class="post-template-default single single-post postid-53300 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

মেড ইন চায়না : নেইল পলিশ

নিজেকে সাজাতে কে না ভালোবাসে। নিজেকে একটু আলাদা করে উপস্থাপন করতেই দেখা গেল, সেটা আরেকজনের নজর কাড়ছে। আর এভাবেই তৈরি হয় একটি ট্রেন্ড বা ধারা। আর সেই ধারা যখন দিনে দিনে একটি গোষ্ঠী বা বড় অঞ্চলকে প্রভাবিত করে, তখন তা পরিণত হয় ফ্যাশনে। যুগে যুগে নানা ধরনের প্রসাধনী আবিষ্কার হয়েছে এ প্রক্রিয়াতেই। তবে পাঁচ হাজার বছর আগের একটি প্রসাধনী যে এখনও বহাল তবিয়তে টিকে আছে সেটা জানলে অবাকই হতে হয়। বলছিলাম চীনের আবিষ্কার নেইল পলিশের কথা। নথিপত্রে জানা গেল, খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার সাল, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে চীনের বাসিন্দারা নখে রং লাগাতো। দুই হাজার ছয়শ বছর আগে চৌ রাজবংশের শাসনামলে নখে রং করার সেই ট্রেন্ড বা ধারাটি পরিণত হয় ফ্যাশনে। এখন নেইল পলিশের বাজারে ইউরোপ বা আমেরিকান ব্র্যান্ডগুলো যতই বাজার দাপিয়ে বেড়াক না কেন, নেইল পলিশ কিন্তু পুরোপুরি মেড ইন চায়না।

history of nail polish 1

চীনের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চৌ রাজবংশের সময় নেইল পলিশ জনপ্রিয় হয়। ওই রাজবংশের বাসিন্দাদের নখে শোভা পেত সোনালী ও রূপালি রঙ। পরে অবশ্য রাজ পরিবারের বাসিন্দারা নিজেদের সামাজিক মর্যাদা ফুটিয়ে তুলতে বেছে নেন লাল ও কালো রঙের নেইল পলিশ। তবে ওই সময় সেই অর্থে আধুনিক নেইল পলিশ ছিল না। কোনো একটি রঞ্জক পদার্থ নখে ঘষে করা হতো রং। এর অনেক পরে চতুর্দশ শতকের মিং রাজবংশের সময়ই প্রথম কার্যকর নেইল পলিশের আদি ফর্মুলা আবিষ্কৃত হয়। বিসওয়াক্স, ডিমের সাদা অংশ, জেলাটিন, সবজির রং এবং গাম অ্যারাবিক নামের একটি বাইন্ডার তথা আঠাল পদার্থের মিশ্রণে তৈরি করা হতো সেই নেইল পলিশ। ওই ফর্মুলার আধুনিক সংস্করণে ব্যবহার করা হয় নাইট্রোসেলুলোজ, প্লাস্টিসাইজারের মতো কিছু উপাদান।

এবার নেইল পলিশ নিয়ে কিছু তথ্য শোনা যাক

  • এখন নারীদের নখেই দেখা যায় নেইল পলিশ। তবে প্রাচীন চীনে নেইল পলিশ পুরুষরাও ব্যবহার করতো। ওই সময় নেইল পলিশ  শুধু সাজগোজের বস্তু ছিল না, ছিল সামাজিক মর্যাদারও চিহ্ন। এমনকি, যুদ্ধে যাওয়ার আগে চীনের যোদ্ধারাও তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী লাগাত নেইল পলিশ। উচ্চপদে থাকা সেনারা লাগাত কালো এবং অধীনস্তরা লাগাত সবুজ রঙের নেইল পলিশ। চীনা ওই যোদ্ধারা নেইল পলিশ লাগিয়ে শত্রুপক্ষকে এটা জানাত যে, তারা মোটেও ভীত নয় এবং কালো নেইল পলিশ লাগানোর মানে এমন ছিল যে, আমাকে তোমার ভয় পেতেই হবে। এতে করে শত্রুসেনাদের মনে এক ধরনের ভীতি তৈরি হতো বলেও ধারণা করা হতো।
  • মিং রাজবংশের সময় চীনের অভিজাত পরিবারের বাসিন্দারা তাদের নখের যত্নে ম্যানিকিওর করাতেন। নেইল পলিশ যাতে চকচক করে এ জন্য নখের ওপর পাতলা সোনার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হতো ওই সময়।
  • চীনে আবিষ্কার হওয়ার চার হাজার আটশ বছর পর অষ্টাদশ শতকের দিকে ইউরোপে আসে নেইল পলিশ। 

নেইল পলিশের ব্যবসাবাণিজ্যের কিছু তথ্য জানা যাক এবার

বিশ্বে এখন নেইল পলিশের নামিদামি অনেক ব্র্যান্ড আছে ঠিকই। এগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় কিছু ব্র্যান্ড বাজারে আধিপত্য ধরে রাখলেও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নেইল পলিশ উৎপাদন হয় চীনে। জেল নেইল পলিশ রপ্তানির তালিকায়ও শীর্ষে আছে চীন। দেশটির কুয়াংতোং প্রদেশে তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি জেল নেইল পলিশ। এ ছাড়া চেচিয়াং ও ফুচিয়ানও নেইল পলিশ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

বিশ্বে এখন নেইল পলিশের বাজার আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চলতি বছর চীনের নেইল পলিশ বাজারের আয় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবার নেইল পলিশ তৈরির নিত্য নতুন কৌশল ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন উপাদান ব্যবহারেও এগিয়ে আছে চীন।

কয়েক বছর আগে উত্তর চীনের বাওতৌ শহরে তৈরি করা হয়েছিল এমন এক নেইল পলিশ যার উপকরণ ছিল আর্টেমিসিয়া সিড গাম নামের একটি জৈব উপাদান। লাল রঙের সামুদ্রিক অ্যালজি থেকে পাওয়া যায় উপাদানটি। এটি তেলভিত্তিক নেইল পলিশগুলোর মতো ক্ষতিকর বা দাহ্যনয়। আবার পানিতেও এর উজ্জ্বলতা কমে যায় না।

এবার নেইল পলিশ নিয়ে কিছু টিপস জানা যাক

নেইল পলিশ লাগানোর পর সেটা আবার ওঠাতেও হয়। এ কাজে ব্যবহার করা হয় পলিশ রিমুভার। তবে হাতের কাছে রিমুভার না থাকলে ব্যবহার করতে পারেন টুথপেস্ট। টুথপেস্টে থাকা ইথাইল অ্যাসিটেট নামের রাসায়নিকটি রিমুভারের কাজ করে। একই কাজ করতে পারে ডিওডরেন্ট বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারও।

নেইল পলিশ দীর্ঘস্থায়ী করার কিছু উপায় আছে। প্রথমত, একবারে পুরু করে না লাগিয়ে, কয়েকবার করে পাতলা স্তরে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার কোটিং করার পর অন্তত তিন মিনিটের গ্যাপ রাখতে হবে।

নেইল পলিশ লাগানোর সময় নখের কোনো অংশ যেন বাদ না যায়। বাদ রাখলে সেখান থেকেই পলিশ উঠতে শুরু করবে দ্রুত।

অনেকেরই নখ কামড়ানোর বদঅভ্যাস থাকে। এমনটা থাকলে নেইল পলিশ ব্যবহার না করাই ভালো। এতে করে নেইল পেইন্টের রাসায়নিকগুলো শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

নেইল পলিশ গরম বাতাসে দ্রুত শুকাতে যাবেন না। গরম বাতাসে শুকালে নখে পেইন্ট জমে বাবল তৈরি হতে পারে। এমন হলেও নেইল পলিশ দ্রুত উঠে যাবে। তাই ফ্যানের শীতল বাতাসে শুকাতে হবে নেইল পলিশ।

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!