Saturday, December 21
Shadow

চীনের আবিষ্কার : স্টার ফ্রাই | Made In China

মানুষ রান্না করে খেতে শিখেছে অনেক অনেক আগে। তবে মজার সব খাবারের রেসিপি এসেছে খুব বেশিদিন হয়নি। তবে এমন এক মজার রান্নার কৌশল আছে, যা কিনা আবিষ্কার হয়েছিল আজ থেকে দুই হাজার বছরেরও বেশি আগে। রান্নার এই ধরনটিকে বলা হয় স্টার ফ্রাইং বা দ্রুত নেড়েচেড়ে ভাজা। এ কৌশলের কারণেই বলা যায় আমাদের রোজকার খাবারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেক বেশি সবজি। এমনকি যারা সবজি পছন্দ করেন কম, তারাও কিন্তু স্টার ফ্রাই করা সবজি পেলে মজা করেই খান। রান্না করার জনপ্রিয় এ উপায়টি কিন্তু পুরোপুরি মেড ইন চায়না।

প্রচণ্ড উত্তপ্ত কড়াইতে অল্প তেলে দ্রুত নেড়েচেড়ে ভাজাই হলো স্টার ফ্রাইং। চীনা ভাষায় যাকে বলা হয় ছাও। দুই হাজার দুই শ বছর আগে হান রাজবংশের সময় পদ্ধতিটি আবিষ্কার হয়।

স্টার ফ্রাইং করা হয় বড়সড় গোলাকৃতির কড়াইতে। এটাও বলে রাখা যায় যে, ওই কড়াইটা কিন্তু চীনেরই আবিষ্কার।

কেন চীনারা আবিষ্কার করেছিল ছাও বা নেড়েচেড়ে ভাজার পদ্ধতি? ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল, কড়াই আবিষ্কারের পর হান রাজবংশের সময় স্টার ফ্রাইং করা হতো শস্যদানা। পরে ৬১৮ থেকে ৯০৭ সাল পর্যন্ত চলমান থাং রাজবংশের সময় উত্তপ্ত কড়াইতে চা পাতা ভাজার প্রক্রিয়াকে বলা হতো ছাও। এরও অনেক পরে চারশ থেকে সাড়ে চারশ বছর আগে মিং রাজবংশের সময় এ পদ্ধতিতে রান্না করার চল শুরু হয়। কারণ, এ পদ্ধতিতে রান্না করতে ভোজ্যতেল লাগতো কম। আর যখন এ পদ্ধতি আবিষ্কার হয়, তখন ভোজ্যতেল ছিল ভীষণ দুষ্প্রাপ্য একটা বস্তু। অর্থাৎ চীনাদের এ আবিষ্কার না হলে একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত  মানুষজন সবজি খাওয়ার মজা থেকেই বঞ্চিত হতো।

সপ্তদশ শতকের দিকে চীনের দেখাদেখি ছাও বা নেড়েচেড়ে ভাজার পদ্ধতির কথা জানতে পারে পূর্ব এশিয়ার লোকজন। এর আরও অনেক পরে যথারীতি এর সন্ধান পায় ইউরোপ ও আমেরিকা। আর এখন তো স্টার ফ্রাই করা সবজি পেলে বর্তে যায় শিশুরাও।   

  • এ প্রক্রিয়ায় কম তেলে মুচমুচে করে ভাজা যায়। এটি একদিকে যেমন শরীরের জন্য ভালো, তেমনি খাবারটিও হয় সুস্বাদু।
  • সবজি থেকে শুরু করে তোফু, মাছ ও মাংসসহ প্রায় সব ধরনের খাবারই স্টার ফ্রাই করা যায়। এ প্রক্রিয়ায় রান্না করতে বেশি সময়েরও প্রয়োজন হয় না।
  • ছাও বা স্টার ফ্রাই প্রক্রিয়ায় খাবার তৈরি করলে তাতে খাবারের পুষ্টিগুণ ও নিজস্ব স্বাদ টিকে থাকে।
  • রান্না শেখার হাতেখড়ি করা যায় স্টার ফ্রাইং দিয়ে। কয়েকটি বিশেষ পদ্ধতি বাদ দিলে স্টার ফ্রাইংই রান্নার সবচেয়ে সহজ কৌশল।

স্টার ফ্রাই করার কিছু শ্রেণিবিন্যাস আছে। এর মধ্যে বেশি প্রচলিত বাও টেকনিক। আঠারো শতকের শেষের দিকে চীনের শানতোংয়ে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়।

এতে কড়াইটাকে উত্তপ্ত করে একেবারে গণগণে লাল করে ফেলা হয়। এরপর তাতে খাবার ও অন্যান্য উপকরণ দ্রুত মিশিয়ে ক্রমাগত টস করে যেতে হয়। এ কাজে থাকা চাই বিশেষ দক্ষতা। বাও টেকনিকে রান্না করার সময় কড়াইতে তৈরি হয় আগুনের হলকা। এতে সবজি ও মাংসে পাওয়া যায় বারবিকিউর স্বাদ।

চীনের আবিষ্কার স্টার ফ্রাইংয়ের কিছু উপকারের কথা শোনা যাক এবার

  • খাবার সেদ্ধ করে রান্না করা হলে তাতে উপকারী আমিষ, দ্রবণীয় শর্করা, ভিটামিন ও অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায়। স্টার ফ্রাই করলে এ উপাদানগুলো কমে না। বিশেষ করে সবজিতে ভিটামিন সি অক্ষুণ্ন রাখতে চাইলে সেটাকে ছাও বা স্টার ফ্রাই করেই খাওয়া উচিত।
  • পরীক্ষায় দেখা গেছে, স্টার ফ্রাই করা হলে ব্রকোলির ভেতরকার ক্লোরোফিল, প্রোটিন, সুগার ও ভিটামিন সি অক্ষত থাকে।
  • কিছু চীনা ভেষজ ওষুধ তৈরিতেও স্টার ফ্রাইং বা ছাও প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।

অবশ্য শুনতে সহজ মনে হলেও ছাও বা স্টার ফ্রাই করতে গেলে কিছু বিষয় আগে থেকেই জানা থাকা চাই। যেমন-

  • স্টার ফ্রাই করার আগে রান্নার সমস্ত উপকরণ তৈরি করে রাখা চাই।
  • অল্প পরিমাণে স্টার ফ্রাই করতেও বড় আকারের কড়াই ব্যবহার করা উচিত। এতে দ্রুত নাড়াচাড়া ও টস করা যাবে সহজে।
  • স্টার ফ্রাই করার ক্ষেত্রে বাদামের তেল, সয়াবিন বা ক্যানোলা অয়েল ব্যবহার করা হয়। অনেক বেশি উত্তপ্ত করতে হয় বলে এ রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয় না।
  • বেশি পরিমাণে স্টার ফ্রাই করতে হলে একসঙ্গে সব না দিয়ে ব্যাচ করে ভাজতে হবে।

স্টার ফ্রাই করা একটি চীনা রেসিপি

পাতলা করে কাটা হাড় ছাড়ানো ২০০ গ্রাম মুরগির মাংস এবং সমানভাবে টুকরো করা ১ কাপ ব্রকলি নিন। এক্ষেত্রে পছন্দমতো অন্য সবজিও ব্যবহার করা যাবে। ১ টেবিল চামচ তেল, ২ কোয়া রসুন কুচি, ১ টেবিল চামচ সয়া সস, ১ টেবিল চামচ অয়েস্টার সস, ১ চা চামচ তিলের তেল, ১ চা চামচ কর্নস্টার্চ এবং স্বাদমতো লবণ ও মরিচ নিন।

প্রথমে একটি ছোট পাত্রে মুরগির টুকরোগুলো লবণ, গোলমরিচ এবং এক চা চামচ সয়া সস দিয়ে মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন।

ব্রোকলির টুকরোগুলো গরম পানিতে ১ মিনিট ফুটিয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিন।

উচ্চ তাপে বড় কড়াইতে তেল গরম করুন। এতে রসুন দিয়ে ১০ সেকেন্ড নাড়ুন। তাতে মুরগির টুকরোগুলো দিন এবং সাদা না হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত নাড়ুন। এক্ষেত্রে তিন মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে।

এরপর ব্রোকলি, সয়া সস, অয়েস্টার সস এবং তিলের তেল দিন। সবকিছু নাড়ুন ও টস করুন।

রান্নায় ঘন সস চাইলে কর্নস্টার্চে সামান্য পানি যোগ করে আরও ১-২ মিনিট নাড়ুন। খাবারটি পরিবেশন করা যায় গরম ভাতের সঙ্গে।

ছাও বা স্টার ফ্রাই শুধু একটি দ্রুত রান্নার পদ্ধতিই নয়, এটি সবজির পুষ্টি মান সংরক্ষণেরও একটি অনন্য উপায়। অভিজ্ঞ বাবুর্চি বা শিক্ষানবিশই যেই হোক না কেন স্টার ফ্রাইংয়ে সুস্বাদু খাবার রান্না করাটা সহজ এবং উপভোগ্য। হাজার বছর আগের চীনা এ রন্ধনশৈলী কাজে লাগিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রাণবন্ত সবজি বা মাংস রান্না করে আপনিও হয়ে যেতে পারবেন দুর্দান্ত রাঁধুনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!