ছোট্ট মেয়ে বিন্তি। বয়স কতই বা। এই সাত আট।এই টুকুন বয়সেই অনেক কাজ করে সে। বারান্দায় ফুল গাছে পানি দেয়। সময়মতো পড়তে বসে। সময়মতো খায়। মোটকথা, বিন্তি চলে একদম রুটিনমতো।
বিন্তির ভাই-বোন নেই। সে থাকে এক চাচার বাসায়। চাচা অনেক ব্যস্ত। ফোনে সারাদিন তার ব্যবসার আলাপ করতে হয়। ( বাংলা নতুন নাটক বাংলা শর্ট ফিল্ম )
চাচা এসে বিন্তির কিছু খোঁজ খবর নেন। তবে বিন্তির সঙ্গে কথা বলা বা খেলার সময় তার নেই। বিন্তি নিজের মতো করে বই পড়ে, অঙক করে। পড়া শেষে বই খাতা গুছিয়েও রাখে।
কিন্তু প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু অদ্ভুত কাজ করে বিন্তি।
প্রথমে সে আলমারি থেকে তার একটা জামা বের করে পড়ার টেবিলে রেখে দেয়।
এরপর তার এক পাটি জুতো এনে রাখে ঘরের মেঝেতে।
তারপর চুপটি করে কিছুক্ষণ বিছানায় বসে থাকে। এরপর আবার উঠে তার পড়ার টেবিল এলো মেলো করে দেয়। তারপর একটা পুতুল রেখে দেয় (একটা কিছুর ওপর)।
অনেক ক্ষণ বসে থাকে বিন্তি। মনে হয় যেন সে কারও জন্য অপেক্ষা করছে। ঘড়ি দেখে। সময় বসে যায়। রাতও বাড়তে থাকে। একটা সময় বিন্তি আর জেগে থাকতে পারে না। সে ধীরে ধীরে বিছানায় হেলে পড়ে। এরপর সে ঘুমিয়ে যায়।
এরপর তার রুমে আসে তার চাচা। তারপর তিনি বিন্তির জামাটা আলমারিতে তুলে রাখেন। টেবিল গুছিয়ে দেন। এবং জুতা ও পুতুলটাও রেখে দেন জায়গামতো।
বিন্তি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সব গোছানো। সে খুব খুশি হয়। ছুটে যায বারান্দায়। চাচা ফোনে আলাপ করতে করতে বিন্তির মাথায় হাত বোলান।
বিন্তি চাচার কাছে জানতে চায়, কাল রাতেও এসেছিলা, তাই না চাচ্চু।
চাচা ইশারায় বলেন, হঁ্যা এসেছিল।
বিন্তি ছুটে যায়। তার হাতে একটা ফোন। ফোনের গ্যালারি থেকে সে এক লোকের ছবি বের করে দেখে।
ছবিতে হাত বোলায় বিন্তি। কে এই লোক।
বিন্তির চাচা ফোনে কাকে যেন বলছেন, প্রতিদিন এই এক কাজ করে যাচ্ছি। মেয়েটাও একদিন বড় হবে। সে একসময় সব বুঝতে পারবে। তখন আমাকে তো সে… না না এ কাজ আর কতদিন করবো। তাকে এখন বুঝিয়ে বলার সময় হয়েছে।
ফোন রেখে চিন্তা করতে থাকেন বিন্তির চাচা। তিনি ভাবতে থাকেন। অতীতের কথা। বিন্তি খুব হইচই করতো ঘরে। যখন সে ঘুমাতো তখন তার বাবা তার সব গুছিয়ে রাখতেন। জামা রাখতেন আলমারিতে, জুতো রাখতেন জায়গামতো। পুতুলটাকে রাখতেন টেবিলের এক কোণে আর টেবিলের বইখাতাও গুছিয়ে রাখতেন। এরপর বিন্তির কপালে চুমু খেয়ে তাকে ঘুম পাড়াতেন। একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
মৃত্যু কী জিনিস তা বিন্তি বুঝতো না। তাকে তার চাচা লাশের সামনেও দাঁড়াতে দেননি। এরপর রাত হলেই বিন্তি অপেক্ষা করতো, কখন তার বাবা আসবে। কখন তার সব গুছিয়ে দেবেন তিনি। বিন্তি সব এলোমেলো করে রাখে। প্রথম প্রথম তার চাচা বিষয়টি বুঝতে না পারলেও পরে তিনিই প্রতিরাতে বাবা সেজে বিন্তির সব গুছিয়ে দিয়ে যেতে থাকেন। আর বিন্তিও ভাবে, তার বাবা বুঝি মাঝরাতে এসে তার সব গুছিয়ে দিয়ে যায়।