Sunday, December 22
Shadow

রোমান্টিক-থ্রিলার গোয়েন্দা উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব-২

রোমান্টিক-থ্রিলার গোয়েন্দা উপন্যাস: ছায়া এসে পড়ে পর্ব-২

রোমান্টিক থ্রিলার ঘরানার বইটি মধ্যবয়সী পুরুষ তৈয়ব আখন্দকে ঘিরে। জীবন সংসারের প্রতি খানিকটা উন্নাসিক কিন্তু বুদ্ধিমান এ মানুষটা পালিয়ে বেড়াতে চায়। কিন্তু আচমকা টাঙন নদী ঘেঁষা গ্রাম পদ্মলতায় এসে সে আটকা পড়ে চাঁদের আলোয় ঝুলতে থাকা একটা লাশ আর লাবনীর জালে। তৈয়ব নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। চলতে থাকে জড়িয়ে পড়া ও ছাড়িয়ে আনার মাঝে এক সমঝোতা।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প ও একই সঙ্গে থ্রিলার স্বাদের উপন্যাস ছায়া এসে পড়ে । লেখক ধ্রুব নীল

কুরিয়ারে হার্ড কপি পেতে এই পেইজে অর্ডার করুন

ছায়া এসে পড়ে
ছায়া এসে পড়ে

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -১  এর লিংক

তৈয়বের দ্বিতীয়বার ঘুম ভাঙলো ভরদুপুরে।প্রথমবার ভাঙে ভোরের আলো ফোটার আগে। লাশের পাশের গাছতলায়। লাশটা তখনও ঝুলছিল। সারা গায়ে কাদামাটি নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে তৈয়ব আসে হাউসের কাছে। রাতে বৃষ্টির পানিতে ভরে চুপচুপে ওটা। তাতেই দিল ঝাঁপ। কণকণে ঠান্ডা পানিতে মনে হলো হমে বরফ হয়ে যাবে। শরবানু উঠে দেখবে একটা মানুষ হাউসে আইসক্রিম হয়ে আছে। বরফের চাঁইতে আটকেপড়া লাশ দেখা হয়নি তৈয়বের। এটা ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকে কাপড় বদলে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

 

লাউয়ের খোসা দিয়ে শুঁটকি রান্না করেছেন চাচী। ওটার ঘ্রাণে খিদে সপ্তমে চড়েছে।

ব্রাশ পেস্ট হাতে কলতলায় গিয়ে দেখেএক রূপবতী তরুণী কল চেপে কলসি ভরছে। কলসি ভরায় তাগাদা নেই। চাপ দিচ্ছে সময় নিয়ে।

মেয়েটাকেআগে দেখেছে মনে হয়। তৈয়ব বাড়ি আসে না তো অনেক দিন। এই ফাঁকে কোনও কিশোরী হয়তো দুম করে বড় হয়ে গেছে।তৈয়বকে এক ঝলক দেখে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল শাড়ি পরা তরুণী।

‘চাচী, তৈয়ব ভাই উঠছেন। খাইতে দাও।’

তৈয়ব নিশ্চয়ই মেয়েটাকে চেনে। স্মৃতি ঝামেলা করায় এখন মনে পড়ছে না। হয়তো বাবার কোনও কাজিনের আত্মীয়। নিজের চাচাতো বোন টোন হলে তো চেনার কথা।

‘আমাকে চিনতে পারেন নাই?’

‘তুমি লাবনী।’

‘ওমা। মনে আছে তো দেখি। ছোড থাকতে আপনে আমারে বিয়ে করতে চাইছিলেন। মনে আছে?’

‘না নেই।’

‘না থাকলে নাই। ভাবী কই। মাইয়াটা কই। ওরে তো দেখলামই না। চাচী মারা যাওনের সময় আপনে আর ভাবী আসছিলেন। আপনার অবশ্য খেয়াল না থাকারই কথা। ভাবীর অনেক দেমাগ। হি হি।’

‘তৈয়ব স্পষ্ট বুঝতে পারছে, মেয়েটা অন্যকিছু বলবে। অন্যকিছু বলার আগে ভূমিকা করছে। প্রসঙ্গ বদলাচ্ছে দ্রুত। মেয়েটা এতো খুশি কেন?’

কলসি ভরে মেয়েটা এগিয়ে এলো তৈয়বের দিকে। আঁচলের ভাঁজে একটা কিছু জড়ানো। ওটা খুলছে।

‘গতরাতে আমার ভাসুর মিজানআলীগলায় ফাঁস দিসে।লাশের নিচে চশমাটা পাইসি। মনে হয় আপনার।’

চশমাটানিল তৈয়ব। পরলো না। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বড় একটা বিপদের পাখি যেন মাথার ওপর ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। আপাতত নিজের তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাটাকে কাজে লাগাতে চাইছে না। কারণ তার মন পড়ে আছে শরবানুর রান্নায়। লাউয়ের খোসার তরকারি। গরম ধোঁয়া ওঠা মোটা চালের ভাতের সঙ্গে কুচি করে কাটা খোসার তরকারি। তৈয়বকে শৈশবে ছুড়ে ফেলার আরেক মোক্ষম উপাদান।

তরুণী চলে গেলে তৈয়বও হাতমুখ ধুয়ে চলে গেলো খেতে। মাথাভর্তি খটকা গিজগিজ করছে। থাকুক খটকা। খাওয়া শেষে চা খেতে খেতে ভাবা যাবে।

 

খটকা-১: চশমাটা যে তৈয়ব আখন্দের সেটা লাবনীর জানার কথা নয়।

খটকা-২: মেয়েটা কি তাকে রাতে লাশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে?

খটকা-৩: লাবনী কি লোকটাকে খুন করেছে? তা না হলে তাকে এমন খুশি খুশি দেখাবে কেন?

খটকা-৪: লাবনীর পক্ষে এত বড় একটা লোককে ধরে বেঁধে গাছে ঝোলানো সম্ভব নয়। সে অন্যের সাহায্য নিয়েছে। কে সে?

 

‘কী লেখেন?’

তৈয়ব চট করে নোটবুট বন্ধ করলো না। তাতে মেয়েটার কৌতুহল বাড়বে। কৌতুহল জিনিসটা বাড়তেই থাকে। পরে সুযোগ পেলেই উঁকিঝুঁকি দেবে। বুঝে ফেলবে তৈয়ব গোয়েন্দাগিরি করছে।অবশ্য দেখলেও ক্ষতি নেই। তৈয়ব লিখছে তার নিজস্ব সাংকেতিক ভাষায়। লাবনী বসে পড়লো চৌকির ওপর। তৈয়বের গা ঘেঁষে।

‘মরা বাড়িতে থাকতে ভালো লাগছে না। এ জন্য এসেছি। শরবানু খালার লগে বাতচিত করবো। পুলিশ আসছে। লাশ নিয়ে গেছে। কাটাকুটি হবে। লাশ কাটতে দেখছেন কোনো দিন? আপনে তো মনে হয় ফাঁস দেওয়া লাশও দেখেন নাই। যেমনে আ কইরা তাকাইয়া ছিলেন।’

তৈয়বের ইচ্ছে না করলেও বারবার মেয়েটার হাতের চুড়ির দিকে নজর যাচ্ছে। এক হাতে এক ডজন, আরেক হাতে তিনটা চুড়ি কম। তিনটা কি ভেঙে গেছে? মেয়েটার গায়ে নিশ্চয়ই অনেক শক্তি। শক্তসমর্থ ভাসুরকে গাছে ঝোলানো সহজ কাজ না।

‘আপনারে আমি দেখছিলাম ওইদিন। বাতাসে কারও চশমা পইড়া যাইতে পারে, আমার আন্দাজ ছিল না। আমি তুফান দেখতে বাইর অইসিলাম। কী করবো বলেন, স্বামী বাড়ি নাই। সে করে আরেকজনের সংসার। তাই রাত-বিরাইতে ঘুরতে বাইর হই।’

তৈয়বের জানতে ইচ্ছে করলো, তোমাকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন লাবনী? সে বলল, ‘তোমার কাছে মোবাইল আছে? আমারটা ফেলে এসেছি।’

‘এই লন।’

ফোন হাতে তৈয়ব অনেকক্ষণ ভেবেও রেবেকার নম্বর মনে করতে পারলো না। মিনুর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। গ্রামে এখন ইন্টারনেটের স্পিড ভালো। ভিডিও কল দিলেও ভালো হতো। এদিকে তৈয়বের ফেসবুকও নাই।

‘থাক, কল করবো না।’

‘ভাবীর লগে কাইজ্জা হইসে? নাকি একেবারে জন্মের বিদায়। আমার স্বামী যেমন গেসেগা। আপনেও ভাবীরে ছাইড়া আসছেন?’

তৈয়ব দুপুরে খেয়ে শুয়েছিল। পায়ের ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় ঘুম আসেনি।ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিক পেইন। ভূতের মতো চেপে থাকবে। সহজে ছাড়বে না।

লাবনীর ভাসুর নিয়ে আপাতত আগ্রহ নেই তৈয়বের। তবে লাবনী যে তাকে পছন্দ করে বসে আছে সেটা বুঝতে পেরেছে। কারণ তৈয়বের গা ঘেঁষে বসেও সে ইতস্তত করছে না। পারলে এলিয়ে পড়ে। একে পটিয়ে পাটিয়ে যদি বিয়ে করে ফেলে তা হলে কি সে মিনুকে তার কাছে রাখতে পারবে? রেবেকার ইচ্ছেটা জানা দরকার। সে যদি মেয়েকে না দিতে চায়, তৈয়বের সাধ্য নেই কিছু করার।

ভাবনার দুয়ারে ছিটকিনি দিল তৈয়ব। তা না হলেচিন্তাগুলোদড়ি ছেড়া গরুর মতো আচরণ করবে। একদিকেই ছুট লাগাবে।

 

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আবার লাবনী এসে হাজির। দেখে মনে হচ্ছে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

‘লাবনী তুমি কাজটা ঠিক করো নাই। পুলিশে খবর দিলে লোকটারে ধরে নিয়ে যেত। তার শাস্তি হতো। যদিও তোমার কিছু ঝামেলা হতো। কিন্তু এখন সারাজীবন মনের মধ্যে খচখচ করবে।’

ঘাবড়ালো না মেয়েটা। সে তৈয়বকে ভালোমতোই চেনে। এ কারণে সকালে ইচ্ছে করে কলস ভরতে এসেছিল। তার মূল উদ্দেশ্য চশমা ফেরত দেওয়া ছিল না। ছিল তৈয়বের কাছে আসা। তৈয়বের বুদ্ধি সম্পর্কে সে ছোটবেলা থেকেই জানে।

‘এবার বলেন তো তৈয়ব ভাই, আমার স্বামী কেন রাজশাহী গিয়া আরেকটা বিয়া করসে?’

‘সম্ভবত সে তোমার সঙ্গে তোমার ভাসুরের.. না.. তোমার ভাসুর সম্ভবত..। বা অন্য কিছুও হতে পারে।’

‘কথা বলতে মুখে আটকাইতাসে? আমার ভাসুর আমারে রেপ করেছে বুঝলেন। একবার দুবার না। অনেকবার। এই জন্য স্বামী আমারে আর পছন্দ করে না। সে তার পেয়ারের ভাইরে কিছু বলবে না। তার ভাই তার জানের জান। সেই জানের জান ভাইয়ের জন্য এখন কতো শোক। তয় লাশটারে দেখতে আইলো না।আর লাশটারে তো দেখলেন, কেমন চিকনা লাউয়ের মতো দুলতেসিল। শোঁ করে একবার এদিক, আরেকবার ওদিক। হি হি হি।’

‘মূল কথাটা বলো।’

‘আসল কথা হইল। আপনি আমারে বাঁচাইবেন। ছিলাম বিপদের পুকুরে, এখন বিপদের সাগরে পড়ছি।’

লাবনীর মুখে এখনও হাসি। বিপদের মাত্রা আঁচ করা যাচ্ছে না।

‘আমি ওই কুত্তারবাচ্চারে ফান্দে ফালাইসিলাম। তারে গতরাইতে কইসি, ও ভাইআপনি আমারে যা করসেন ঠিক আছে। তয় আপনারে আমার মনে ধরসে। তা ছাড়া স্বামীও নাই। উনি আমার কথা শুইনাই পাগলা কুত্তা হইয়া গেসে। রাইতেই বাইর অইতে কইলাম। এক্কেবারে সেন্ট মাইরা বাইর অইল। আমি বোরখা পরা ছিলাম। রবিউলরে আগেই ঠিক কইরা রাখসিলাম। সে আবার গাছি মানুষ। দড়ি নিয়া রেডি ছিল।’

 

‘কীরে বেডি, তুই মরা বাড়ি থুইয়া এইহানো কী করস! চা খাবি?’ শরবানু কখন আসে টের পাওয়া যায় না।

‘চা খাবো খালা। মোয়াও খাবো। আর গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করতেসি। ডিসটার্ব করবা না।’

‘জোয়ান পোলা দেইখা মাথা ঠিক নাই? বিয়া তো করছস এক বুইড়ারে।’

‘বাজে কতা কইবা না। তুমি চা দিতে চাইসো দাও। তা না হইলে তোমারে আর নারিকেলদিমু না।’

আবার শুরু করলো লাবনী। ‘রবিউল আমারে প্রথমে চিনে নাই। আমি নগদ বিশ হাজার নিয়া বাইর হইসি। তারে দেখাইলাম টেকা আমার লগে আছে।’

‘আচ্ছা। রবিউল, মানে তোমার এই ভাড়াটে খুনি তোমার গলা চিনে নাই? তা ছাড়া তার তো এমনিতেই বোঝার কথা।’

‘একটু চাইপা চুইপা কথা কইসিলাম। তাতে কাম হয় নাই মনে হয়। কিন্তু ঘটনা আলাদা। আমার ভাসুর হারামজাদা। সে বাইর হইল। আমি তারে জায়গামতো নিয়া গেলাম। রবিউল তারে রুমাল চাইপা অজ্ঞান করলো। তারপর গলায় দড়ি পেঁচাইয়া ঝুলাইলো। লোকটা ঝানু মাল। ভুলটুল হয় নাই। টেকা নিয়া সে চইলা যাবে, আমিও যাব। এমন সময় রবিউলের মাথায় বিষ উঠলো। মানে বুঝলেন তো.. সুযোগ পাইয়া সে আমার লগে তখনই শুইতে চায়। আমার হাত ধইরা শুরু করলো টানাটানি। আমি দিলাম ঘুসা। হাতের চুড়ি গেলো ভাইঙ্গা। সেই ভাঙ্গা চুড়ি আবার টোকাইতে হইলো। প্রমাণ রাখন যাইব না। তারপর মিজান আলীরে তড়পাইতে দেইখা রবিউল আর খাড়ায় নাই।তার মতো লোকও ডরাইসে।লুঙ্গি কোচড় মাইরা ভাগসে। এরপর সব শেষ। আমি বইসা রইলাম। চান্দের আলোয় ভালা লাগতেসিল। মন চাইল ওইখানে ঘুম দিই। এমুন সময় আপনি আইসা হাজির।’

‘সমস্যাটা বলো।’

লাবনী চুপ।

‘রবিউল বুঝে ফেলেছে যে বোরখা পরা মেয়েটা তুমি?’

‘হুঁ’

‘এখন সে ব্ল্যাকমেইল করছে? আরও টাকা চাইছে?’

‘হুঁ।’

‘টাকা দিও না। সে কিছুই করবে না। কাউকে কিছু বলবেও না। তার কথায় কাজও হবে না। সে কী করবে? পুলিশকে বলবে? জীবনেও বলবে না। কারণ সে নিজে আরও বড় বিপদে পড়বে। কারণ খুনটা সে করেছে।আমার মনে হয় কোনও চিন্তাই নেই। তবে মনে হয় সমস্যা অন্যখানে, তুমি এখনও সেটা বলোনি।’

‘আপনে এতো বুদ্ধি নিয়া থাকেন কেমনে! আপনার উচিৎ গোয়েন্দাগিরি করা। পুলিশে ঢোকেন।’

‘আমি ঠিক করেছি চাষবাস করবো। মুরগির খামার দিব। অবশ্য মুরগির ডিম ফুটতে কদিন লাগে সেটাও জানি না। আমার মেয়েটাকে দেখানোর ইচ্ছা আছে। মিনু চোখের সামনে দেখবে একটা ডিম ফেটে কুটুস কাটুস করে একটা বাচ্চা উঁকি দিচ্ছে। আচ্ছা, তোমার কথা শেষ করো।’

‘সমস্যা হইলো রবিউল যা কইসে আমি মানি নাই। সে আমার স্বামীরে ফোন কইরা সব কইসে। আমার স্বামী আবার তারে বিশ্বাস করে।এখন তিনি গ্রামে আসতেসেন নতুন পরিবার নিয়া। আইসাই নাকি আমারেখুন করবেন। আমার মনে হয়, রবিউলরে দিয়াই তিনি আমারে খুন করাইবেন।এখন আপনি আমারে ওই হারামি হাত থেইকা বাঁচান।’

‘কবে আসবে তোমার স্বামী?’

‘আজ রাতেই আওনের কথা।’

তৈয়বের মনে হলো বহুদিন পর সে একটা কাজ পেয়েছে। বিরাট কাজ। তার মাথাও কাজ করতে শুরু করেছে আগের মতো। চিন্তার বারুদে আগুন লেগেছে। যে চিন্তাশক্তি দেখে অনেক দিন আগে রেবেকা তার প্রেমে পড়েছিল। পনের বছর আগের সেই বিচিত্র অনুভূতিটা আবারও আচ্ছন্ন করেছে তৈয়ব আখন্দকে। যে করেই হোক, বাঁচাতে হবে লাবনীকে।

 

ছায়া এসে পড়ে পর্ব -৩  এর লিংক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!