ভয়ে খাওয়া।
শিশুর জ্বর হলে যা করা যাবে না
১। শরীরে কম্বল, কাঁথা, লেপ ইত্যাদি গরম কাপড় চাপানো।
২। জণ্ডিসের কারণে জ্বর হলে সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়া।
শিশুর জন্ডিস হলে কী করবেন?