যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, সবই চলে আসতে পারে তোমার হাতের মুঠোয়, যদি মডেলিংকে পেশা হিসেবে বেছে নাও। যদি তোমার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে এক্স ফ্যাক্টর থাকে, বা সোজা কথায়, দেখতে, শুনতে, চলনবলন বা ঠাঁট-ঠমকে যদি তোমার জুড়ি মেলা ভার হয়ে থাকে, তবে এই পেশা তোমার জন্য একেবারে আদর্শ। এক বলিউড ছাড়া এইরকম আকাশছোঁয়া খ্যাতি এবং লক্ষ্মীলাভের সম্ভাবনা এদেশে খুব কম পেশাতেই রয়েছে।
তবে এই পেশাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতা প্রবল। তার প্রধান কারণ যে গ্ল্যামার জগতে সুযোগ পাওয়ার স্বপ্ন দেখার পাবলিকের অভাব না থাকলেও, ভাল কাজের সুযোগ সে তুলনায় যথেষ্ট কম রয়েছে! তাই রূপ এবং প্রতিভা, এই দুটোয় উতরে গেলেও সাফল্যের জন্য ধৈর্য এবং অধ্যবসায়, এই দুয়ের চর্চা করতেই হবে।
এই পেশার যেমন কিছু সুবিধে রয়েছে (আগেই বলা হয়েছে যে আর পাঁচটা পেশার তুলনায় এই পেশায় অপেক্ষাকৃতভাবে বেশ তাড়াতাড়িই নাম এবং পয়সা কামানোর সুযোগ রয়েছে), তেমনই রয়েছে বেশ কিছু খামতিও। যেমন এই পেশার অনিশ্চয়তা শেয়ার মার্কেটকেও হার মানায়। কতটা তুমি উন্নতি করতে পারবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে তোমার ভাগ্যের উপর। তার উপর অন্যান্য পেশার মতো এই পেশায় ঢোকার নির্দিষ্ট কোনও ক্রাইটেরিয়া না থাকায়, তুমি কতটা উন্নতি করতে পারবে তার অনেকটাই নির্ভর করবে তোমার নেটওয়ার্কিং ক্ষমতার উপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তেমন চেনা-পরিচিতি না-থাকলে, এই পেশায় উন্নতি করা কঠিন। তা ছাড়াও, এই পেশায় ভাল সুযোগ পাওয়ার আশায়, অগুনতি ছেলেমেয়ে প্রতারণার শিকার হয়। কাজে উন্নতি করার চেষ্টার সঙ্গে-সঙ্গে নিজেকে বাঁচিয়েও চলতে হবে। সব শেষে, এই পেশায় শেল্ফ লাইফ কম। অন্যান্য পেশায় দিব্যি পায়ের উপর পা তুলে ষাট বছর অবধি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই পেশায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বই কী! এই প্রফেশনে তুমি ততদিনই থাকতে পারবে, যত দিন তোমার রূপ-যৌবন রয়েছে (কিংবা যদি তুমি অমিতাভ বচ্চনের মতো চিরযুবা হয়ে থাকো)! এবার চলো জেনে নিই মডেলিং সম্পর্কে আরও কিছু খুঁটিনাটির কথা।
কাজের সুযোগ
মূলত দুই প্রকারের কাজে ব্যবহার করা হয় মডেলদের—
র্যাম্প: প্রায় সমস্ত মডেলদের ‘ড্রিম জব’ এটি। তাবড়-তাবড় ফ্যাশন ডিজ়াইনারদের ফ্যাশন শোয়ে র্যাম্পে হাঁটা অনেক মডেলের কাছে স্বপ্ন। কিন্তু সুপারমডেল আখ্যা অর্জন না-করলে র্যাম্পে হাঁটার সুযোগ পাওয়া মুশকিল! এই ফ্যাশন শোয়ে মডেলরা মূলত ফ্যাশন ডিজ়াইনারের ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি হয়।
বিজ্ঞাপন : মডেলদের জন্য আর-একটি জনপ্রিয় কাজের ক্ষেত্র হল বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন ধরনের প্রডাক্ট লঞ্চ করবার জন্য, নানা ধরনের পত্রপত্রিকার জন্য মডেলদের ব্যবহার করা হয়। খুব উঁচুদরের মডেল বা সুপারমডেল হলে নামীদামি ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠতে পারবে তুমি। এর জন্য অবশ্য ভাল চেহারা ছাড়াও অল্পস্বল্প অভিনয় ক্ষমতা থাকা জরুরি। বিজ্ঞাপনে, বিশেষত টিভি বিজ্ঞাপনে তুমি যত দক্ষতার সঙ্গে নানা অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে পারবে, ততই বিজ্ঞাপনটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। পরবর্তীকালে যদি অভিনয় জগতে পা রাখার ইচ্ছা থাকে, তা হলে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করাটা একটা মূল্যবান অভিজ্ঞতা হবে। তা ছাড়াও, বিজ্ঞাপনে যদি নিজের ক্যারিশমা দেখাতে পার, তা হলে টিনসেল টাউনের কোনও প্রযোজক বা পরিচালকের চোখে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি!
এছাড়াও বড় পরদা বা ছোট পরদায় অভিনয় করবার সুযোগ, টক শো হোস্ট করবার কাজেরও সুযোগ করে দিতে পারে মডেলিং।
দক্ষিণা : সাধারণত যে-কোনও সৃজনশীল পেশার মতোই, এই পেশাতেও কোনও বাঁধাধরা বেতন নেই। তোমার উপার্জন ক্ষমতা বা বাজারদর নির্ভর করবে, মডেল হিসেবে তুমি কতটা সফল। একবার সুপারমডেল পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সাধারণত আকাশছোঁয়া দর হাঁকতে পারবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছে সুপারমডেলদের সম্পদ হিসেবেই গণ্য করা হয়। সাধারণত ছোট এবং মাঝারি মাপের মডেলের দক্ষিণা প্রতিটি সিটিং বা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য মোটামুটি দশ হাজার থেকে দু’লাখ পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে। সুপারমডেল হলে অবশ্য পোয়াবারো! সেক্ষেত্রে তোমার বাজারদর হতে পারে আকাশছোঁয়া! বড়-বড় সুপারমডেল যেমন ক্যারল গ্রেসিয়াস, ভূমিকা আরোরা-রা কিন্তু দক্ষিণার দিক থেকে বলিউডের তাবড়-তাবড় সেলেবদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেন! কিন্তু আগেই বলা হয়েছে যে এই পর্যায়ে পৌঁছনোর জন্য প্রতিভা এবং অধ্যবসায় ছাড়াও চাই কপালের জোর!
কী করণীয়
সঠিক এজেন্সি বাছা : আগেই বলা হয়েছে যে এই পেশায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। সুতরাং নিজের মঙ্গলের জন্য গোড়া থেকে নামজাদা কোনও মডেলিং এজেন্সির সঙ্গে কাজ করাই ভাল। মডেলিং এজেন্সির সঙ্গে কাজ করার অনেকগুলো সুবিধে রয়েছে। প্রথমত, জনপ্রিয় কোনও এজেন্সির সংস্পর্শে এলে ভাল কাজ করার সুযোগও বাড়বে। তা ছাড়া তুমি যাতে কোনওরকম অন্যায় বা প্রতারণার শিকার হয়ে না পড়ো, এবং প্রাপ্য দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত না হও, সেদিকেও খেয়াল রাখবে এই সমস্ত এজেন্সি।
একটি আকর্ষণীয় পোর্টফোলিও তৈরি করা : মডেলিং জগতে ফ্রেশার হিসেবে পোর্টফোলিও হচ্ছে তোমার পরিচয়পত্র। তুমি কতটা ফোটোজেনিক, তোমার মধ্যে এক্স ফ্যাক্টর রয়েছে কি না, তা তোমার পোর্টফোলিওই বলে দেবে। এর জন্য অবশ্য দক্ষ এবং নামজাদা কোনও ফোটোগ্রাফারকে পাকড়াও করতে পারলে তোমার পোয়াবারো।
ট্রেনিং করবে কোথায়?
মডেলিং কেরিয়ারে উন্নতির জন্য যেটি সবচেয়ে জরুরি, সেটা হচ্ছে এক্স ফ্যাক্টর। এই ‘এক্স ফ্যাক্টর’ একটি ভগবানদত্ত গুণ, যা হাতে-কলমে শেখানো যায় না। তবুও কেরিয়ারের গোড়ার দিকে কী-কী করণীয়, সে ব্যাপারে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে মডেলিং ট্রেনিং সংস্থাগুলোর কোর্স থেকে। কলকাতায় যশ মডেলস, এসএমপিআইএ ( সম্রাট মডেলিং অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস প্রাইভেট লিমিটেড)-এর মতো নানা সংস্থায় মডেলিংয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়।