মাটিনিউজের আজকের এই লেখায় জেনে নিন বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতির বৃত্তান্ত। বস্তায় এভাবে আদা চাষ করে আপনিও আপনার পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু আয়ও করতে পারবেন। বস্তায় আদা চাষে দরকার হয় না খুব বেশি জায়গা বা জমির।
আদার প্রচলিত জাত সমূহ:
বারি আদা-১,বারি আদা-২,বারি আদা-৩, রংপুরী,খুলনা,টেঙ্গুরী
আদা চাষ পদ্ধতি:
সরাসরি জমিতে ও বস্তায় আদা চাষ করা সম্ভব। বস্তায় আদা চাষে রোগ বালাই আক্রমণ কম হয়।
আদা বপনের সময়:
আদা চাষের উত্তম সময় হলো চৈত্র মাস। তবে বর্তমানে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত আদা বপন করলেও আদা হবে।
আদা চাষের স্থান:
সরাসরি রৌদ্রের চেয়ে সুনিষ্কাশিত, উঁচু এবং হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে আদা উৎপাদন ভালো হয়।
আদা বীজের আকার ও রোপণ দূরত্ব:
৪৫-৫০ গ্রাম ওজনের দুই চোখ বিশিষ্ট কন্দ খণ্ড সারিতে বপন করতে হয়। সারির দূরত্ব ২-৩ ফিট গাছ হতে গাছের দূরত্ব ১৫-২০ সেন্টিমিটার। স্থান ও জাতভেদে দূরত্ব কমবেশি হতে পারে।
বপন পদ্ধতি:
বস্তায় আদা চাষের ক্ষেত্রে প্রতি বস্তায় ২-৩ টুকরো আদা বপন করতে হয়।
অথবা বীজ আদা অন্ধকার স্থানে ১৫-২০ দিন রেখে দিলে আদা থেকে গাছ বের হয় তখন সেই গাছ জমিতে অথবা বস্তায় বসিয়ে দিলেই হয়।
সরাসরি জমিতে চাষাবাদ এর ক্ষেত্রে সুতা ধরে সারিতে বীজ আদা রেখে কোদাল দিয়ে দুইপাশের মাটি দিয়ে ঢেকে দিলে বেড় তৈরি হয়ে যাবে।
বস্তায় মাটি তৈরি:
তিন ভাগ মাটি, একভাগ বালি, এক ভাগ পচা গোবর সার এবং প্রতি কেজি মাটির জন্য ১ গ্রাম রাগবি অথবা ১ গ্রাম “বায়ো নেমেসিস” দানাবিষ।
সারের মাত্রা প্রতি শতকে:
১) পঁচা গোবর ৩০-৪০ কেজি
২) ইউরিয়া ১-১.৫ কেজি
৩) টিএসপি ১-১.৫ কেজি
৪) এমওপি ১-১.৫ কেজি
৫) জীপসাম ৫০০-৬০০ গ্রাম
৬) জিংক ১০০ গ্রাম
৭) ম্যাগনেসিয়াম ১০০ গ্রাম
৮) ভার্মি কম্পোস্ট ২-৩ কেজি
সম্পূর্ণ গোবর এবং টিএসপি, জিপসাম, দস্তা এবং অর্ধেক এমওপি (পটাশ) ও সকল সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া, অর্ধেক ভার্মি কম্পোস্ট ও বাকী পটাশের অর্ধেক ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া, বাকী ভার্মি কম্পোস্ট ও পটাশ ৮০ দিন ও ১০০ দিন পর সমান দুই কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পোকামাকড় ও দমন পদ্ধতিঃ
আদার কান্ড ছিদ্রকারি পোকা অথবা পাতা মোড়ানো লেদা পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন: রিপকর্ড ১০ ইসি বা রেলোথ্রিন ১০ ইসি)প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনাঃ
আদার কন্দপচা রোগ দমনের জন্য সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুমুলাস ৪০ গ্রাম অথবাব গেইভেট ২০ গ্রাম অথবা মনোভিট ২০ গ্রাম)
অথবা
কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক গোল্ডাজিম ১০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করুন।
ফলনঃ
জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ১১২-১২০ কেজি।
সংরক্ষনঃ
আদা উঠানোর পর বড় আকারের বীজ কন্দ ছায়াযুক্ত স্থানে বা ঘরের মেঝেতে বা মাটির নিচে গর্ত করে গর্তের নিচে বালির ৫ সেমি/ ২ ইঞ্চি পুরু স্তর করে তার উপর আদা রাখার পর বালি দিয়ে ঢেকে দিন। পরে খড় বিছিয়ে দিয়ে ঢেকে দিন। এতে আদার গুনাগুন এবং ওজন ভাল থাকে। গর্তে সংরক্ষণ করার পূর্বে বীজ আদা ০.১% কুইনালফস এবং ০.৩ % ডায়াথেন এম-৪৫ এর দ্রবণে শোধন করুন। উক্ত দ্রবণ থেকে উঠিয়ে কন্দ ছায়ায় শুকিয়ে নিন। গর্তের দেওয়ালের চারিদিকে গোবরের তৈরী পেস্ট দিয়ে প্রলেপ দিয়ে শুকিয়ে আদা রাখুন। আদার প্রতি স্তরের উপর ২ সেমি. পুরু শুকনো বালি বা করাতের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিন। বায়ু চলাচলের জন্য গর্তের উপরিভাগে ও পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখুন।
বিঃদ্রঃ বস্তায় আদা চাষে খরচা বেশি হলেও রোগবালাই এর আক্রমণ কম হয়।
সোহেল রানা
উপসহকারী কৃষি অফিসার
সময়োচিত কৃষি বিষয়ক পরামর্শ পেতে Shuhal Rana আইডি অনুসরণ করুন।