Monday, December 23
Shadow

শখের কবুতরের কিছু রোগ, প্রতিকার এবং টিপস

pigeon কবুতরের

কবুতরের পক্স/বসন্ত/পিজিয়ন পক্স

কবুতরের পক্স ভাইরাস জনিত রোগ। আμানÍ কবুতর থেকে সকল ভাইরাস জনিত রোগ অন্য সুস্থ কবুতরে ছড়ায়,তেমনি পক্স আμান্ত কবুতর থেকে ভাল কবুতরে ছড়ায়। পক্স চামড়া ও মিউকাস মেমব্রেনকে আμান্ত করে,চোখের পাতার আশে পাশে ছোট ছোট বলের মত গুটি দেখা দিতে পারে।

পক্স/পিজিয়ন পক্স টিকাÑ ৩ থেকে ৭ দিন বয়সে কবুতরের পাখার মধ্যে তিনকোনা আকৃতির মাংসবিহীন চামড়া খুচিয়ে দিতে হবে।

রোগের ভ্যাকসিন/টিকা রেফ্রিজারেটরে ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রায় সংরক্ষন করতে হবে। ভ্যাকসিন প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর,পশু হাসপাতাল কিংবা ভ্যাটেরিনারী দোকান থেকে সংগ্রহ করতে হবে। উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদাউত্তীর্ণের তারিখ দেখে কিনতে ভুলবেন না।

ভ্যাকসিন অবশ্যই সুস্থ কবুতরকে করতে হবে। ভ্যাকসিন করার আগে কবুতরকে লিভার টনিক ও মাল্টিÑভিটামিন কোর্স করাতে হবে।

পক্স প্রতিকারের জন্য হোমিও ম্যালানড্রিনাম ৩০ ১সিসি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২-৩ দিন দিতে পারেন।

 

ককসিডিওসিস

প্রায় সব কবুতর এ রোগে আμান্ত হয়। ককসিডিওসিস প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। কম বয়সী কবুতর এই রোগে আμান্ত হয় বেশী। চুনা পায়খানা,পায়খানার সাথে রক্ত,ঠিক মত দাড়িয়ে থাকতে পারেনা,ওজন কমে যাবে,খাদ্য কম খাবে,রক্তশূন্যতায় এক সময় মারা যাবে ইত্যাদি এই রোগের লক্ষন।

এলোপ্যাথিকঃ অ্যামপ্রোলিয়াম, হাইড্রোডোনাইড, অ্যামপ্রো, কোনিড ইত্যাদি ককসিডিওসিস প্রতিকারে ভাল কাজ করে।

কবুতরের ঘাড় টাল রোগ বা নেক প্যারালাইসিস হলে করণীয়

টাল রোগ সকল কবুতর পালক কিংবা খামারীদের কাছে অন্যতম প্রধান রোগ। এটি ব্যকটেরিয়া জনিত রোগ,প্যারাটাইফয়েড ব্যকটেরিয়ার কারনে এই রোগ হয়। হঠাৎ করে এই রোগ দেখা দেয়না,রোগ ভাল করতে বেশ সময় লেগে যায়। কবুতরের ঘাড় অবশ হয়ে যাওয়া,দাড়িয়ে থাকতে না পারা,উড়তে গেলে পড়ে যাওয়া,ঘুরতে থাকা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষন। ভিটামিন বি এর অভাবে এই রোগটি বেশী দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ আμান্ত কবুতরকে প্রতিদিন সকালে ‘নিউরো বি’ ইনজেকশান ০.২৫ সিসি বুকের নরম স্থানে দিতে হবে পরপর ১০ থেকে ১৫ দিন(১৫ দিনের বেশী দেওয়া যাবে না)। সেই সাথে নিউরো বি/নিউবিয়ন/নিউরো কেয়ার বা এ জাতীয় ট্যাবলেট দিতে হবে,,প্রতি কবুতরকে একটি ট্যাবলেটের অর্ধেক অংশ দিনে একবার খাওয়াতে হবে । কবুতর যদি নিজে খাবার খেতে না পারে,তাকে হ্যান্ড ফিডিং বা তুলে খাওয়াতে হবে । দিনে দুইবার রাইস স্যালাইন ২০ থেকে ৩০ মি,লি খাওয়াতে হবে । কবুতরের ঘাড় টাল রোগ প্রতিরোধ করতে কবুতরকে প্রতি সপ্তাহে একদিন মাল্টিভিটামিন/ভিটামিন বি খাওয়াতে হবে। আপনি স্কয়ারের লিভওয়েল সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন,২.৫ মি.লি সিরাপ ৫০ মি.লি পানিতে মিশিয়ে অন্তত সপ্তাহে একদিন দিতে চেষ্টা করবেন । সিরাপ পানিতে মেশানোর ৬ ঘন্টা পর অবশিষ্ট দ্রবন ফেলে দিবেন,আর সিরাপের বোতলের মুখ খোলার পর ১ মাসের মধ্যে ব্যবহার করবেন।
লিভওয়েল একটি নিরাপদ মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল সল্যুশান। এতে যতগুলি উপাদান আছে বাজারের অন্য কোন মাল্টিভিটামিন সিরাপে নেই ।

রাণীক্ষত রোগের টিকাদান কর্মসূচি

১.বিসিআরডিবি ১ থেকে ৭ দিন বয়সের সময় ও ২২ থেকে ২৮ দিন বযসের সময় ১ ফোটা করে এক চোখে। বিসিআরডিবি ৬ মিলি পানিতে গুলিয়ে ১০০ টি কবুতরকে দিতে হবে।

২.আরডিভি ২ মাস বা তার চেয়ে বেশী বয়সের প্রতি কবুতরের রানে ১ মিলি। আরডিবি ১০০ মিলি পানিতে গুলিয়ে ১০০ টি কবুতরকে দিতে হবে।

রাণীক্ষত রোগের ভ্যাকসিন/টিকা রেফ্রিজারেটরে ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রায় সংরক্ষন করতে হবে। ভ্যাকসিন প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর,পশু হাসপাতাল কিংবা ভ্যাটেরিনারী দোকান থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

ভ্যাকসিন অবশ্যই সুস্থ কবুতরকে করতে হবে। ভ্যাকসিন করার আগে কবুতরকে লিভার টনিক ও মাল্টিÑভিটামিন কোর্স করাতে হবে।

টিকা দেওয়ার আগে ও রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন ভ্যাটেরিনারী ডাক্তারের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন ।

 

 

সালমেনোসিস/সালমোনিল্লা

শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো পায়খানা,ফেনা ও দূর্গন্ধযুক্ত ডাইরিয়া,দেহ μমাগত শুকিয়ে যাওয়া,ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত সালমেনোসিস রোগের লক্ষন।

এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে ঔষধ দিতে হবে,না হলে হীতে বিপরীত হবে। সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস দিতে হবে।

কবুতরকে পরিস্কার খাবার ও পরিচ্ছনড়ব পরিবেশ থাকলে এই রোগ থেকে ৭০% দূরে থাকা যায়।

গম,চিনা,রেজা,বাজরা সরিষা ইত্যাদি বাজার থেকে কিনে এনে ধুয়ে শুকিয়ে নিলেই চলবে।

 

ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া প্রোটোজোয়া জনিত রোগ,ম্যালেরিয়া রক্তের লোহিত রক্ত কণিকাকে ধ¦ংস করে। কবুতর আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে,হাটতে পারেনা,ঘাড় বাকিয়ে চলাফেরা করে,দৃষ্টির অস্পষ্ঠতা ইত্যাদি ম্যালেরিয়া রোগের প্রধান লক্ষন। ম্যালেরিয়া প্রতিকারের জন্য এন্টি-ম্যালেরিয়া দিতে হবে,এক্ষেত্রে মেলোনোসাইড সবচেয়ে কার্যকরি। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ -সম্মত খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা,খাচা বা খামার বা খোপ পরিস্কার রাখতে হবে,কবুতরের বাসস্থান মশা মুক্ত রাখতে হবে। কবুতরের বাসস্থানে মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।

জীবাণুনাশক হিসেবেঃ ভিরোসিড, ফার্ম-৩, ভিরকো-এস, হালামিদ, ওমনিসিড, টিমসেন ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম মিশিয়ে কবুতরের বাসস্থানে ভাল করে স্প্রে করতে হবে।

কৃমিঃ

কবুতর কৃমি দ¦ারা আμান্ত হলে ওজন কমে যাবে,খারাপ মোল্ট,ডাইরিয়া,ক্লান্তি,পাখা ঝুলে যাওয়া,অরুচি,পানি বেশী পান করা,পায়খানার সাথে কৃমি কিংবা কৃমির টুকরা, পানি পায়খানা ইত্যাদি লক্ষন প্রকাশ করবে। ফিতাকৃমি থেকে কবুতরের শ্বাসকষ্ঠ দেখা দেয়।

কারনঃ অপরিস্কার খাবার ও পানি,আμান্ত কবুতর থেকে,বিষ্ঠা থেকে,অপরিস্কার বাসস্থান থেকে।

চিকিৎসাঃ ওয়ার্মাজোল, আসকা পিলার, প্যানাকিউর, এভিনেক্স, এসিমেক ১% ইত্যাদি বা এই জাতীয় ঔষধ।

 

মাত্রাঃ প্রতি একটি কবুতরের জন্য ওয়ারমাজোল ৪-৫ ফোটা, আসকা পিলার ১ টি ট্যাবলেট, প্যানাকিউর ১ টি ট্যাবলেটের চার ভাগের এক অংশ, এভিনেক্স ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম।

বাজারে এগুলি না পাওয়া গেলে ‘সোলাস সিরাপ’ প্রতি কবুতরকে ০.৫ মি.লি ড্রপ দিয়ে খাইয়ে দিতে হবে। অসুস্থ কবুতরকে ও বাচ্চা আছে এমন কবুতর জোড়াকে কখনও কৃমির ঔষধ দেওয়া যাবেনা । কৃমির ঔষধ প্রতি দুইমাস পরপর দিতে হবে।

 

নিউমোনিয়া

কবুতরের নিউমোনিয়া হলে এন্টিবায়োটিক হিসেবে এনরোফ্লক্সাসিন ৪-৫ ফোটা করে দিনে একবার ১৪ দিন দিতে হবে। সাথে কড লিভার অয়েল চালিয়ে যেতে হবে।

 

কবুতরের সর্দি বা ঠা-া লাগলে কী করবেন

কবুতরের সর্দি বা ঠান্ডা একটি বায়ুবাহিত রোগ। নাক দিয়ে পানি বের হওয়া,চোখ দিয়ে পানি বের হওয়া,হাচি দেওয়ার মত শব্দ করা,গা ফুলিয়ে বসে থাকা এ রোগের লক্ষন । হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন,বাতাস,ধুলো-বালি, বেশী গরম কিংবা তীব্র শীতের কারনে কবুতরের ঠান্ডা লাগে,ফেন্সি কবুতর আμান্ত হয় বেশী । এক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার চেয়ে এক্সপেকটোরেন্ট ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায় । বাজারে বহুল পরিচিত ‘তুসকা সিরাপ’ ০.৫ মি.লি দিনে দুইবার সকালে ও সন্ধায় দিতে হবে পরপর ৫ দিন,ভালো হয়ে গেলেও অতিরিক্ত আরো ২ দিন নিয়ে যেতে হবে । আμান্ত কবুতরকে আলাদা করে রাখতে হবে,নতুবা অন্য কবুতরও আμান্ত হবে।

 

 

কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা না হওয়া বা ডিম না জমা

অনেক কবুতর পালক ও খামারী এই সমস্যা নিয়ে খুবই দৌড়ান । দেখা যাচ্ছে মাদী কবুতর ডিম দিচ্ছে,ডিমে তা দেওয়ার ১৮ দিন পরেও বাচ্চা ফুটছে না। ডিম ফেলে দেওয়ার সময় দেখা যাচ্ছে ডিমের ভিতর পচা কুসুম ছাড়া আর কিছুই নাই । এ্টা হচ্চে অনুর্বর ডিম যার ভিতর শুμানু প্রবেশ করেনি ঠিক ফার্মের কেনা মুরগির ডিমের মত। এই সমস্যার কারন দুইটি হতে পারে এ্ক নর কবুতর মেটিং করে না দুই ভিটামিনের অভাব ।

চিকিৎসাঃ নর-মাদী আলাদা করে দিন এক মাসের জন্য। ক্সতলাক্ত খাবার যেমন তিল,সরিষা এগুলি বন্ধ করে দিন,শুকনো ধান দিন,ভিটামিন ই সপ্তাহে তিন দিন,সেই সাথে মাল্টিভিটামিন দিন সপ্তাহে দুইদিন । ভিটামিন ই হিসেবে বাজার থেকে মানুষের ঔষধ ‘ই-ক্যাপ’ ২০০ পাওয়ার কিনে ৫০ মি.লি পানিতে ক্যাপসুলের ভিতরের তরল ঔষধ মিশিয়ে ভালকরে ঝাকিয়ে দিতে পারেন । প্রতিদিন একটি ক্যাপসুল করে টানা তিনদিন সপ্তাহে । মাল্টিভিটামিন ২.৫ মি.লি বা আধা চামচ ৫০ মিলি পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে দুইদিন। ভিটামিন ই তিনদিন দেওয়া হলে,পরবর্তি দুইদিন মাল্টিভিটামিন দিবেন । মনে রাখবেন এই দুইটি ডোজ একসাথে এই দিনে দিবেন না । এই ট্রিটমেন্ট একমাস করার পর নর-মাদী একত্রে করবেন,ইনশাল্লাহ কাজ হয়ে যাবে ।

 

 

কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা না হওয়া বা ডিমের ভিতর মরা বাচ্চা

ভিটামিন কে, ভিটামিন বি এর অভাব ও প্রাকৃতিক কিছু কারন । অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের কারনে ডিমের খোসা বেশী শক্ত হয়ে যায়,ফলে খোসা ভেঙ্গে বাচ্চা বের হতে পারেনা ও মারা যায় ।

চিকিৎসাঃ কবুতর মেটিং শুরু করলে সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে ও ভিটামিন বি দিতে হবে, বিশেষত কবুতর ডিমে তা দেওয়া অবস্থায় অতিরিক্ত গরমে কবুতরকে তিন-চার ঘন্টার জন্য মিডিয়াম স্পিডে ফ্যানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে । আর্দ্রতা বজায় রাখতে কবুতরের ঘরের মেঝে পানি দিয়ে মুছে কিংবা ভিজিয়ে দিতে হবে। কবুতরকে পানি দিয়ে হালকা স্প্রে করা যেতে পাতে,এতে তাপ ও আর্দ্রতা কমার সাথে সাথে ডিমের খোসা নরম হবে ।

কবুতরের চোখের প্রদাহ

কবুতরের চোখ উঠলে কিংবা চোখে আঘাত পেলে,চোখ দিয়ে পানি পড়লে কিংবা চোখের আশেপাশে গুটি দেখা দিলে সর্বপ্রথম সমস্যাটি খুজে বের করতে হবে। যদি চোখের আশে পাশে গুটি দেখা যায়,তবে সেটি পিজিয়ন পক্স হওয়ার সম্ভাবনা বেশী । কবুতরের চোখের আঘাত কিংবা চোখ দিয়ে পানি পড়া সারতে তুলসি দ্রবন ব্যবহার করতে হবে । এক্ষেত্রে ১০-১৫ টি দেশী তুলসি পাতা নিতে হবে । ১ লিটার পানি ফুটাতে হবে,পানি ফুটতে শুরু করলে তুলসি পাতা দিতে হবে । যখন পানির রং হালকা সবুজ রংয়ের হবে তখন পানি নামিয়ে ঠান্ডা করতে পবে। ঠান্ডা তুলসি পানি দিয়ে দিনে তিন-চার বার আμান্ত কবুতরের চোখ ধুয়ে দিতে হবে । সেই সাথে তুলসি পানি দিয়ে কবুতরের খাচা ও লফট স্প্রে করতে হবে। চোখ ভাল হয়ে গেলেও আরো দুইদিন তুলসি দ্রবন চোখে দিতে হবে ।

দেশী তুলসি পাতা পাওয়া না গেলে সিপ্রোসিন আই ড্রপ আμান্ত চোখে এক ফোটা করে ২৪ ঘন্টায় ৩ বার দিতে হবে । অবস্থা বেশী খারাপ পর্যায় হলে সিপ্রোসিন আই ড্রপের পাশাপাশি সিপ্রোসিন ৫০০ মিগ্রা ট্যাবলেটের ১০ ভাগের ১ ভাগ দিনে দুইবার খাওয়াতে হবে । ভাল হয়ে গেলেও আরো দুইদিন এই ট্রিটমেন্ট করাতে হবে ।

সব ঔষধ রোগ মুক্তির পাশা-পাশি কিছু পার্শ্ব-প্রতিμিয়া সৃষ্টি করে। পার্শ্ব-প্রতিμিয়া যখন মারাতড়বক পর্যায়ে চলে যায় তখন সেটিকে আমরা দেখতে পারি। যেমন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে পার্শ্ব-প্রতিμিয়া স্বরূপ খাবারে অরুচি,ডিম পাড়তে দেরী করা দেখা দেয়। এই ক্ষেত্র বিবেচনা করলে এলোপ্যাথিকের চেয়ে হোমিওপ্যাথিক তুলনামূলক কম পার্শ্ব-প্রতিμিয়া প্রদর্শন করে। তাই দেশী-বিদেশী বেশিরভাগ কবুতর এক্সপার্টরা হোমিওপ্যাথিক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। লেখকও এই মতবাদের পক্ষপাত করেন। হোমিওপ্যাথিক সহজে শরীরের সাথে মানিয়ে নেয়।

 

কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নাম ও কার্যকারিতা দেওয়া হল

টাইবারকুলিয়াম ৩০ ঃ কবুতরের রোগ প্রতিরোধ করতে ও কবুতরকে সতেজ,সবল রাখতে সাহায্য করে। সাধারন খাবার পানিতে মিশিয়ে দিতে হয় সপ্তাহে ১-২ দিন। ১ সিসি ১ লিটার পানিতে।

 

বোরাক্স ৩০ ঃ কবুতরের বায়ুবাহিত রোগ প্রতিরোধ করে, ১ সিসি ১ লিটার পানিতে।

 

বেলাডোনা ৩০ ঃ কবুতরের ভাইরাস জনিত রোগ ও পিএমভি রোগ প্রতিরোধ করে। ১ সিসি ১ লিটার পানিতে। আঘাত,কাটা-ছেড়া,ও জ্বরের জন্য ১ ফোটা দিনে ৩ বার ২-৩ দিন।

 

হাইপেরিকাম ২০০ ঃ ধনুষ্টংকারের চিকিৎসায় ও প্রতিরোধে ১ ফোটা করে দিনে একবার ১০ দিন। ১-৫ দিনের বাচ্চাকে ১ চামচ পানিতে ১-২ ফোটা মিশিয়ে মিশ্রন ক্সতরি করে ১ ফোটা করে দিনে ২ বার ১০ দিন খাওয়াতে হবে।

 

নাক্স ভাম ঃ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পর প¦ার্শপ্রতিμিয়া থেকে বাচতে ও গরমের সময় ঔষধ ব্যবহারের পর ১ ফোটা করে দিনে ৪ বার। এছাড়াও এটি খাবারের বিষμিয়ার চিকিৎসায় ভাল ফল দেয়।

 

ইপোটোরিয়াম পারফো ৩০ ঃ ম্যালেরিয়া,ডেঙ্গু ও জ্বর প্রতিরোধ করতে ১ সিসি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়।

 

কানিয়াম ২০০ ঃ ঠান্ডা, করাইজা থেকে চোখে ছানি পড়লে ১-২ ফোটা করে দিনে ২ বার ৩-৪ দিন ব্যবহার করতে হয়।

 

জেনটিনা লুটিয়া ৩০ ঃ অরুচি ও খাদ্যে অনীহার জন্য প্রতি কবুতরের জন্য ৩ ফোটা করে দিনে ২ বার ২-৩ দিন। ব্যবহারের আগে লিভার টনিক ও কৃমির ঔষধ দিলে সর্বোত্তম ফল পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে আমলকির রস পানিতে মিশিয়ে খাওয়ালে অরুচিতে ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

 

অ্যাকিনাশিয়া আংগু ৩০ ঃ জ্বর,সেপটিক জ্বর,টাইফয়েড এর জন্য ১-২ ফোটা করে দিনে ৩ বার ২-৩ দিন।

চ্যাম্পার ৩০ ঃ বমি,পাতলা পায়খানার জন্য খাওয়ার স্যালাইনের পাশপাশি ১ ফোটা করে দিনে ৫-৬ বার ভাল না হওয়া পর্যন্ত। পায়খানা যদি খাবারসহ হয় তাহলে চাইনা ৩০ ১ ফোটা করে দিনে ৪-৫ বার। বমি বন্ধের জন্য ইপিকাক ৩০ ১ ফোটা করে ৪-৫ বার।

লিভার টনিক ঃ কবুতরকে লিভার টনিক হিসেবে হামর্দদ এর সিনকারা কিংবা ইকটার্ন ১-২ চামচ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

লিকার/লাল চা ঃ লিকার বা লাল চা কবুতরের ক্যাংকার রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে ভাল ভ’মিকা পালন করে। এছাড়া শরীরে উপকারী ব্যকটোরিয়া উৎপাদনে সাহায্য করে। ১ লিটার পানিতে ২-৩ চামচ লিকার মিশিয়ে দিতে হবে।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে ১ টি লেবু ১ লিটার পানিতে,এলোভেরার ১ টি পাতার রস ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিলে ভাল ফল পাওযা যায়।

 

 

মাত্র কয়েকটি কাজ ও অভ্যাস আপনার কবুতরগুলিকে এসমস্ত রোগবালাই থেকে দূরে রাখবে

  • কবুতরকে প্রতি দুই মাস অন্তর কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে।
  • কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর আগে ও পরে লিভার টনিক ডোজ দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত গরমের সময় কৃমির ঔষধ দেওয়া যাবেনা।
  • কবুতরকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর মাল্টি-ভিটামিন ও মাল্টি-মিনারেলস ডোজ করাতে হবে।
  • প্রতি মাসে একবার কবুতরের বাসস্থান জীবানুমুক্ত করতে হবে।
  • কবুতরকে মশা,মাছি,উকুন,মাইট থেকে রক্ষা করতে হবে। উকুন নাশক শেম্পু দিয়ে গোসল করালেও চলবে।
  • কোন কবুতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে,তাকে আলাদা করে ফেলতে হবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।
  • গরমের হিট স্ট্রোক থেকে বাচাতে,কবুতরের দূর্বলতা কাটাতে,কবুতর পরিবহনের আগে ও পরে কবুতরকে স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
  • কোন কবুতর আঘাত পেয়ে ক্ষত হলে সেখানে এন্টিসেপটিক মলম অথবা হলুদের পেষ্ট ক্ষতস্থানে দিতে হবে। এতে তাড়াতাড়ি ক্ষত শুকিয়ে যাবে ও সংμমিত হতে পারবে না।
  • বাজার থেকে কিনে আনা সকল প্রকার খাদ্যকণা ভাল করে ধুয়ে শুকিয়ে কবুতরকে খেতে দিতে হবে।
  • গরমের সময় সপ্তাহে একদিন কবুতরকে গোসল করার জন্য পানি দিতে হবে,কবুতর নিজে থেকেই গোসল করবে। খাচার কবুতরকে পানি দিয়ে স্প্রে করতে হবে ।
  • কবুতর মেটিং করার পর থেকে ডিম পাড়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে ক্যালসিয়াম এর ডোজ করাতে হবে।

 

কবুতর নিয়ে কিছু কুসংস্কার বা ভুল ধারনা

  • কবুতরের ডিম হাত দিয়ে স্পর্শ করলে কিংবা রোদের আলো লাগলে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে না । কথাটা সম্পূর্ন ভুল ও কাকতালিয়,কবুতর ডিম পাড়ার পর তা ফ্রিজে রেখে এক সপ্তাহ পর অন্য কবুতর দিয়ে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব । (আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)
  • কবুতররের ডিমকে ডিম বলা যাবেনা ডিম বললে বাচ্চা ফুটেনা ,তাই ডিমকে পাথর বলতে হয় ।
  • কবুতর μয়-বিμয়ের জন্য বাজারে আনা-নেওয়া কিংবা কবুতর পরিবহনের সময় কবুতরের চোখ বেধে নিতে হয়,না হলে কবুতর তার পূর্বের মালিকের বাড়ি চলে যাবে ।
  • গ্রিট খাওয়ানো উচিৎ নয়,এতে কবুতর মারা যেতে পারে ।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!