যে অভ্যাস

অফিস হোক বা বাড়ি, মাথায় চাপ পড়ুক, ছাই না পড়ুক, খাওয়াদাওয়ার পর বা নানা কাজের ফাঁকে বিভিন্ন অছিলায় সুখটান না দিলে অনেকেরই নাকি মন ভরে না! তবে একের পর এক সিগারেটর প্যাকেট ওড়ালে এ বার আরও এক বার সাবধান হোন। চিরচেনা অসুখগুলো তো রয়েইছে, ধূমপানের হাত ধরে এ বার হানা দিতে পারে অন্ধত্বও।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ রাজা নারায়ণনের মতে, নানা গবেষণায় জানা গিয়েছে, ধূমপানের সরাসরি প্রভাব পড়ে চোখের রেটিনার উপরে। চোখের পিছনের এই পর্দা আলো দেখতে সাহায্য করে। অনবরত ধূমপানে এই রেটিনাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেটিনার মাধ্যমেই আমরা যা দেখি তা মস্তিষ্কে পৌঁছয়। তারপরে মস্তিষ্ক তা নিজের কোনও অর্থে রূপান্তরিত করে। অর্থাৎ রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।

রাজা নারায়ণ জানাচ্ছেন, ধূমপান রক্তে বিভিন্ন কেমিক্যালের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রে‌টিনায় রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। এর ফলে কম বয়সেই ‘ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’-এর শিকার হতে হয়। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে থাকে। এই রোগকে পুরোপুরি সারানোও যায় না।

 

বর্তমানে মার্কিন মুলুকে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। এমনকি চোখে ছানি ও গ্লুকোমার চেয়েও এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

সম্প্রতি হেলথ জার্নাল ‘সাইকিয়্যাট্রি রিসার্চ’-এর একটি রিপোর্টও এই দাবিকে মান্যতা দিচ্ছে। এখানে বলা হয়েছে, সিগারেটে বেশ কিছু নিউরোটক্সিক কেমিক্যাল থাকে। এই কেমিক্যাল কালার ভিশন খারাপ করে। ফলে লাল-সবুজ ও নীল-হলুদ এই রংগুলি দেখার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে থাকে।

 

ধূমপানকে বাদ দিন জীবন থেকে।

২০১৭-য় ‘গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ’-এর একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ভারতে বসবাসকারীর ৬৩.৬ শতাংশ ধূমপায়ী। অর্থাৎ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন-এর শিকার কত জন হতে পারে, তা আন্দাজ করা যায়। তবে শুধু এই রোগই নয়। ধূমপানে চোখে ছানি, গ্লুকোমার মতো রোগও হতে পারে। তবে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন চোখের এত ভিতরে বাড়তে থাকে যে সহজে বোঝা যায় না। আর যখন বোঝা যায়, তখন অনেক‌টা দেরি হয়ে যায়।

 

সঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে ওঠা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেলে দৃষ্টি আর ফেরত পাওয়া যায় না। জানাচ্ছেন মুম্বইয়ের আর একল চক্ষুবিশেষজ্ঞ অজয় দুদানি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, যারা ডায়াবিটিসের রোগী, তাঁদের চোখে সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন থাকা উচিত। কোনও সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

তবে শুধুই ধূমপান নয়। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস, অনবরত ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারেও রেটিনায় চাপ পড়ে। তাই ধূমপান বন্ধের পাশাপাশি যতটা পারবেন, এড়িয়ে চলুন সে সবও।