class="post-template-default single single-post postid-21868 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি কতটা? ভয়টা কাদের?

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকিকরোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি কতটা? এমন প্রশ্নের জবাবে যা বললেন জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতালের ইনচার্জ চিকিত্সক সব্যসাচী সেনগুপ্ত। 

প্রঃ এই ভাইরাস থেকে কী কী রোগ হয়?

করোনা ভাইরাস প্রধাণত পশুপাখীর শরীরে বসবাস করে। রোগও হয় মূলত পশুপাখীরই। গরু, ইঁদুর, বাদুড়, বিড়াল এদের। তবে মাঝেমধ্যে মানুষকেও আক্রমণ করে ফেলে বইকি! এই যেমন, এবারে হল।

প্রঃ তার মানে এর আগেও করোনা এসেছে?

করোনা আগেও এসেছে। ২০০৩ সাল নাগাদ সার্স(SARS)হল যেবার, সেইবারেও তো এই করোনা ভাইরাসই আক্রমণ করেছিল মানুষকে। বস্তুত এটি ৭ নম্বর ধরণের করোনা ভাইরাস, যা এ যাবৎ মানুষকে আক্রান্ত করেছে।

প্রঃ কী ভাবে এই রোগ হয়?

গোড়াতেই বলেছি, এই করোনা ভাইরাস-গোষ্ঠী মূলত জন্তু জানোয়ারের শরীরে বসবাস করে। ইনফেকশনও ছড়ায় সেখান থেকেই। ২০০৩-এ যেমন হয়েছিল। সেটিরও শুরুয়াৎ চিনদেশে। অনেকেই তাকে চেনেন সার্স নামে। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম। সে যাত্রায় এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল বাদুড়ের মাধ্যমে। বাদুড় থেকে রোগ ছড়ায় ভাম জাতীয় বিড়ালে। তারপর সেখান থেকে অন্যান্য জীব জন্তুতে। যেমন ব্যিভার বা রেকুন। চিনদেশে ব্যিভার এবং রেকুন নামের প্রাণীরা খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকেই ছড়িয়ে যায় মানুষের মধ্যে। ছড়ায়, এই সব প্রাণীদের কাটাকুটি করতেন যাঁরা, সেইসব কসাইদের মাধ্যমে। মাংসের মাধ্যমে নয়। হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়াতো এই রোগ। এই করোনা ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছিল SARS-CoV-1। এ যাত্রায় তাই নাম দেওয়া হলো SARS-CoV-2। কারণ এই করোনা ভাইরাসের গঠন, পূর্বতন ভাইরাসের খুব কাছাকাছি। ২০১২ তে, যেমন হয়েছিল আরেক ধরণের করোনা ঘটিত রোগ। MERS। সেবার এই রোগ ছড়িয়ে ছিল উট থেকে।

প্রঃ এবারেও কি তাই? পশু পাখির থেকেই?

বিস্তারিত তথ্য এখনো আসেনি। সবে মাত্র মাস দুয়েক আগেই এই করোনা ভাইরাসের কথা প্রথম জানা যায়। বিজ্ঞানীরা ‘কেস স্টাডি’ করছেন। লক্ষ্য রাখছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়ে। আর তাই থেকেই জানা গেছে কিছু কথা। সেইটাই বলি বরং। এইবারের করোনার প্রথম কেসটি পাওয়া যায় ২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর। বা বলা ভালো ‘ কেস গুলি’। কারণ ওই ৩১ তারিখেই চিনের উঁহ্হান শহরে আচমকা ২৭ জন রোগীকে খুঁজে পাওয়া যায়, যাদের নিউমোনিয়া কিম্বা জ্বর-সর্দি-কাশি হয়েছে। এবং যাঁদের শরীর পরীক্ষা করে কোনো পরিচিত জীবাণু মেলেনি। এর ঠিক ন দশ দিন পর, ‘সি ডি সি’ ( সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) ঘোষণা করলো করোনা ভাইরাসের কথা। বললো–এই রোগীদের বেশীরভাগের শরীরে এমন একপ্রকার করোনা ভাইরাস খুঁজে পাওয়া গেছে, যা আগে মানুষ দেখেনি। ভাইরাসটির গঠন অনেকটাই 2002-3এর সার্স ভাইরাসের কাছাকাছি। সেই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছিল SARS-CoV-1। এবারের ভাইরাসের নাম দেওয়া হল তাই SARS-CoV-2। এর মধ্যে একটা লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, ওই ২৭ জন প্রাথমিক রোগীর প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ভাবে উঁহ্হান ‘ হোলসেল সী ফুড মার্কেট’-এর সাথে জড়িত। হয় তাঁরা সেখানে কাজ করেন, নাহয় তাঁরা সেই মার্কেটের খরিদ্দার, আর নয়তো এইরকম কোনো মানুষের আত্মীয় পরিজন। উঁহ্হানের এই মার্কেটটিতে সী ফুডের সাথে সাথে বিভিন্ন পশু পাখীও বিক্রি হয়। আর সেইজন্যই এখনো পর্যন্ত ধরে নেওয়া হচ্ছে যে সেইরকমই কোনো পশু কিম্বা পাখি থেকেই এবারে ইনফেকশন ছড়িয়েছে। যদিও, হাতে গরম প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রঃ মানুষের শরীরে এই নতুন করোনা ভাইরাস ঢুকলে কি ধরণের রোগ হয়?

মানুষের শরীরে এই নতুন করোনা ভাইরাস ঢুকলে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। জ্বর, সর্দি, কাশি, গা হাত পা ব্যথা। আর খুব বাড়াবাড়ি হলে নিউমোনিয়া, শ্বাস কষ্ট। তখনই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

প্রঃ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি কতখানি?

সে বিষয়ে মন্তব্য করার মত যথেষ্ট তথ্যও এখনো হাতে আসেনি। এটা বিজ্ঞান। এটা স্ট্যাটিসটিক্স। যা খুশি একটা বকে দিলেই হলো না হোয়াটসঅ্যাপে।

প্রঃ তাহলে কি এ রোগে লোক মরে না? 

অবশ্যই মরে। তবে এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে যে, এটি ২০০৩-এর করোনাভাইরাসের থেকে অনেকটাই কম ক্ষতিকর। এই করোনা ভাইরাসে মারা যাচ্ছেন প্রধানত বেশি-বয়স্করা। মারা যাচ্ছেন প্রধানত তাঁরাই, যাদের ইমিউনিটি কম বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগে। এগারোই জানুয়ারি প্রথম যে রোগীটি মারা গিয়েছিলেন তাঁর বয়স ছিল ৬১ বছর। ভদ্রলোকের ক্যানসারও ছিল। ১৬ জানুয়ারি যিনি মারা গিয়লেন, তাঁর বয়স ছিল ৪৯ বছর। এই ভদ্রলোকের সম্ভবত টিবিও ছিল। তাই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কম।

প্রঃ কতদিন সময় লাগে এই রোগটি হতে?/ ইনকিউবেশন পিরিয়ড কত?

এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দুই থেকে ১৪ দিন এর ইনকিউবেশন পিরিয়ড।

প্রঃ হঠাৎ করে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেল কেন? তার মানে কি আমরা হেরে যাচ্ছি?

১৩ ফেব্রুয়ারি এবং তার পর থেকে হঠাৎ করে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেল কেন? তার মানে কি আমরা হেরে যাচ্ছি? না। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ লক্ষ (১,১৪,২৪৩) সম্ভাব্য করোনাভাইরাসের আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ভারতে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ (WHO-র পরিসংখ্যান)। তবে তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এর আগে স্রেফ ল্যাবরেটারিতে যাঁদের নমুনাতে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, তাঁদেরই রোগী ধরা হতো। ১৩ জানুয়ারি থেকে যেকোনো নিউমোনিয়া রোগীকেই সম্ভাব্য করোনা ধরা হচ্ছে চিন দেশে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘চেঞ্জ অফ কেস ডেফিনেশন’। এই ‘কেস ডেফিনেশন’-এর আরও একবার পরিবর্তন হয় ২০শে ফেব্রুয়ারি। ফলত, সেইদিন রোগীর সংখ্যা কমে যায় ফট করে। এসব মেডিক্যাল কচকচি। এসবের উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত/ উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

প্রঃ এই রোগ আটকে দেওয়ার কি কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে? 

এখনো পর্যন্ত না।

প্রঃ হোয়াটসঅ্যাপে পড়লাম যে? ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে?

ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে আপনি অনেক খবরই পাবেন। করোনা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে। সেইটে চারপাশে ‘ ফরোয়ার্ড’ করে দেওয়ার আগে একটু খতিয়ে দেখুন। জেনে নিন, বিষয়টা গুজব কিনা। ঠিক যেমন গুজব ছড়ায় দাঙ্গা নিয়ে।

প্রঃ দশ সেকেন্ড নিঃশ্বাস প্রশ্বাস আটকে রাখতে পারেন না যাঁরা, তাঁরাই কি এ রোগে আক্রান্ত?

গুজব। অত্যন্ত হাস্যকর গুজব।

প্রঃ হাঁচি বা কাশি হলে কি ভয়ের ব্যাপার?

না। ভারতবর্ষে করোনা এখনো সেভাবে হয়নি কিছুই। মহামারী/ এপিডেমিক তো দূরের কথা! তবে হ্যাঁ! হাঁচি, কাশি, জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে যান। বাকিটা উনিই বুঝে নেবেন।  তাই এদিকটায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
প্রয়োজনে 01123978046 নাম্বারে ফোন করবেন। এটা ন্যাশানাল করোনা হেল্পলাইন নম্বর।

প্রঃ কী ভাবে এই রোগ ছড়ায়? মানুষ থেকে মানুষে?

এ রোগের মোড অফ ট্রান্সমিশন (ছড়ানোর পদ্ধতি) সঠিক ভাবে জানা যায়নি এখনো। যথেষ্ট তথ্য নেই। তবে, এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য থেকে অনুমান করা হচ্ছে, এই রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে। আর তাই, সাধারণ কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!