Tuesday, March 19
Shadow

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ (পর্ব-২)

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ পর্ব-১

‘আপদ বিদেয় হলো?’
‘না বিদেয় হয়নি। আপদ শাড়ি বদলাচ্ছে। এরপর আরো বহু কিছু বাকি। ঘণ্টাখানেকের মামলা।’
আমি অবাক হওয়ার গুণ হারিয়ে ফেলিনি। অভিনয় করছি কেবল। বুঝতে পেরেছি মোবাইলের খুদে স্পিকারে ভেসে আসা জাদুর মতো কথাগুলো আমাকে কব্জা করে ফেলছে। আমিও তার কব্জায় নিজেকে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি চাই সে আমাকে আরো জোরে সোরে কব্জা করুক।
‘কেমন আছো?’
‘এই তো। তুমি?’
‘দেখছো না? দেখে কী মনে হচ্ছে?’
‘হুম।’
‘হুম আবার কী? বিয়ে করেছো, সংসার করছো। ভালোই তো থাকার কথা।’
‘তা হলে মনে হয় ভালোই আছি।’
‘লুনার কথা মনে আছে?’
‘কী আশ্চর্য, কেন থাকবে না!’
‘উঁহু। অনেক অনেক দিন আগের কথা তো। সে তো মরে গেছে, তাই না?’
আমার ভেতরটা খালি খালি লাগল আবার। মেয়েটার মুখে এ কথা আশা করিনি।
তার চোখজোড়া পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। চোখের কালো মণি দুটো টলটল করছে। তবে আমি নিশ্চিত ওটা কান্না নয়। লুনার চোখ এমনই। আরো অবাক করা ঘটনা, ওর চোখে আমি আমার প্রতিফলন দেখতে পেলাম। ছোটবেলায় খেলাটা খেলে সবাই, চোখে চোখ রেখে বলে তোমার চোখে আমাকে দেখা যায়!
লাইনটা কেটে গেল। ফোনটার দিকে তাকালাম। দুই কি তিন সেকেন্ড হবে। মাথা ওঠাতেই দেখি মেয়েটা নেই।
‘কার সঙ্গে কথা বলছো? তোমার এমন হাসি হাসি চেহারা তো চৌদ্দ বছরে দেখি নাই।’
ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কানে দুল পরতে পরতে বলল রেশমা।
‘বিয়ে হলো সাত বছর। তার আগে এক বছরের সম্পর্ক। চৌদ্দ পেলে কোথায়?’
‘সাতে পাঁচে পনের বুঝিও না। তোমার চেহারায় জেল্লা মারছে।’
‘আমার এক মেয়ে বন্ধু ফোন দিয়েছিল। খুব সুন্দরী। তার সঙ্গে চক্কর চলছে।’
‘আমার মতো বেকুব মেয়ে আরো আছে? শোনো, আমি চললাম। আজ ফিরবো না, সেটা তো বলেছিই। রাতে মদ গাঁজা সিগারেট যা মন চায় খেও।’
‘জ্বি খাবো।’
‘জ্বি জ্বি করছো কেন? আমি তোমার বড় আপা না। তোমার বউ।’

রেশমা বের হতেই ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি নিষ্পলক। শূন্য ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে সমস্যা নেই। রূপবতী নারী থাকলেই সমস্যা।
রেশমার মনটা দিন দিন খোলা বইয়ের মতো হয়ে যাচ্ছে। সব পড়া যায়। সমস্যা হলো পড়ার মতো বস্তু দিন দিন কমে যাচ্ছে। আবার এমন হতে পারে, পড়ার মতো নতুন একটা বই পেয়েছি আমি এবং নিশ্চিত হয়ে গেছি, রেশমা দরজা খুলে চলে যাওয়া মাত্রই মেয়েটা আবার আসবে ছাদে।
মেয়েটা এলো না। রেশমা চলে যাওয়ার পরও প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। আধা ঘণ্টা কম কথা না। কোথাও ভুল টুল হচ্ছে কিনা সেটা ভাবতে ভাবতে ভেতরে গেলাম। বেডরুমে গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে রইলাম। ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানিও খেলাম। অফিস নেই। কী করবো বুঝতে পারছি না। মুভি দেখবো নাকি একটা। নাহ মন বসবে না। আবার বারান্দায় দাঁড়ালাম। এবার ছাদটাকে মনে হলো আগের চেয়েও খালি। ধু ধু করছে যেন। আশপাশে কম করে হলেও শ খানেক বাড়িঘর। এত ধু ধু মনে হওয়ার কারণ নেই।
‘অ্যাই শুনছো?’

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ

পরিষ্কার ডাকটা এলো বেডরুম থেকে। ভয় পেয়ে গেলাম। কণ্ঠটার মতো ভয়টা পরিচিত। ছোট থাকতে একবার ভূত দেখেছিলাম। কোনো দৈত্য বা অশরীরি প্রেতাত্মা নয়। চোখের সামনে কেবল পানি খাওয়ার জগটা শূন্যে উঠে গিয়েছিল আর গ্লাসে পানি ভরে কেউ তাতে চুমুক দিয়েছিল। আমি চিৎকার করতেই গ্লাস নিচে পড়ে চৌচির। এটুকুই। দৃশ্যটা দেখে এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে, আমার মস্তিষ্ক সেটাকে আমার নিজের কাজ বলে চালিয়ে দিল। সবার সঙ্গে সঙ্গে আমিও বিশ্বাস করে ফেলি যে আমি নিজেই জগ হাতে নিয়ে পানি ঢেলেছিলাম গ্লাসে। বেডরুম থেকে শব্দটা পেয়ে আমার পুরনো সেই অনুভূতিটা হলো।
‘ভয় পাবে না। তোমার দরজা খোলা ছিল। ঢুকে পড়েছি। আবার লাগিয়েও দিয়েছি। হুট করে কেউ ঢুকবে না।’
চিন্তার হাজারটা কারণ থাকা সত্ত্বেও হাঁফ ছাড়লাম। অতিপ্রাকৃত ভয়টা কেটে গেল। রেশমা চলে যাওয়ার পর দরজাটা নিজের হাতে লাগিয়েছিলাম কিনা সেটা আপাতত ভাবতে গেলাম না। একটা যুক্তি তো পাওয়া গেল। মানুষ যুক্তি ভালোবাসে।
তবে অনুভূতিটা দ্রুত বদলে যেতে শুরুর করলো। বাঘা সাহিত্যিক হলে কঠিন বর্ণনা দিতেন। আমি টুকটাক গল্প লিখি। মনে হলো আমার এই মুহূর্তের অনুভূতিটা কেমন সেটা কাউকে বোঝাতে যাওয়াটা বোকামিই হবে।
বেডরুমের কাছে আসতেই একটা টান অনুভব করলাম। প্রচ- সে টান উপেক্ষা করার মতো নয়। আমাদের পৃথিবীটা মাধ্যাকর্ষণ টানটা কেমন অনুভব করে কে জানে। এমনই হয়তো। বেডরুম যেন একটা প্রাণী। আমাকে জালে ধরেছে। এখন ধীরে ধীরে টেনে তুলছে। যতই উঠছি ততই দম আটকে আসছে।
তার চোখে চোখ পড়তেই সব ঠিক, সব স্থির। একদম সাধারণ ঘটনা যেন। আবার সেই পরিচিত হাসি। হাসি বললে ভুল হবে। লুনার মতো দেখতে মেয়েটা সম্মোহন বিদ্যা জানে নাকি?
‘এদিকে আসো!’
এ ডাক উপেক্ষা করার মতো নয়। পনের বছর আগে যখন প্রেমটা হয়েই গেল, তখনও কোনোদিন লুনার গলায় এমন আবেদন শুনিনি। এ তবে সম্মোহনেরই খেল।
‘বুঝতে পারছি তুমি ভয়ে মরে যাচ্ছো। কাছে এসে বসো। আমি ভূত, লুনার ভূত। ভয় নেই, কামড় দেব না।’
‘ভয় পাইনি তো।’ আমি হাসলাম।
মেয়েটার কাছে এসে বসলাম। একটা বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে পুরো বিষয়টা আমার হেলুসিনেশন। হেলুসিনেশন জিনিসটা হয়তো এমনই। বাস্তবের মতো মনে হয়। তা না হলে সিজোফ্রেনিয়া রোগটা নিয়ে দুনিয়ায় এত মাতামাতি হতো না। আমার মন যা চাইবে, এখন সেটাই ঘটবে। মেয়েটা খাটে পা দোলাচ্ছে। মোনালিসা টাইপের হাসি লাগানো মুখটা ঘুরিয়ে রেখেছে অন্যদিকে।
‘আমি কৃ। লুনার ভূত না। ওর রূপ নিয়ে এসেছি। আমরা রূপ বদলাতে পারি।’
‘কৃ? শুধু কৃ? নামের আগেপিছে কিছু নেই?’
‘তুমি মানুষ, আমি কৃ। এটা আমার নাম না। আমার নাম তুমি উচ্চারণই করতে পারবে না।’
‘ও। জ্বিন ভূত টাইপ কিছু না?’
‘বললাম তো আমি কৃ। কোন টাইপের সেটা জানি না। আর তুমি যেটা ভাবছো মোটেও আমি সেরকম কিছু না। পরীটরি কোনোদিন দেখিনি। আর কারোর ওপর ভর কীভাবে করতে হয় সেটা জানা নেই। তুমি চাইলে তোমার কাঁধে চড়ে বসতে পারি। হি হি হি হি।’

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস- কৃ

আপাতত আর অবাক হবো না। এমন অদ্ভুত কিংবা ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়লে কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয় সেটা আগেভাগে বলা মুশকিল। কেউ যদি দেখে তার সামনে একটা পানির জগ শূন্যে ভেসে উঠলো, তা হলে কী করবে মানুষটা? এর উত্তর যেমন জানা নেই, তেমনি আমিও জানি না যে আমার কেমন লাগছে বা লাগা উচিৎ। শুধু হলফ করে বলতে পারি যে, আমার একটুও ভয় লাগছে না।
‘কৃ তুমি কিছু খাবে?’
‘ফ্রিজে ঠাণ্ডা পানি আছে?’
‘হুম।’
‘হুম হুম করলে তো হবে না। যাও নিয়ে আসো।’
আমি পানি আনতে গেলাম। সম্মোহিতের মতো নয়, একদম স্বাভাবিকভাবে উঠে গেলাম। গ্ল¬াসে পানি ভরে দরজার কাছে আসতেই ঘটনাটা ঘটল। এক লাফে বিছানা থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো কৃ। ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো। আমার হাতে পানির গ্ল¬াস। শক্ত করে চেপে ধরে আছি ওটা। আরেকটু হলে হাতের চাপেই ভেঙে যাবে।
কী করা উচিৎ বুঝতে পারছি না। ভাবছিও না। কৃ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিটা মানবীর নয়। অতিমানবীয়? হবে হয়তো। তার চোখে স্পষ্ট বোকা বোকা চেহারার নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। মনে মনে সায়েরি লেখার অভ্যাসটা মাথায় ঝনঝনিয়ে উঠল আবার, ‘আয়না তো বাজারেই পাবে। তোমার চোখে আমার প্রতিবিম্ব কী হবে এমন জলের মতো?’
কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল জানি না, কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম, পানি? কৃ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কী যেন বলল। একবর্ণ মাথায় ঢুকল না। ততক্ষণে চোখ বুঁজে এসেছে। আমি যেন চাইছি কৃ আমাকে আরো শক্ত করে ধরে রাখুক। কৃ মনের কথা বুঝতে পারে। এটা জানা হয়েছে এতক্ষণে।
‘চোখ খুলবে না!’
মনে মনে বললাম, প্রশ্নই আসে না। এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো গোটা কয়েক ঘণ্টা।
‘গ্ল¬াসটা রাখো।’
আমার হাতের ডানেই একটা টুল। গ্লাসটা রাখতেই বিপদে পড়ে গেলাম। হাত দুটো ঝপ করে নিচে ফেলে দেব নাকি আমিও কৃকে জড়িয়ে ধরবো?
‘প্লিজ!’
আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম কৃকে। এরপর যা ঘটল তার জন্য তৈরি ছিলাম না। মনে হলো কৃর ভেতর থেকে একটা শিহরণ আমার মধ্যে ঢুকে পড়ছে। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক একটা আবেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমার মুখের বাম পাশে কৃ তার গালটা চেপে ধরে রাখল। প্রিয় কাউকে জড়িয়ে ধরলে যে অনুভূতিটা হওয়ার কথা কৃ যেন তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ঢেলে দিচ্ছে আমার ভেতর। অনুভূতিগুলো কণার মতো। বরফের তীক্ষ্ম ফলার মতো শরীর ভেদ করে সোজা চলে যাচ্ছে মগজে। নিউরনে নিউরনে ঝলকানি শুরু হয়ে গেল। থেমে গেল সময়টাও। সময় মানে যে সেকেন্ডের টিক টিক নয়, সেটাও বুঝতে পারলাম। এটা কৃর একটা ক্ষমতা? সময় আটকে দেওয়া?
‘উমম।’ একটা আলস্য ভরা শব্দ করে আচমকা আমাকে ছেড়ে দিল কৃ।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানির গ্লাসটা আবার বাড়িয়ে ধরলাম কৃর দিকে। গ্লাসের গায়ে কুয়াশার মতো পানি জমলো না। তার মানে ঘড়ির হিসেবে সময় বেশি যায়নি। ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে পানিটা খেল মেয়েটা। নাহ, কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ল না কৃর পানি পানের দৃশ্যে।
গ্লাসটা টুলে রেখে বিছানায় ফের ধপ করে বসল।
‘তুমি একটা গাধা।’
‘হুম।’
‘তুমি আমাকে সত্যি ভূত-পেতœী ধরে নিয়েছো।’
‘হতেও পারো।’
‘এমনও হতে পারে আমি পাশের বাড়ির সাহসী কোনো তরুণী। যে তোমাকে দেখেই প্রেমে পড়ে গেছে এবং যে পাড়ার মোবাইল রিচার্জের দোকান থেকে তোমার নাম্বার কালেক্ট করেছে। তারপর তোমার বউকে বের হয়ে যেতে দেখে… আরো ব্যাখ্যা লাগবে?’
‘কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি দরজাটা লাগিয়েছিলাম। আর দরজাটা ছিটকিনিওয়ালা। নকল চাবি বানানোর সুযোগ নেই। তা ছাড়া লুনার কথা তোমার জানার কথা না।’
মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে। ধরা পড়ে যাওয়ার দুষ্টুমি হাসি মুখে। আমার চোখে সেই হাসিতে কোনো কৃত্রিমতা ধরা পড়ল না। মেয়েটা সত্যিই অন্যকিছু। মজা করে মিথ্যে বলছে।
‘তোমাকে কৃ বলেই ডাকবো?’
‘যা ইচ্ছে ডাকতে পারো।’
‘তুমিই কি সেই ছিলে?’
‘মানে?’
‘না থাক, কিছু না। অনেক আগে একবার একটা পানির জগ…।’
‘আমি তোমার প্রেমে পড়েছি বছরখানেক হলো। এর আগে তোমাকে চেনার প্রশ্নই আসে না।’
‘মাই গড। ফলো করেছো এতদিন? এখন তবে আর ফলো করবে না?’
‘উফফ বড্ড বকবক করো। বলো কী খাবে?’
আমি টুল টেনে বসলাম। ইচ্ছে হচ্ছে তার গা ঘেঁষেই বসি। তবু বসলাম না। কিছু ইচ্ছে পূরণ না হলেই আনন্দ।
‘তোমার কী কী ক্ষমতা আছে? যা ইচ্ছে খাবার এনে দিতে পারো?’
‘এবার মনে হচ্ছে সত্যিই তোমার ঘাড় মটকে দেই! আমি চাইনিজ খাব। অনলাইনে অর্ডার করবো। তুমি কী খাবে বলো?’
‘আমি নাশতা করেছি একটু আগে। জুস কফি একটা কিছু খেতে পারি।’
মনের ভাবনাটা তাড়ানোর চেষ্টা করছি। যত চেষ্টা করছি ততই যেন ধরা পড়ে যাচ্ছি কৃর কাছে। আর কৃ ততটাই কৃত্রিম রাগ নিয়ে কটমট করে তাকাচ্ছে আমার দিকে। ভাবছিলাম কৃরা আবার কী খায় না খায়, মানুষের রক্ত, বাদুড়ের হাড়, কাকের হৃৎপিণ্ড…।
‘খবরদার!’
‘না মানে, হে হে অনলাইনে পাওয়া যায় কিনা ট্রাই করে দেখতে পারো।’
কৃত্রিম রাগ ঝেড়ে এবার খাটে দুই পা তুলে বসলো কৃ। একটু আগে কী পরেছিল সেটা মনে পড়লো না। কিন্তু এখন আকাশী নীল রঙের শাড়ি আর কালো ব্লাউজ। আবারো বিভ্রান্ত হলাম। মনে মনে এভাবেই কল্পনা করতাম লুনাকে। যদিও ওকে কোনোদিন সেটা বলা হয়নি।
‘শোনো এত ঘন ঘন বিভ্রান্তিতে পড়ার কিছু নেই। তুমি আমাকে যা খুশি ভাবতে পারো। আমি যাচ্ছি না। এমনকি তোমার বউ এলেও না!’
‘তোমাকে যেতে বললাম কখন? আর আমারও খিদে লেগেছে।’
‘একে বলে মনের খিদে। আমাকে খেতে দেখবে তো, তাই।’
কথাটা কৃ বলল ভ্রƒ নাচিয়ে। আহ্লাদের বাড়াবাড়ি নেই সেই চোখে।
আচমকা লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ল কৃ। থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। জোরেসোরে হেসে উঠল মেয়েটা। পাশের ফ্ল্যাটের কেউ শুনে ফেলবে না তো? ওহ, কী সব ফালতু টেনশন!
হাসিতে দুলে উঠল কৃর লম্বা ঘন চুল। একটু আগেও কি তা-ই ছিল? মনে পড়ছে না। কিছুই মনে পড়ছে না। আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে আত্মভোলা মানুষ। তারপর ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম, কৃ আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আগের মতো ঘাড় পেঁচিয়ে নয়। সরাসরি আলিঙ্গন যাকে বলে। বুকে মাথা চেপে ধরলো। হালকা আমেজের বৈদ্যুতিক প্রবাহটা আবারো আমাকে ঘিরে ফেলল। শরীর ভেদ করে ঢুকতে শুরু করেছে লক্ষ কোটি কণা। আমি মিশে যেতে থাকলাম একটা অতিকায় অনুভূতির সমুদ্রে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাথাটা নামিয়ে নাকটা বসিয়ে দিলাম কৃর কাঁধে। মনে হলো মিষ্টি অচেনা নতুন একটা ঘ্রাণ আবিষ্কার করলাম এই মাত্র। ক্রমে শক্ত হচ্ছে কৃর বাঁধন। আমারও। সময় কি থেমে গেল? সামনেই দেয়ালঘড়ি। তাকাতে ইচ্ছে করলো না। চুলোয় যাক সময়।
মাথাটা খানিকটা সরালো কৃ। আলিঙ্গনে ঢিল পড়ল। এবার নাক চেপে আছে আমার বুকে। আমি আড়চোখে তাকালাম। কৃর চোখ বন্ধ। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। আমার কী করা উচিত? কৃর চিবুকে হাত রেখে উপরে তুলে চুমু খাওয়া? লুনাকে কোনোদিন বলা হয়নি এমন ইচ্ছের কথা। চোখ বন্ধ হলেও কৃর চোখে স্পষ্ট ব্যথা। লুনার কথা ভেবেছি বলে? নিজেকে অপরাধী মনে হলো।
বদলে যেতে লাগল তার চেহারা। মনে হলো ছাড়িয়ে গেল লুনাকেও। নিখুঁত সেই চিবুক, নাক আর ভ্রƒ আরো নিখুঁত হলো যেন। কৃ নিশ্চয়ই আমার মাথার ভেতর তৈরি করা লুনার রূপবতী চেহারাটা কপি করছে!
ধীরে ধীরে মুখ তুলল। চোখ বোঁজা নেই। পুরোপুরি খোলা। গভীর দৃষ্টিতে আমাকে পড়তে শুরু করেছে। আগাগোড়া পড়া শেষ নিমিষেই। আমি এখন পুরোপুরি উন্মুক্ত তার কাছে। কোনো লজ্জা নেই। বিকার নেই। আমার মনের আনাচে কানাচে যত বিচিত্র চাওয়া, ভয়, ফোবিয়া, স্বপ্ন সব জানা হয়ে গেল কৃর। কৃ-ই এখন আমার একমাত্র প্রেমিকা।
তারপর বোকা বোকা আমি নামিয়ে দিতে লাগলাম আমার ঠোঁট। আমার আগেই খপ করে সেটা নিজের করে নিল কৃ।
কতক্ষণ জানি না। হতে পারে এক মুহূর্ত কিংবা এক ঘণ্টা। কলিং বেলটা বেজে উঠতেই চমকে উঠলাম ফের। এতক্ষণ ভয় পাওয়ার অনেক কারণ থাকলেও পাইনি। এখন ভয়ে রীতিমতো অস্থির হয়ে গেলাম। কে হতে পারে! কারোরই আসার কথা নয় এই ভরদুপুরে।

লেখকের অটোগ্রাফসহ মাত্র ২০০ টাকায় ‘কৃ’ এর হার্ডকপি পেতে এই পেইজে ইনবক্স করুন বা কল করুন ০১৪০৭৩৬৫০৭২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!