class="post-template-default single single-post postid-12878 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

কিডনি রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার

কিডনি রোগের‘কিডনি রোগ’ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে এখন আর অপরিচিত কোনো রোগ নয়। দেশের মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছেন। আবার অনেকে হয়তো জানেনই না তিনি কিডনি রোগের রোগী। তাই এ রোগকে আনেকে নীরবঘাতক হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন। আসুন কিডনি রোগ সম্পর্কে কিছু সাধারণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেই।

কাদের হয়? কেন হয়?

কিডনি রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা অথবা লিঙ্গভেদ নেই। যে কোনো বয়সের নর-নারী জীবনের যে কোনো সময়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিডনি রোগের কারণ বিবিধ। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিচের কারণগুলোকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়:

*দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। *দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। *কিডনি প্রদাহ। *ডায়রিয়ার পর অতিরিক্ত পানিশূন্যতা। *এন্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ অথবা অন্য যে কোনো ওষুধের এমনকি আয়ুর্বেদিক, হোমিও, কবিরাজি ইত্যাদি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। *অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অথবা অন্য যে কোনো কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হঠাত্ রক্তচাপ কমে যাওয়া। *দীর্ঘমেয়াদি মূত্রনালীতে প্রদাহ। *কিডনিতে পাথর, মূত্রনালীতে পাথর, কিডনি অথবা মূত্রনালীর জন্মগত ত্রুটি কিংবা অন্য কোনো কারণে মূত্রনালী সরু হয়ে প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে। *বংশগত কিডনি রোগ থাকলে।

কিডনি রোগের প্রকারভেদ:

বৃহত্তর সংজ্ঞায় কিডনি রোগকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—
১. সাময়িক বা স্বল্পমেয়াদি কিডনি রোগ।
২. দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ।
৩. স্থায়ী কিডনি বিকল রোগ।

এই তিন ভাগের মধ্যে সাময়িক বা স্বল্পমেয়াদি কিডনি রোগ সাধারণত দ্রুত ও যথাযথ চিকিত্সার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। ফলে কিডনি সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। তবে অহেতুক সময়ক্ষেপণ অথবা অপচিকিত্সা স্থায়ীভাবে কিডনি বিকল করে দিতে পারে।

অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর কিডনি যথাযথ চিকিত্সা নেয়ার পরও এক সময় স্থায়ী কিডনি বিকল পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

স্থায়ী কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত রোগীর কিডনি স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে কখনোই আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।

লক্ষণ সমূহ:
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, লক্ষণ দেখে কিডনি রোগ শনাক্ত করা দুরূহ। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোন লক্ষনই প্রকাশ পায় না। তবে খুব সাধারণভাবে কিডনি রোগের লক্ষণগুলো হলো :

*খাবারে অরুচি বা ক্ষুধামন্দা *বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া *শারীরিক দুর্বলতা *কোমরের দুই পাশে কিংবা পেছনের নিচের দিকে মৃদু থেকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা। *মুখণ্ডল, হাত-পা এমনকি সারা শরীর ফুলে যাওয়া *দিন দিন প্রস্রাবের পরিমাণ কমতে থাকা অথবা একেবারেই প্রস্রাব না হওয়া অথবা হঠাত্ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।

তবে এ লক্ষণগুলোই কিডনি রোগের চূড়ান্ত লক্ষণ নয়। ক্ষুধামন্দা, বমি হওয়া, শারীরিক দুর্বলতার যেমন অনেক কারণ রয়েছে তেমনি কোমরে ব্যথা অথবা শরীর ফুলে যাওয়ার কিডনি রোগ ছাড়াও অন্য অনেক কারণ রয়েছে। আবার প্রকারভেদে কিডনি রোগের লক্ষণগুলোরও হেরফের হয়। অন্যদিকে অল্পকিছু রোগীর মাঝে কিডনি রোগের কোনো লক্ষণই খুঁজে পাওয়া যায় না। এই রোগীরা অন্য দশজন সুস্থ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। রুটিন চেকআপ অথবা অন্যকোন রোগের চিকিত্সার জন্য পরীক্ষা করতে গিয়ে দৈবাত তাদের কিডনি রোগ ধরা পড়ে।

পরীক্ষা-নিরিক্ষা:
প্রাথমিকভাবে কিডনি রোগ শনাক্ত করতে খুব বেশি পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না এবং এগুলো খুব ব্যয়বহুল নয়। কারও কিডনি রোগ আছে কিনা তা জানার জন্য প্রথমেই নিচের পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে—
* Urine for R/M/E * S. Creatinine * Ultrasonogram of KUB region. * Plain X-Ray KUB region.

এই পরীক্ষাগুলোর কোনো একটিতে কোনোরকমের অস্বাভাবিকতা থাকলে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা, রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিত্সার জন্য কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিত্সা:
চিকিত্সার আগে কিডনি রোগের প্রকার ও কারণ শনাক্ত করা জরুরি। এজন্য সব সময়ই কিডনি রোগীদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রয়োজন হয়। সাময়িক কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর যে কারণে কিডনি রোগ হয়েছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত অভিযুক্ত কারণটির চিকিত্সা দিতে হয়। এ জন্য রোগীকে হাসপাতালে একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ভর্তি থাকতে হয়।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীদের সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় না। এসব রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে, প্রতিদিন কতটুকু পানি খাবেন তা নির্ধারণ করে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য ওষুধ দিয়ে বাড়িতে থেকে এ রোগের চিকিত্সা করা সম্ভব। তবে নিয়মিত এসব রোগীর ফলোআপে আসতে হয়। স্থায়ী কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত হেমোডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন করে বেঁচে থাকতে হয়।

প্রতিরোধ:
কিডনি রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। তবে কিডনি রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিচের বিষয়গুলো মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি :

১. উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
২. ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

৩. চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন না করা। বিশেষ করে কারণে-অকারণে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন না করা ও সব ধরনের কবিরাজি ওষুধ এড়িয়ে চলা।

৪. প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া, যাতে স্থায়ী কিডনি বিকল রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

 

আরো লক্ষ্মন

কিডনি দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডাইজেস্ট জানিয়েছে কিডনি রোগের লক্ষণগুলোর কথা।

১. প্রস্রাবে পরিবর্তন

কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো প্রস্রাবে পরিবর্তন হওয়া। কিডনির সমস্যা হলে প্রস্রাব বেশি হয় বা কম হয়। বিশেষত রাতে এই সমস্যা বাড়ে। প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়। অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না।

২. প্রস্রাবের সময় ব্যথা
প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া- এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে।

৩.প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া

প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে এটি খুবই ঝুঁকির বিষয়।এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ।

৪. দেহে ফোলা ভাব

কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং বাড়তি পানি বের করে দেয়। কিডনিতে রোগ হলে এই বাড়তি পানি বের হতে সমস্যা হয়। বাড়তি পানি শরীরে ফোলাভাব তৈরি করে।

৫. মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া

লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিস্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। এতে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।

৬. সবসময় শীত বোধ হওয়া

কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।

৭. ত্বকে র‍্যাশ হওয়া

কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে। এটি ত্বকে চুলকানি এবং র‍্যাশ তৈরি করতে পারে।

৮. বমি বা বমি বমি ভাব

রক্তে বর্জ্যনীয় পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় কিডনির রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার সমস্যা হতে পারে।

৯. ছোটো ছোটো শ্বাস

কিডনি রোগে ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এসব কারণে শ্বাসের সমস্যা হয়, তাই অনেকে ছোট ছোট করে শ্বাস নেন।

১০. পেছনে ব্যথা

কিছু কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হয়। এটিও কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!