সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে ফের আলোচনায় এসেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা চাটুকার৷তসলিমার এমন মন্তব্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন বুদ্ধিজীবীরা। কেউ কেউ তার এমন মন্তব্যকে সমর্থন জানালেও বিরোধিতা নেমেছেন অনেকেই।
ভারতে বহু বছর ধরে বাস করছেন তসলিমা নাসরিন। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও এখন বাস করছেন দিল্লিতে।
তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লিখেন, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের মধ্যে এথিক্স বলে হয়তো এককালে, তিরিশ বা চল্লিশের দশকে, কিছু ছিল। এখন একেকজন সরকারের চাটুকার বনে যাচ্ছেন সে যে সরকারই হোক। বড় কোনও একাডেমিতে বড় কোনও পদ, নানা রকম সরকারি পুরস্কার, সুযোগ সুবিধে টাকা পয়সা অঢেল পাওয়ার লোভ তাঁদের প্রচন্ড।
ফেসবুকে তাঁর সম্পর্কে করা পশ্চিমবঙ্গের অনেক সাহিত্যিকের মন্তব্য পোস্ট করেছেন তসলিমা। সেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার থেকে অনিল বিশ্বাস, আজিজুল হক, মোহাম্মদ সেলিমের মতো ব্যাক্তিরাও আছেন।
তালিকায় রয়েছেন কবি সুবোধ সরকারও। তসলিমার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কবি সুবোধ সরকার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, উনি নিজে কোথায় কোথায় চাটুকারিতা করেছেন, আগে সেটার উত্তর দিন। পশ্চিমবঙ্গে কার কার চাটুকার ছিলেন, সেটা মানুষ জানেন। ওকে নিয়ে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধে। যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে কুৎসা রটিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, নিজের বাবার সম্পর্কে এসব লেখে, তাকে আমি আর মানুষ বলে ভাবি না।
তসলিমার লেখার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তার সঙ্গে বিশিষ্টজনদের সম্পর্কের কথা। সেই সূত্রে তিনি পোস্টের একাংশে #মি টু প্রসঙ্গে বলেছেন, আজকে মি-টু আন্দোলনকে স্বাগত জানাবে, অথচ বিখ্যাত এক পুরুষের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আছে বলে দ্বিখণ্ডিতকে গালি দেবে- এটা হিপোক্রেসি ছাড়া কিছু নয়।
সাহিত্যিক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কখন আমি কোন কথাটা বলব, সেটা আমার নিজস্ব ব্যাপার। তসলিমা দ্বিখণ্ডিততে যাদের নাম করে লিখেছেন, সেটা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে। পরিষ্কার অধিকারের মধ্যে পড়ে। তখন বলতে পারেননি, এখন বলেছেন। এতে কোনো অন্যায় নেই। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যার সাহস আছে, যার নাম নেওয়ার ক্ষমতা আছে, সে নাম নিয়েছে। বেশ করেছে।
সংস্কৃতি কর্মী ও অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের এই সময় দাঁড়িয়ে আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল, যেটা তারা করছেন না।
এদিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার তসলিমার প্রশংসা করলেও তাঁর বক্তব্য, সব বুদ্ধিজীবী সরকারের চাটুকার নন। এটা তসলিমার জানা উচিত। সরকারের সমর্থকরা অনাচার সত্বেও মুখবন্ধ করে থাকেন এটা ঠিক। কিন্তু বিরোধী বুদ্ধিজীবীরা সরকারের সমালোচনা করেন। শঙ্খ ঘোষও সরকারের সমালোচক। তাকেও যদি তসলিমা আক্রমণ করে থাকেন, তাহলে বড় ভুল করেছেন।
সুবোধ সরকার বলেন, সংখ্যালঘুদের পক্ষে ওর সওয়াল একটা রাজনৈতিক কৌশল। নারী অধিকারের পক্ষে, মেয়েদের জন্য উনি যে কান্নাকাটি করেন, সেটাও আসলে নিজের জন্য কান্নাকাটি।