মুলা একটি অতি পরিচিত সবজি। মুলার পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুলা শাক অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এখন খুব সহজেই বাসাবাড়ির বারান্দায় বা বাড়ির ছাদে মুলা চাষ করা যাবে। চলুন জেনে নিই মুলা চাষের বিস্তারিত।
ছাদে মুলা চাষ করতে মাটি তৈরি
সাধারনত বেলে দো আঁশ মাটি মুলা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। ছাদে মুলা চাষ করার জন্য বেড তৈরি করলে চাষে সুবিধা হবে। বেড তৈরি করতে হবে ইট দিয়ে। তবে বেড না থাকলে সিমেন্টের তৈরি বড় টব বা ড্রামে ও মুলা চাষ করা যাবে। মুলা চাষে টবের আকার যথাযথ হবে হবে। টবে যেন ১৫-২০ কেজি মাটি ধরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি আগে তৈরি করতে হবে। মাটির তৈরির জন্য দোআঁশ মাটি ৫০ ভাগ, বালি ৫ ভাগ, গোবর সার ৪০ ভাগ এবং ৫ ভাগ ছাই মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
এছাড়া জমিতে মুলা চাষের জন্য সুনিষ্কাশিত উচুঁ ও মাঝারি উচুঁ জমি বাছাই করতে হবে।
ছাদে মুলা চাষ করতে বীজ বপনের সময়
আশ্বিন মাস থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই মুলার বীজ বপন করা হয়ে থাকে। জমিতে সাধারনত ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়।
বীজ বপন
মুলার বীজ সারিতে বপন করলে সুবিধা হয়। বীজ সাধারনত মাটি থেকে আধা ইঞ্চি নিচে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
ছাই ও জৈব সার ব্যবহারে মুলার ফলন ভালো হয়। ছাদে মুলা চাষ করার জন্য টবের মাটিতে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করতে হবে। টবের মাটিতে গোবর, পচাঁ পাতা, ছাই,খৈল, টিএসপি, পটাশ ইত্যাদি মিশাতে হবে। টবে গাছ লাগালে তরল সার ব্যবহার করা উচিত। এতে ফলন ভালো হয়। ২০০ গ্রাম সরিষার খৈল বা ৫০০ গ্রাম শুকনা গোবর সার ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে দুই দিন রেখে দিতে হবে। এরপর তা টবের মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। তরল সার প্রতি মাসে দুই বার টবের মাটিতে মিশাতে হবে।
এছাড়া বড় পরিসরে জমিতে চাষ করতে হলে বিঘা প্রতি গোবর সার দিতে হবে ১.৫-২ টন। এই সার জমি তৈরির সময় সবটুকু ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া টিএসপি সার ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ কেজি ও পটাশ ২৫-৩০ কেজি ব্যবহার করতে হবে।
পরিচর্যা
বীজ বপন করার ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারা গাছ যেন বেশি ঘন না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছ বেশি ঘন হলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। যেহেতু মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয় তাই সেই গাছ গুলো ব্যবহার করা যাবে। আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। নিয়মিত পানি দিতে হবে।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
ছাদে মুলা চাষ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ আক্রমণ করে থাকে। তার মধ্যে প্রধান একটি সমস্যা হলো মুলার পাতায় দাগ রোগ। এই রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক বা সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও মুলারে গ্রে মোল্ড ছত্রাকজনিত রোগ ও মোজাইক রোগ হয়ে থাকে।
তাছাড়া মুলা গাছে ফ্লি বিটল পোকা, জাব পোকা , বিছা পোকা ইত্যাদি আক্রমন করে থাকে। ফ্লি বিটল পোকা দমনে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক, জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় কীটনাশক ও বিছা পোক দমনে বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
এসব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করার আগে বোতলের গায়ে নির্দেশিত নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করার ৭-১৫ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: টব থেকে পিঁপড়া দূর করবেন কী করে | থাকলো ১৫টি উপায়
ফসল সংগ্রহ
সাধারণত ছাদে মুলা চাষ এ বীজ বপন করার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই মুলা শাক খাওয়ার জন্য উপযোগী হয় এবং ১-১.৫ মাসের মধ্যে মুলা পরিপক্ক হয়।
ছাদে মুলা চাষ নিয়ে লিখেছেন কৃষিবিদ দিলরুবা আফরোজ