Sunday, May 19
Shadow

নায়িকা প্রয়োজন হয় নায়কের প্রেমিকা হিসেবে দেখানোর জন্য

‘সিনেমার নায়িকা হলে একধরনের পরিচিত পাওয়া যায়, কিন্তু নায়িকা হয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া সহজ নয়। সময়ের পালাবদলের সঙ্গে পর্দার নায়ক-নায়িকা বদলে যায়। জায়গা দখল করে নেয় নতুনরা। এটাই রীতি। এ জন্য শুরুতে নায়িকা হওয়ার বাসনা থাকলেও এখন চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে বেঁচে থাকতে অভিনয় করে যাচ্ছি। নায়িকা নয়, যে চরিত্রে অভিনয় করব, সেটা গুরুত্বপূর্ণ কি-না সেটিই এখন যাচাই করি।’ বললেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত অভিনেত্রী তমা মির্জা। যিনি এরই মধ্যে ‘নদীজন’, ‘গ্রাস’, ‘চল পালাই’, ‘মন বোঝেনা’সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মনোযোগ কেড়েছেন। তবে একটি ছবিই তার অভিনয় লক্ষ্য বদলে দিয়েছে। যে কারণে তিনি এখন নায়িকার চেয়ে অভিনীত ছবির চরিত্রকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তমা নিজেই স্বীকার করলেন সে কথা।
তমা মির্জা

অকপটে বলে দিলেন, ‘শুধু নায়িকা হয়ে বেঁচে থাকা সত্যিই কঠিন। জনপ্রিয়তা পেলেও নির্দিষ্ট একটি সময়ে নিজের কোনো অবস্থান থাকে না। দেশীয় ছবির ক্ষেত্রে এটা বেশি চোখে পড়ে। কারণ এদেশের ছবির বেশির ভাগ গল্প নায়ককেন্দ্রিক। নায়ক এবং তার পরিবার, প্রিয়জন কিংবা তার কোনো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাহিনী নানা দিকে মোড় নেয়। নায়িকাকে প্রয়োজন হয়, তার প্রেমিকা হিসেবে দেখানোর জন্য। রোমান্টিক গল্পের ছবিতে নায়িকারা কিছুটা গুরুত্ব পান। কিন্তু সেখানেও ঘুরেফিরে নায়কই প্রধান হয়ে ওঠেন। তাই অভিনয়ের ভালো বা মন্দ তুলে ধরার সুযোগও থাকে কম।

কিন্তু আমি তো সিনেমার পর্দা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাই না। অভিনয়ের মধ্য দিয়েই দর্শকের মনে অনেকদিন বেঁচে থাকতে চাই। এ জন্য যে চরিত্র দর্শক অনেকদিন মনে রাখবেন, এমন কিছু চরিত্রের অভিনয় দিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে চাই।’ তমা মির্জার এ কথায় বোঝা গেল, অভিনয় দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেয়ে দর্শকের মনে স্থায়ী আসন করে নেওয়াই তার লক্ষ্য। ‘নদীজন’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার কারণেই কি তার চিন্তাধারা বদলে গেছে? এই প্রশ্ন করতেই তমা বলেন, ‘এটা ভাবলে ভুল হবে না। এ কথা ঠিক যে, ‘নদীজন’ বা ‘গ্রাস’-এর আগে যেসব ছবিতে অভিনয় করেছি, সেগুলো আমাকে দর্শকের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
তমা মির্জা

কিন্তু অভিনয়ের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি। ভালো কিছু কাজের জন্য সবসময়ই তৃষ্ণা ছিল আমার। এই তৃষ্ণা অনেকের চেয়ে বেশি বলেই আমার মনে হয়। যখন কাউকে নিজের অভিনয় দেখার কথা বলব, তখন কিন্তু ‘গ্রাস’ বা ‘নদীজন’ ছবির কথাই চলে আসবে। অন্যান্য ছবির কথা হয়তো সেভাবে বলব না। জানি অন্য ছবিগুলো কারও না কারও ভালো লেগেছে। কিন্তু সেখানে দর্শক আমার অভিনয় দেখার কতটা সুযোগ পেয়েছেন- সেটাও ভাবার বিষয়। নিজেকে ভেঙে নানা চরিত্রের মধ্য দিয়ে যদি পর্দায় তুলে ধরতেই না পারি, তাহলে অভিনয়ের বড় অঙ্গনে পথচলার কোনো মানে নেই। তাই আগামী দিনগুলোয় চাইব, ভালো কিছু ছবিতে কাজ করতে। আর দায়বদ্ধতার কথা যেটা জানতে চাইলেন, সেটাও কিছুটা আছে।

কারণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। চেষ্টায় ভালো কিছু করা সম্ভব- এটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। আবার এটাও সত্যি যে, ‘নদীজন’ ছবির ছায়া চরিত্রে আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ অভিনয় করতেন, তাহলেও এই চরিত্র দর্শকের মনে দাগ কাটত। কারণ একটিই- চরিত্রকে কীভাবে ভেতর থেকে বের করে আনতে হয় তা পরিচালক শাহনেওয়াজ কাকলী ভালোভাবেই জানেন। তাই ছায়া চরিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার কৃতিত্বটা তারই প্রাপ্য।’ তমার ইচ্ছার কথা জানা হলো। এখন প্রশ্ন হলো, তিনি যেভাবে নিজেকে পর্দায় তুলে ধরতে চান, সেভাবে তুলে ধরার কতটা সুযোগ আছে? এর জবাবে তমা বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ভালো ছবি তৈরি হয়েছে।
তমা মির্জা

আশার কথা হলো, এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যদিও ভালো ছবিগুলো অনেক শিল্পীর মাঝে ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। তাই তৃষ্ণা অনেকটাই থেকে যাচ্ছে। তার পরও খুশি- ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’, ভিন্ন ধাঁচের সিনেমা এবং ‘গহিনের গান’-এর মতো নতুন ধারার মিউজিক্যাল মুভিতে কাজের সুযোগ পাওয়ায়। সুমন রেজার ‘ঝুম’ নামের আরেকটি ভিন্ন ধরনের ছবিতে কাজের সুযোগ হয়েছে। এটাই আমাকে আরও ভালো কিছু করার প্রেরণা জোগাচ্ছে। আমার ছবির সংখ্যা কম, কিন্তু সংখ্যার চেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে, সেটা হলো কাজের মান। এ ছবিগুলোয় অভিনয় করে অনেক কিছু জানা এবং শেখার সুযোগও পাচ্ছি। পরিণত শিল্পী হওয়ার জন্য এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর শেষ কথা এটাই যে, ভালো কাজের মধ্য দিয়েই আমি দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!