Monday, December 23
Shadow

অন্য পৃথিবীগুলো আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে

অন্য পৃথিবীগুলো আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে

যে স্পিডে পৃথিবী ধ্বংসের পথে যাচ্ছে, তাতে অন্য গ্রহে জমি কেনা ছাড়া কোনও উপায় আছে বলে তো মনে হয় না। কিন্তু কোথায় হবে মানুষের পরের বাসস্থান? এই প্রশ্ন যখন বিজ্ঞানীদের মনে ঝর তুলেছে, ঠিক তখনই সন্ধান মিলল পৃথিবীর মতোই দেখতে আরও বেশ কিছু গ্রহের, যেখানকার প্রকৃতি এবং পরিবেশ অনেকটাই নীল গ্রহের মতই। তাই তো আজকের এই প্রবন্ধে পৃথিবীর ৬ টি ভাই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

চেষ্টা করা হবে “এলিয়ান আর্থ”এর সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরার, যা পড়তে পড়তে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য! এই মহাবিশ্বে পৃথিবীর মতো আরও কোনও গ্রহ আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে বহু আগে থেকেই তৎপর ছিলেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। এই বিষয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন তারা। প্রথম দিকে সেভাবে সাফল্য না এলেও ধীরে ধীরে নানা তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছিল, যা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে এই ইউনিভার্সে সূর্যের মতো একাধিক নক্ষত্র রয়েছে, যার কয়েকটি তো সূর্যের থেকেও কয়েক গুণ বড়। শুধু তাই নয়, সেই সব সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে একাধিক গ্রহও, যার মধ্যে বেশ কতগুলি একেবারে পৃথিবীর মতই। অন্য নাসার “কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ”এ এইসব তথ্য ধরা পরছিল।

বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে পৃথিবীর ভাইদের সন্ধান পাচ্ছিল। কিন্তু সেগুলো আদৌ বসবাসের যোগ্য কিনা, সে সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল। তাই চেষ্টা থেমে যায়নি। বরং আরও জোর কদমে শুরু হয়েছিল প্রয়াস। আর এমনটা করতে গিয়ে সম্প্রতি যে তথ্য উঠে এসেছে, তা বাস্তবিকই চমকপ্রদ! কী সেই তথ্য? কেপলার টেলিস্কোপ বহুদিন ধরেই গ্যালাক্সির অন্তর্গত বেশ কিছু গ্রহের উপর নজরদারি চালাচ্ছিল। এমনটা করতে গিয়ে পাহাড় ঘেরা ছটি গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়, যার প্রকৃতি একেবারে পৃথিবীর মতোই। শুধু তাই নয়, সেই ছটি গ্রহের পরিবেশও এমন যে সেখানে প্রাণের সন্ধানও মিলতে পারে বলে ধারনা বিজ্ঞানীদের।

এতদিন পর্যন্ত পৃথিবীর মতো দেখতে অনেক গ্রহের সন্ধান মিললেও পরিবেশগত দিক থেকে এতটা কাছাকাছি কোন গ্রহের আবিষ্কার ছিল এই প্রথম। তাই তো বিজ্ঞানীর আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন, হয়তো এমন কোনও দিন আসবে, যেদিন পৃথিবীর বাসিন্দারা বিনা বাঁধায় গিয়ে ঘর বাঁধতে পারবে এলিয়ান আর্থ নামে পরিচিত সেই ছটি গ্রহে। কেমন এই ছটি গ্রহ? চলুন সুলুক সন্ধানে নামা যাক।

১. গ্লিসা ৬৬৭সিসি:

১. গ্লিসা ৬৬৭সিসি: খালি চোখের সীমানার বাইরে বহু দূরে পৃথিবীর মতোই একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। যার নাম দেওয়া হয়েছে গ্লিসে ৬৬৭সি সি। প্রায় ২২ আলোকবৃত্ত দূরে অবস্থান করা এই গ্রহটিকে আবিষ্কার করেছিলেন জার্মান অ্যাস্ট্রোনমার বিলহ্যাম গ্লিসা। তার নামানুসারেই এই গ্রহটির নামকরণ করা হয়।  দূর থেকে আকার ছোট মনে হলেও পৃথিবীর এই ভাইটি, নীল গ্রহের থেকে প্রায় ৪.৫ গুণ বড়। পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রহটির তাপমাত্র পৃথিবীর থেকে অনেক ঠান্ডা এবং যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে এই গ্রহটি ঘুরছে তাকে প্রদক্ষিণ করতে গ্লিসা ৬৬৭সিসি-এর সময় লাগে মাত্র ২৮ দিন। যেখানে সূর্যকে এক চক্কর লাগাতে পৃথিবীর সময় লেগে যায় প্রায় ৩৬৫ দিন।

২. কেপলার৬৯সি:

পৃথিবীর থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ বড় এই গ্রহটি প্রায় ২৭০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তাই তো এখানকার পরিবশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও সেভাবে জেনে উঠতে পারেননি। কারণ নাসার অধিনে যে যে টেলিস্কোপগুলি আছে, সেগুলি এতটাও শক্তিশালী নয় যে এতদূরের কোনও গ্রহের আবহাওয়া সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না মহাকাশ বিজ্ঞানীরা গবেষণা থামিয়ে দিয়েছেন। তাদের ধারণা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কেপলাপ ৬৯সি সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানতে পারবেন তারা।  সূর্যের থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যতটা, ঠিক ততটা না হলেও মূল নক্ষত্র থেকে অনেকটাই দূরে আবস্থিত পৃথিবীর এই ভাই। কারণ কেপলার ৬৯সি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে, তাকে প্রদক্ষিণ করতে কেপলারের সময় লাগে প্রায় ২৪২ দিন।

৩. কেপলার ২২বি:

প্রায় ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটি পৃথিবীর থেকে প্রায় ৩ গুণ বড়। তবে গ্রহটির পরিবেশ কেমন, তা আদৌ মানুষের বাসযোগ্য কিনা, সে সম্পর্কে যদিও সবটুকু জেনে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত, বিজ্ঞানী মহলে “সুপার আর্থ” নামে খ্যাত এই গ্রহটি তার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় কম-বেশি প্রায় ২৯০ দিন।

৪. কেপলার ৬২এফ:

১২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটি পৃথিবীর থেকে ৪০ শতাংশ বড় এবং এখানকার পরিবেশও অনেক ঠান্ডা। তাই তো বিজ্ঞানীরা কোনও কোনও সময় মজা করে বলেন পৃথিবীর জনসংখ্যা যতই বেড়ে যাক না কেন, তা নিয়ে কেপলার ৬২ এফ একেবারেই চিন্তিত নয়! প্রসঙ্গত, কেপলার ৬২এফ তার নক্ষত্রকে এক পাক দিতে সময় নেয় প্রায় ২৬৭ দিন।

৫. কেপলার ১৮৬এফ:

বাকি ভাইদের থেকে এই গ্রহটি বড়ই ছোট। পরীক্ষা করে দেখা গেছে পৃথিবীর থেকে কেপলার ১৮৬এফ কেবল ১০ শতাংশ বড়। অন্য, তবে আশার কথা হল এখানকার পরিবেশ যেমন ঠান্ডা, তেমনি বসবাসের যোগ্যও বটে। তাই যে কোনও সময় এই গ্রহে যে প্রাণের সন্ধান মিলতে পারে, সে বিষয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানী মহল।

৬. কেপলার ৪৫২বি:

গত মাসেই এই গ্রহটির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির দিক থেকে এই গ্রহটি একেবারে পৃথিবীর মতোই। এক কথায় পৃথিবীর জমজ ভাই হল কেপলার ৪৫২বি। প্রসঙ্গত, ১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৬ গুণ বড় এবং এর সূর্যের আকার একেবারে আমাদের সূর্যের মতোই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!