class="post-template-default single single-post postid-21166 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

আয় ঘুম আয়

ঘুমসারা দিনের কাজকর্ম, যানজট, হাট-বাজার আর হাঁটাহাঁটি শেষে ডেরায় ফিরে আসার পর চাই শান্তির ঘুম । কিন্তু হায়! মাথা চাপড়ে কেউ কেউ বলে, এ অভিশাপ কাটাই কী করে! ঘুম কেন এত পাতলা! আর কেউ কেউ তো ডেবে যাওয়া চোখে রাতের আকাশে নির্বাক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন, এরই নাম তবে ইনসমনিয়া!

ঘুমের কেতাবি আলোচনায় যাওয়া যাক এবার। ঘুম আছে দুই রকম। র‌্যাম-স্লিপ ও নন-র‌্যাম স্লিপ। এই র‌্যাম কিন্তু কম্পিউটারের র‌্যাম নয়। এটা হলো র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট। ঘুমের এ পর্যায়ে স্বপ্ন দেখে মানুষ। চোখের মণি নড়াচড়া করে দ্রুত। স্বাভাবিক ঘুম চক্রের ২৫ শতাংশজুড়ে থাকে র‌্যাম স্লিপ। ভোরের দিকে এমনটা হয় বেশি। অন্যদিকে নন র‌্যাম স্লিপের আছে আরো চার ভাগ—হালকা ঘুম (প্রথম পর্যায়) থেকে ধীরে ধীরে গাঢ় ঘুম (চতুর্থ পর্যায়)। স্বাভাবিক নিদ্রার এই চক্রে ব্যাঘাত ঘটলেই দেখা দেয় ঝামেলা। ঝামেলার হাত ধরে দেহঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে উল্টোপাল্টা। জেঁকে বসে নানা ধরনের অসুখ। ঘুমেই  যে লুকিয়ে আছে অনেক অসুখের প্রতিকার।

এবার চলুন যাই ঘুম না আসার ব্যাখ্যায়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক কত কারণই তো আছে। চাইলেও তাড়ানো যায় না চিন্তাগুলো। তাই বলে ঘুমহারা পাখি হয়ে রাত জেগে থাকাটা তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

কী করবেন?

সবার আগে চাই সময়মতো পুষ্টিকর খাবার। ব্যায়াম, মেডিটেশনটাকে বানিয়ে ফেলতে হবে জীবনের দ্বিতীয় সঙ্গী। স্মার্টফোন হাতের সঙ্গে আঠার মতো লেগে আছে? চিন্তা নেই। ইনস্টল করে নিন গাদাখানেক ঘুমের অ্যাপস! যেমন—পিজিজ, স্লিপ সাইকেল, স্লিপ জিনিয়াস, রিলাক্স অ্যান্ড স্লিপ ওয়েল হিপনোসিস—সবই এ যুগের ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি।

কিভাবে কাজ করে অ্যাপসগুলো? অ্যাপসের একটা বড় কাজ হলো নানা রকম শব্দতরঙ্গ তৈরি করা। যাদের সুরের মূর্ছনা সহজে কাবু করে, তাদের জন্য সে ব্যবস্থাও আছে। আবার ভেড়া গোনার মতো কিছু চলমান দৃশ্য আমাদের স্নায়ুকে করে তুলতে পারে শান্ত। অর্থাৎ ঘুমের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হয় শরীর।

 

ঘুমের অ্যাপসগুলোরও আবার রকমফের আছে। রাতভর ঘুমানো জন্য রয়েছে স্লাম্বার, স্লিপ সাইকেল, ১০০% হ্যাপিয়ার, স্লিপ অ্যাজ স্লিপ সাউন্ডস, স্লিপো ইত্যাদি অ্যাপস। এছাড়া হালকা ঘুমের জন্যও আছে রিল্যাক্স মেলোডিস, সিয়েস্তাসহ বেশ কিছু অ্যাপস। হালকা ঘুমের সময় সাধারণত ১৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার হয়ে থাকে। দুপুরে খাবারের পর চট করে ঘুমিয়ে নিতে হালকা ঘুমের অ্যাপসের সাহায্য নিতে পারেন। ঘুম তো হলো। সকালে সময়মতো ঘুম থেকে না উঠতে পারার ভোগান্তি অনেক। অনেকের আবার সকালের ঘুম প্রিয়। রাতে যতই ঘুমান সকালের আলোতে সেই ঘুম যেন আরো আরামদায়ক হয়ে ওঠে! চিন্তা নেই। ঘুম পাড়ানোর পাশাপাশি ঘুম থেকে ডেকে দেওয়ার অ্যাপসও আছে হাতের কাছেই। সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম তো ভাঙবেই, পাশাপাশি জেগে উঠতে নিশ্চিতভাবে বাধ্য করবে। তেমনই কয়েকটি অ্যাপস—ওয়াক মি আপস, অ্যালার্মি, ওয়েক এন্ড শেক, আই ক্যান নট ওয়াক আপ ইত্যাদি।

 

এসব অ্যাপসের অ্যালার্ম বন্ধ করার জন্য এমন সব উপায় বেছে নেওয়া হয়েছে যে ঘুম থেকে পুরোপুরি না জেগে উপায় নেই। কোনোটিতে হয়তো বিছানা ছেড়ে চারপাশে হাঁটাহাঁটি করতে হবে কিংবা রান্নাঘর, বাথরুম বা নির্দিষ্ট কোনো স্থানের একটি ছবি তুলতে হবে। আবার কোনোটিতে শরীরের শক্তি দিয়ে মোবাইল ঝাঁকাতে হবে। অ্যালার্ম বন্ধের জন্য এমনি আরো বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে রয়েছে—গণিত সমাধান, স্মৃতি সমাধান এবং লজিক সমাধান, বারকোড স্ক্যান করা, কোনো শব্দ বা বাক্য লেখা।

এবার স্বাভাবিক ঘুমের জন্য কিছু টিপস। ঘুমের আগে দম চর্চা করুন নিয়মিত। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার একটা পদ্ধতি আছে। পদ্ধতির নাম ৪-৭-৮। ৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিন। ৭ সেকেন্ড দম আটকে রাখুন। এরপর ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এটাকে দমের ব্যায়াম বলে। এভাবে কিছুক্ষণ করলেও ঘুম আসবে। ঘুমপাড়ানি গান বাছাই করুন। হালকা শব্দে পছন্দের গান অথবা ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক শুনুন। গানের কথায় মন হারিয়ে বসবেন না। দরকার হলে মন খারাপ করা গান বাদ দিন। প্লে-লিস্টে থাকুক শুধু বাদ্যযন্ত্র। তাতেই বরং ঘুম দ্রুত আসবে। ঘুমের আগে মনকে বলুন, ‘জোর করে জেগে থাকতে হবে’। ভুল শোনেননি! পোলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে জোর করে জাগিয়ে রেখে বই পড়ুন, ডায়েরি লিখুন। শরীরটাই তখন চোখ বাঁকিয়ে ঘুমের সিগনাল দিতে থাকবে। হালকা ব্যায়াম করে নিন। মেডিটেশনটা শিখে নিতে পারলে তো কথাই নেই। ঘুম আসবেই।

 

মেরামত করে নিন দেহঘড়ি (যাকে বলে বায়োলজিক্যাল ক্লক)। ছোটবেলায় আমাদের সবারই সময়মতো ঘুমুতে যাওয়ার অভ্যাস ছিল। বড় হতে হতে সেটা কোথায় যে হারিয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ান স্লিপ হেলথ ফাউন্ডেশনের মতে, আমাদের শরীরের ভেতর একটা ঘড়ি আছে। হরমোন হলো ওই ঘড়ির ব্যাটারি। এটাই আমাদের ঘুম ও জেগে থাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ঘড়িটা ঠিকঠাক কাজ করবে তখনই, যখন আমাদের ঘুমের রুটিন ঠিক থাকবে। স্লিপ হেলথ ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডেভিড হিলম্যান জানিয়েছেন দেহঘড়ি ঠিক রাখার কিছু টিপস—প্রথমত, ঘুমের কয়েক ঘণ্টা আগে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলকে না বলুন। রাতে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান ঘুমের র‌্যামচক্র নষ্ট করে। এটা ঘুমের গভীরতম ধাপ। এটা নষ্ট হওয়ার মানে যতই ঘুমান না কেন ঘুমের আসল কাজটুকু হবে না। আবার নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণে শরীরের স্বাভাবিক মেলানটোনিনের (ঘুমের হরমোন) মাত্রা কমে যায়। এতেও অনিদ্রাটা চিরস্থায়ী হয়ে যেতে পারে। একই কথা চা-কফির বেলায়ও খাটবে।

টিভি, কম্পিউটার গেইম কিংবা বিছানায় শুয়ে ফোনে এটাওটা দেখার অভ্যাস দিন দিন লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, ডিসপ্লেওয়ালা যন্ত্রগুলো থেকে স্বল্প তরঙ্গের নীল আলো নিঃসৃত হয়। এটাও মেলানটোনিন তৈরিতে বাধা দেয়।

যাঁরা চাকরি করছেন তাঁদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা জরুরি। অফিসের কাজ ফেলে আসা গেলেও মানসিক চাপ রেখে আসা যায় না। বাড়ি ফিরলেও মাথাভর্তি অস্থিরতা থাকেই। ঘুম ভাগাতে সেটাও দায়ী। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে একজন মানুষকে অতিরিক্ত সময় কাজেকর্মে নিযুক্ত থাকতে হয়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই কর্মীর ঘুমের প্রতি নজর রাখা চাই কর্তৃপক্ষেরও। কদিন আগে এক খবরে দেখা গেল, জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের কাজের ফাঁকে ঘুমের জন্য ভাতাও দিচ্ছে! আখেরে সুফলই আসবে। কারণ ঝরঝরে ঘুম মানে মগজ ছুটবে রকেট গতিতে। বাড়বে উত্পাদন। আসবে নতুন পরিকল্পনা!

শেষ কবে ভালো একটা বই পড়েছেন বলুন তো? ছোটবেলার সেরা সত্যজিৎ কিংবা রুশ দেশের উপকথার গল্পগুলো মনে আছে? তাই বলছি, ঘুমের ওষুধের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে আগে পছন্দের বই কিনুন। ঘুমানোর আগে ঘণ্টাখানেক সময় রাখুন বই পড়ার জন্য। বিছানায় বেড ল্যাম্প জ্বালিয়ে একখানা মজার বই পড়েই দেখুন না! কোথায় হারিয়ে যাবে যাবতীয় দেনা-পাওনার দুশ্চিন্তা টেরই পাবেন না। চোখ বুজে হারিয়ে যেতে পারেন অনেক অনেক আগের কোনো এক রূপকথার রাজ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!