থাপত্য চিন্তায় অপরূপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন ও অন্যতম এক বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের পুরো এলাকা জুড়ে সবুজের সমাহার। মতিহারের সবুজ চত্ত্বর শুধু লেখাপড়া, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, মুক্ত চিন্তার জন্য বিখ্যাত নয়, এর সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম এক সুন্দর নিদর্শন হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ।
অবস্থান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক পেরুতেই জোহা চত্বর দেখা যায়। জোহা চত্ত্বর থেকে পূর্ব দিকের রাস্তায় কিছু কিছুদূর এগোতেই ডান দিকে চোখে পড়বে মুসলিম স্থাপত্যের আদলে নির্মাণ করা সুউচ্চ নীল মিনার।
মসজিদের পূর্ব দিকে আছে শেরে বাংলা হল, উত্তর দিকে রাবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুক্তমঞ্চ এবং পশ্চিমে শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী প্রশাসন ভবন।
জায়গার বিবরণ: মসজিদের আঙিনাকে মূল ক্যাম্পাস থেকে পৃথক ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউগাছ ও বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ। বাহারি ধরনের ফুলগুলো মুসল্লীদের বাড়তি আনন্দ দিয়ে থাকে, বিশেষ করে বসন্তকালে ফুলগুলো সকল মুসল্লির মন কাড়ে। এ ছাড়া রয়েছে হরেক রকমের ফলের গাছ।
নির্মাণ: ১৯৭০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রায় তিন একর জায়গায় এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের নকশা প্রণেতা ‘থারিয়ানীর’ নকশার আলোকে এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে।
অবকাঠামো: মসজিদটির মূল কাঠামোর দৈর্ঘ্য ৫২ গজ ও প্রস্থ ৫২ গজ এবং বারান্দা ও বারান্দার বাইরের যে অংশ রয়েছে তা মূল কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ । মূল কাঠামোর মধ্যবর্তীস্থানে ওপরের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালাকার গম্বুজ। সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হলোসুবিশাল অভ্যন্তরীণ এই মসজিদের জায়গায় নেই কোনো পিলার। মসজিদটি বাইরের দিকে নীলসাদা রং করা। ভিতরে গম্বুজে রয়েছে শ্বেত-শুভ্র ঝাড়বাতি। মুল কাঠামোটি শীততাপনিয়ন্ত্রিত এবং মেঝে শ্বেতপাথরের টাইলস করা এবং বাইরের অংশের মেঝে মোজাইক করা।
ধারণক্ষমতা: মূল ভবনের অভ্যন্তরে ধারণক্ষমতা প্রায় ৫০০ মুসল্লি। তবে বাইরের ফাঁকা জায়গাসহ এই মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
এছাড়াও জানাজা ও ঈদের নামেজের জন্য মাসজিদে সামনে অর্থাৎ পূর্ব দিকে সুবিশাল জায়গা আছে।
মসজিদের দক্ষিণ পাশে ফোয়ারা, ওজুখানা, অফিসরুম ও শৌচাগার। দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রয়েছে পেশ ইমামের বাংলো। অজুখানার পাশেই রয়েছে সমৃদ্ধ পাঠাগার, যেখানে হাজার হাজার ইসলামিক বইয়ের সংগ্রহ আছে । পাঠাগারটি মুসল্লিদের জন্য আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খোলা থাকে।
অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতায় এবং স্থাপত্য চিন্তায় অপরূপ এই মসজিদ। শিল্পের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে এই অনন্য সৌন্দর্যের স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনন্য এক স্থাপনা।
শিক্ষক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী সাবই একসাথে পাশাপাশি সালাত আদায়ে সবার সাথে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বেড়ে যায়।
~মো: আরিফুল ইসলাম
ফার্মেসী বিভাগ,
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ এবং
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক, ফোরাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।