class="post-template-default single single-post postid-10443 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

চার্লস ডিকেন্স কাজ করতেন জুতা পলিশ করার রঙের কারখানায়

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কাজ করতেন রুটির দোকানে। আর চার্লস ডিকেন্স কাজ করতেন জুতা পলিশ করার রঙের কারখানায়। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১২ বছর।

১৮১২ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি। ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ শহরের পোর্টসির ল্যান্ডপোর্টে জš§ তাঁর। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। মা এলিজাবেথ ডিকেন্স আর বাবা জন ডিকেন্স। চার্লসের জšে§র কিছুদিন পরই ব্ল–মসবারির নরফোক স্ট্রিটে চলে আসে পরিবারটি। অল্প কিছুদিন পর কেন্টের চাতামে আস্তানা গাড়ে ডিকেন্স পরিবার। চার্লসের শৈশব কাটে এখানেই। এখানকার উইলিয়াম গিলস স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়াও করেন।

১৮২২ সালে হঠাৎ করেই কেন্টের ক্যামডেন শহরে চলে যায় পরিবারটি। বাবা ছিলেন নৌ বিভাগের কেরানি। অভাব-অনটন লেগেই থাকত। অভাবের কারণে প্রচুর দেনা হয়ে যায় বাবা জনের। দেনার দায়ে ১৮২৪ সালে যেতে হয় জেলে। বন্দি হন মার্শালসি জেলখানায়। স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় চার্লসকে। কাজ নিতে হয় হাঙ্গারফোর্ড স্টেয়ারে অবস্থিত ওয়ারেন ব্ল্যাকিং ওয়্যারহাউস নামের জুতা পলিশের কারখানায়। কারখানাটি চ্যারিং ক্রস রেলস্টেশনের কাছেই। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কাজ ছিল জুতা পলিশের বোতলে লেবেল লাগানো। মজুরি সপ্তাহে ছয় সিলিং। কারখানার কঠোর পরিশ্রম আর নির্মম ব্যবহার গভীর প্রভাব ফেলে শিশু চার্লসের মনে। তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তাঁর উপন্যাসগুলোতে।

কেমন করে ওই বয়সে অমন একটা জায়গায় খুব সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন, বড় হওয়ার পর নিজেই অবাক হয়েছেন চার্লস ডিকেন্স। কারখানাটি ছিল খুব পুরনো একটা বাড়িতে। বাঁ পাশের একেবারে শেষের বাড়ি ছিল ওটা। মেঝের কাঠ পঁচে গিয়েছিল। মেঝেজুড়ে ইঁদুরের উৎপাত। এর মধ্যেই ছাপানো লেবেল লাগাতে হতো জুতা পলিশের রঙের বোতলে।

হঠাৎ করেই একটা ঘটনা ঘটে যায় চার্লসের জীবনে। আর সেটাই তাঁকে মুক্তি দিল কারখানার বন্দিজীবন থেকে। বাবা জন ডিকেন্সের দাদি মারা যান। তাঁর কাছ থেকে পান ৪৫০ পাউন্ড। তখনকার দিনে অনেক টাকা। ওই টাকা থেকে দেনা শোধ করেন জন ডিকেন্স। মুক্তি পান জেলখানা থেকেও। আবার স্কুলে ভর্তি হলেন চার্লস। ওয়েলিংটন হাউস একাডেমীতে। কিন্তু স্কুল ভালো লাগল না তাঁর। অগোছালো পড়াশোনা, নিয়মানুবর্তিতার অভাব আর প্রধান শিক্ষকের নির্মম শাস্তিÑমেনে নিতে কষ্ট হতো তাঁর।

১৮২৭ সালের মে মাসে হলবর্ন কোর্টে জুনিয়র কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেন চার্লস। পরের বছরের নভেম্বরে ছেড়ে দিলেন। স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পড়াশোনা করলেন, প্রশিক্ষণ নিলেন।

১৮৩৩ সালে প্রথম গল্প লিখলেন চার্লস ডিকেন্স। আ ডিনার অ্যাট পপলার ওয়াক শিরোনামে। ছাপা হলো লন্ডনের মান্থলি ম্যাগাজিনে। পরের বছর মর্নিং ক্রনিকল পত্রিকার হয়ে শুরু করলেন সাংবাদিকতা। ১৮৩৬ সালের মার্চ থেকে শুরু করলেন উপন্যাস দ্য পিকউইক পেপারস।

বইয়ের প্রতি ভীষণ টান ছিল তাঁর। ৯ বছর বয়সেই পড়ে ফেলেন ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত লেখকদের বই। মায়ের কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি। সিঁড়িঘরে বাবা জনের একটা ছোটখাটো বইয়ের সংগ্রহ ছিল। বইগুলোর মালিকানা নিয়ে নিলেন চার্লস। এ মালিকানা নিয়ে বাড়ির কেউ কখনোই ঝামেলা করেনি। ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত লেখকরা তো ছিলেনই, আরো ছিল অ্যারাবিয়ান নাইটস আর জিনির গল্প। ছোট্টটি থাকতেই এত ভারি ভারি বই পড়তেনÑবড় হয়ে বিষয়টি ভাবতেই ভীষণ অবাক হতেন। আর দুনিয়ার মানুষ এখন অবাক হয় অলিভার টুইস্ট, নিকোলাস নিকলবি, ডেভিড কপারফিল্ড, দ্য টেল অব টু সিটিজ, দ্য গ্রেট এক্সপেকটেশান্স, ক্রিসমাস ক্যারল পড়ে। কেমন করে এসব লিখলেন চার্লস জন হাফম্যান ডিকেন্স! চার্লস ডিকেন্স নামেই যিনি খ্যাত।

অনেক জনপ্রিয় চরিত্র সৃষ্টি করেছেন চার্লস ডিকেন্স

অলিভার টুইস্ট

শিশুসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর অন্যতম অলিভার টুইস্ট। ছেলেটার মা-বাবা ছিল না। ৯ বছর বয়স পর্যন্ত কেটেছে এতিমখানায়। এসব জায়গায় যা হয়, কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে শৈশব। ছোট শিশুগুলোকে খাবার দেওয়া হতো যৎসামান্য। এ রকমই একদিন রাতের খাবারে পাতে কম খাবার দেখে ছোট্ট অলিভার বলেছিল, ‘দয়া করুন স্যার, আমি আরো কিছু পেতে পারি?’ পাঠকদের কাছে অলিভারের এই মায়াভরা উক্তি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। স্বভাবতই তাঁরা চাইবেন, অলিভার টুইস্ট গল্পের ইতিবাচক সমাপ্তি। পাঠকদের নিরাশ করেননি ডিকেন্স। গল্পের শেষে ‘অতঃপর অলিভার টুইস্ট সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।’

ডেভিড কপারফিল্ড

জšে§র ছয় মাস আগে বাবাকে হারালেও শৈশবটা ভালোই কাটছিল ডেভিড কপারফিল্ডের। যন্ত্রণার শুরু হলো সৎ বাবা এডওয়ার্ড মার্ডস্টোন আসার পর থেকে। সে শিশুদের ভারি অপছন্দ করত। তাই সলাপরামর্শ করে ডেভিডকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো বোতলের কারখানায় কাজ করতে। গল্পের পরবর্তী অংশে ডেভিডের কঠোর জীবন আর সততার কথাই উঠে এসেছে। একসময় সব ছেড়ে সে লেখালেখি আরম্ভ করে। আর তাতেই আসে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অনেকে মনে করেন, ডেভিড কপারফিল্ডের আড়ালে নিজের জীবনটাই সবার সামনে তুলে ধরেছেন লেখক ডিকেন্স।

স্যাম ওয়েলার

দ্য পিকউইক পেপারস নামের একটি উপন্যাস তখন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। লেখক আনকোরা, এটি মাত্র তাঁর প্রথম উপন্যাস। তাই পাঠকের দৃষ্টি কাড়তে ব্যর্থ হচ্ছিল এটি। একপর্যায়ে তাই স্যাম ওয়েলার চরিত্রটিকে গল্পে নিয়ে এলেন লেখক। এই কৌতুকধর্মী চরিত্র বিখ্যাত করে ডিকেন্সকে। আর স্যামের জন্য তাঁর প্রথম উপন্যাসটিও বেশ ভালো বাজার পেয়ে যায়।

এবেঞ্জার স্ক্রুুজ

১৮৪৩ সালে প্রকাশিত ক্রিসমাস ক্যারল গল্পের প্রধান চরিত্র ছিল এবেঞ্জার স্ক্রুজ। প্রথমদিকে সে ছিল দয়ামায়াহীন, কৃপণ ও লোভী মানুষ। চরিত্রের এ দিকটি থেকে ইংরেজি অভিধানে কৃপণতার একটি প্রতিশব্দই হয়ে গেছে স্ক্রুজ! স্ক্রুজ যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বাসিন্দা। গরিবদের দুই চোখে দেখতে পারত না। ভাবত, এরা না থাকলে দুনিয়াটা বেশ হতো। ক্রিসমাসের দিনটিতে কাউকে আনন্দ করতে দেখলে সে ভারি নাখোশ হতো। পরে তিনটি কাল্পনিক চরিত্র ক্রিসমাস ঘোস্টের বদৌলতে তার স্বভাব পাল্টে যায়।

মাদাম দোফার্জ

চার্লস ডিকেন্স এ চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন অলিভার টুইস্টের সব বিপরীত দিক একত্রিত করে। এ টেল অব দ্য টু সিটিজে দেখা মিলবে অপকর্মের শিরোমণি মাদাম দোফার্জের। কয়েক প্রজš§ আগে ঘটে যাওয়া এক বিবাদের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সব সময় পথ খুঁজত সে। মিথ্যা অপপ্রচার করে নিরীহদের শূলে চড়ানোর ব্যবস্থা করত। তাদের নাম আবার লিখে রাখত সুঁই-সুতায়। ডিকেন্সের গল্পের নিয়মানুযায়ী শেষ পর্যন্ত মন্দের হার অবশ্যম্ভাবী। মাদাম দোফার্জকে মরতে হয়েছিল নিজেরই পিস্তলের গুলিতে।

এস্তেলা ও মিস হাভিশাম

এস্তেলা ছিল মিস হাভিশামের পালিত কন্যা। মিস হাভিশাম একদম ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। পরে বাবার বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বড় হয়ে কম্পেসন নামের এক তরুণকে ভালো লেগে যায়। বিয়ের কথাও পাকাপাকি করে ফেলেন দুজন। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে বিয়ে করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন কম্পেসন। এ ঘটনায় হাভিশাম এত কষ্ট পান যে বাসার সব ঘড়ি সে সময়ে বন্ধ করে দেন। বিয়ের পোশাক আর কোনো দিনই পাল্টাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের কেকটাও টেবিলে পড়ে ছিল না খাওয়া অবস্থায়। খুব কম মানুষের সঙ্গেই তিনি দেখা করতেন। অনেক পরে তাঁর আইনজীবীর পরামর্শে তিনি এস্তেলাকে দত্তক নেন।

এস্তেলা চরিত্রটি না ভিলেন, না ভালো মানুষ। তার চরিত্রে অদ্ভুত এক ধরনের কাঠিন্য ছিল। ছোটবেলা থেকে মিস হাভিশামের বদ্ধ বাড়িতে বেড়ে উঠতে উঠতে তার স্বভাব কেমন যেন শীতল হয়ে গিয়েছিল। তাই নেতিবাচক অনেক কাজ করলেও পাঠকের ঘৃণা না হয়ে বরং করুণার পাত্র এস্তেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!