Friday, April 26
Shadow

বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করার পরিকল্পনা করছেন?

কবুতর chila বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনআপনি কি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করার পরিকল্পনা করছেন?  উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে ভালোভাবে শেষ পর্যন্ত যত্ন সহকারে পড়ুন।
বাংলাদেশে ঢাকায় আনুমানিক ৪-৭ হাজার কবুতর পালনকারী আছে । সম্পূর্ণ দেশে কবুতর পালনকারীর সংখ্যা  ২৫-৩০ হাজার বা আরো বেশি। কবুতরের জন্য ঢাকার মধ্যেই আছে বেশকটি হাট। প্রধান কবুতরের হাট গুলো হলো মিরপুর-১, গুলিস্তান, টঙ্গি ও জিঞ্জিরা, হাসনাবাদ।
বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যারা নুতন কবুতর পালবেন বলে ঠিক করেছেন বা যারা নতুন করে বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করবেন  তাদের ক্ষেতে সমস্যা আরও বেশি। নুতন কবুতর পালনকারী নিজেদের অজ্ঞতা ও অদক্ষতার কারনে সফলভাবে কবুতর পালন করতে পারেন না। অনেকেই মাঝপথে বন্ধ করে দেন। নতুনদের মধ্যে ৪০-৫০% কবুতর পালার কয়েকমাসের মধ্যেই কবুতর পালা বন্ধ করে দেন। নতুন করে বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করতে গিয়ে যে ভুলগুলো নতুন পালনকারী বেশি করেন থাকেন সেগুলো হল।
দামি কবুতর দিয়ে কবুতর পোষা শুরু করা : নতুনদের অনেকই শুরুতেই অনেক দামি জাতের কবুতর দিয়ে কবুতর পোষা শুরু করেন। এটা অনেকটাই বোকামি। আপনি কোন রকম প্রাথমিক ধারনা, প্রশিক্ষণ ছাড়া দামি জাতের কবুতর দিয়ে খামার শুরু করা মানে পায়ে কুড়াল মারা। কিছুদিন পর বিভিন্ন রকমের সমসায় পড়বেন যার জন্য আপনি এই প্রাথমিক মুহূর্তে প্রস্তুত নন। তখন দামি কবুতর যদি মারা যায়, তবে নিরাশও হবে, মুলধনও হারাবেন।
অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত কবুতর না চেনা : হাট থেকে কবুতর কেনা আর বিয়ের শাড়ি কেনা একই কথা। একশ টা দেখে কিনতে হয় এক জোড়া। কারণ ভালো জাতের ও ডিমপাড়া রানিং কবুতর সহজে কেউ বিক্রি করতে চায় না। কবুতরে সমস্যা থাকলে তবেই লোকজন ধৈর্য ধরে হাটে দাঁড়াতে আসে। এটা মাথায় রেখে হাটে যাবেন। তাই নতুনদের ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত কবুতর কেনার রিস্ক বেশি। তাই কেনার সময় অবশ্যই কবুতর ভালো চেনে এমন কাউকে নিয়ে যাবে। অসুস্থ কবুতর কম দামে কেনার চেয়ে দুয়েকশ টাকা বেশি দিয়ে ভালো জাতের কবুতর কিনুন। অসুস্থ কবুতর নিজে তো মারা যাবেই, সঙ্গে আরো কবুতরকেও আক্রান্ত করে যাবে।
কবুতরের অনুকূল বাসস্থান :  বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করতে গেলে আগেই খাঁচা কিংবা ধাপরি সম্পর্কে জ্ঞান নিন ও সেটা ভালো করে তৈরি করুন।  কবুতর একটি শান্ত, সুন্দর ও শৌখিন পাখির জাত। বাসস্থান যত আলোবাতাস পরিপূর্ণ ও পরিচ্ছন্ন হবে, কবুতর তত ভালো থাকবে ও নিয়মিত ডিম-বাচ্চা করবে। নিয়মিত পানি ও খাবার দেয়া আবশ্যক। নতুনরা যেটা করেন প্রথমে কয়েকদিন অনেক যত্ন নিয়ে থাকেন, পরে সেই যত্নে ঢিল পড়ে। যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানি না দেওয়া, পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার না করা, যখন খুশি খাবার দেয়া ইত্যাদি। এতে কবুতরের খাবারে অনিয়ম দেখা দেয় ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়।  অনেকই কবুতরকে সঠিক খাবার না দিয়ে  মাঝে মাঝে ভাত বা চাল বা পোকামাকড়ও খেতে দেয়। এটাও উচিৎ নয়।
কবুতরের রোগ ও তার মেডিসিন সম্পর্কে জানা : নতুনদের অনেকই কবুতরের রোগ ও তার ওষুধ সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কবুতরকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। কবুতের ঠিকভাবে পালন করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ওষুধেরই প্রয়োজন হয় না। অনেক সময় ভেষজ চিকিৎসাতেও কাজ হয়। যেমন রসুনের পানি, অ্যাপল সিডার ভিনেগার এসব। এসব খাওয়ানোর নিয়ম জানতে হবে। না বুঝে থাকলে একবার কোনো এক পশু চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে সব জেনে আসুন।  তা না হলে দেখা যাবে  আপনার কবুতরের আসলে হয়েছে ডায়রিয়া কিন্তু আপনি দিলেন কৃমির ওষুধ। অস্থুথ কবুতরকে অন্যদের থেকে আলাদা করাও গুরুত্নপূর্ণ।
ছেড়ে দেওয়া : বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করতে গিয়ে অনেকে খেয়ালের বসে কবুতর ছেড়ে পালন করা শুরু করেন। এতে পূর্ণবয়স্ক কবুতর উড়ে চলে যেতে পারে। কারণ তারা তাদের আগে বাসস্থান সহজে ভোলে না।
ফাটা কবুতর চিনে নিন : কবুতরের জাতে ভুল করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে না। ফাটা বলতে বোঝায় কবুতর যে জাতের ও যেমন হওয়ার কথা তারচেয়ে কোনো ব্যতিক্রম আছে কিনা। একটি রঙের মধ্যে অন্য রঙের পালক দেখা যাচ্ছে কিনা ইত্যাদি। কোনো রকম ফাটা না থাকলে ওই জাতের কবুতরের বাজারদর পুরোটাই আপনি পাবেন।
নর মাদির আকার : বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন এর ক্ষেত্রে নর ও মাদির আকারও জরুরি। নর ও মাদি যেন প্রায় একই আকারের হয়। একটা যেন আরেকটার চেয়ে বেশি দুর্বল না হয়।

এ ছাড়া  বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন এর আরো কয়েকটি বড় বিষয়-

নর-মাদি চেনা : কবুতরের নর ও মাদি চেনার প্রথম উপায় হলো ডাক।  খাঁচা থেকে মাদিকে বের করে খাাঁচার সামনে দরজার কাছে মাদিকে ধরে রাখলে দেখবেন নরটা ডাকতে থাকবে। নরের ডাক হয় জোরে। মাদির ডাক চিকন ও আস্তে হবে। সচরাচর মাদিকে ডাকতেই শুনবেন না। তা ছাড়া নরের শারীরিক গঠনও হবে বড়সড়। আবার মাদির ডিম পাড়ার স্থান দেখেও চেনা যায় ওটা মাদি কিনা।
রানিং চেনা : রানিং কবুতর মানে হলো এরা আগে বাচ্চা ফুটিয়েছে ও বড় করেছে। এক্ষেত্রে মাদির ঠোঁট দেখতে একটু বিশ্রিরকম হবে। কারণ সে ঠোঁট দিয়েই বাচ্চাদের খাওয়ায়। খাওয়াতে খাওয়াতে একসময় মাদির ঠোঁট ফুলে যায় ও আঁচিলের মতো হয়।
ডিম চেনা : কবুতর অনেক সময় অনুর্বর ডিমেই তা দিতে থাকে। এতে খামারির সময় নষ্ট হয়। আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে লাভ করতে চান, তবে দামি জাতের কবুতরের ডিম আপনাকে কমদামি কবুতর বা বাঞ্জা কবুতর দিয়ে ফোটাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি বাচ্চা পাবেন বেশি ও কবুতর দ্রুত বিক্রির উপযোগী হবে। ডিম চেনার জন্য ডিম পাড়ার ৫-৬ দিন পর অন্ধকারে ডিমের একপাশে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে দেখুন। ডিমের ভেতর রক্তনালী ও হার্টবিট দেখতে পেলেই বুঝবেন ডিমটা জমেছে।

আরো পড়ুন

কবুতরের সাধারণ কিছু রোগ-সমস্যা ও সেগুলোর চিকিৎসা

 সঠিক কবুতর পালন পদ্ধতি

করোনাভাইরাসের সময় কবুতর নিয়ে কী করবেন?

বাচ্চা কবুতরের রোগ উপসর্গ এডিনো ভাইরাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!