কার্যত লকডাউন শুরু হবার কয়েকদিন পর অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। এমনই এক অলস সন্ধ্যায় মাথার ভেতর নানা চিন্তা উঁকি মারছিল। যার মধ্যে অন্যতম, এই সময়টা মানুষের জন্য কিছু করা যায় কি না। কী করা যায়? আমার মেধা যা আছে তাই দিয়েই কিছু একটা করতে হবে। গান বানানো যায়। আমরা ভার্সিটিতে ক্লাস করি আর তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করি একটা ছুটির জন্য, অথচ এখন অফুরন্ত ছুটি। এই ছুটির বিষয়টা মাথায় নিয়েই একটা গান বানিয়ে ফেললাম। লিখে ফেলেন ‘কিটো স্টে হোম সং।’ ওরফে কিটো ভাইয়ের গান গানের কথাগুলো এমন ‘এ গেদু, সমেস্যা কী? হাতে পায়ে সাবান মাখ, ঘন ঘন ধুইতে থাক…’।
বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় বানানো এই গান সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে লাগলো হু হু করে। এরপর অনেক বড় বড় মানুষের শুভাশীষ পেলাম। বলা যায় এই ভিডিও গানটি আমাকে অন্য এক পরিচয় এনে দিলো- কথা বলছিলেন কিটো ভাই। যার আসল নাম মাসরুর রাব্বি ইনান। কিন্তু নাম কিটো ভাই কেন? এটাও একটা মজার বিষয় বললেন ইনান। আমি একটু স্বাস্থ্যবান।
স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে কেটোজেনিক ডায়েটের বেশ কদর। ইনানের বাড়ির অনেকেই এই ডায়েট মানছেন। ইনানের ওপরেও পরিবার থেকে এই ডায়েট মেনে চলার চাপ বা অনুরোধ আসতেই থাকে। কিন্তু ভাত প্রেমী ইনান সেটা ছাড়তে নারাজ। ইনানের মামা কিটো ডায়েট মেনে ১২ কেজি ওজন কমিয়ে ফেললেন। স্বাভাবিকভাবেই ইনানের ওপর এই প্রভাব চলে আসে। কিন্তু ইনান সেই প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে কথা লিখে একটি ভিডিও বানিয়ে দিলেন ফেসবুকে। সেটা ভাইরাল হলো, সেই ভিডিওর মন্তব্য বাক্সে একজন লিখলো, কিটো ভাই। সেই নামটাই পছন্দ হয়ে গেল কিটো ভাইয়ের।
তবে ‘কিটো স্টে হোম সং’ যে মাত্রার জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে তার দ্বিতীয় গানটি তৈরি করে ইনান। ‘কিটো হ্যাপি সং’- এই গানটি প্রথম গানের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যায়। এই দুই গান সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষের নিকট পৌঁছে যায়। যার কারণে প্রশংসা পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের, নির্মাতা রেদওয়ান রনি, আদনান আল রাজিব, টেন মিনিটস স্কুলের আয়মান সাদিকের। চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ কিটো ভাইকে প্রশংসা করে মেসেজ পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয় একজন মন্ত্রী প্রশংসা করেছেন ইনানের কর্মকাণ্ডে। অনেক সচিব-উপসচিব জানিয়েছেন বাহবা। করোনাযোদ্ধাদের নিয়ে বানিয়েছেন ‘সুপারহিরো সং।’
অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ইনান। যার ফলে নিজের কাজের প্রতি উদ্যম বেড়ে গেছে। রেসিজম নিয়ে কয়েকটি পর্বে ভিডিও বানিয়ে ছেড়েছেন ইউটিউব ও ফেসবুকে। দৃষ্টিগোচর হয়েছে সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসানের। তাহসান কিটো ভাইকে ইতিবাচক কথাবার্তা বলে ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
বরিশালের ভাষায় কিটোভাই তথা ইনানের ভিডিওগুলো বানানো হলেও একদম শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন তিনি। ইনান বলেন, আমি আসলে জীবনে অনেক কিছুই রপ্ত করেছি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি বরিশাল জিলা স্কুলে। এরপর উজিরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে চলে যাই। সেখানে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন জীবন। তিন বছর সেখানে ছিলাম। আমার ওটরা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় যে শিক্ষা দিয়েছে তা জীবনে অনেক মূল্যবান। যদিও আমি অষ্টম শ্রেণিতে বরিশাল নগরীতে চলে আসি, ভর্তি হই উদয়ন স্কুলে। এরপর ইন্টারমিডিয়েটে সরকারি হাতেম খাঁ কলেজে। জীবনের এই বাঁকগুলো আমাকে প্রতিটি মুহূর্তে শিক্ষা দিয়েছে। এই শিক্ষাই আমার পরবর্তী জীবনে কাজে লেগেছে।’
ডেভলপমেন্ট স্ট্যাডিজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইনান পড়ছেন ঢাকার ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসে। পড়াশোনার পাশপাশি গানের চর্চা করেন। রয়েছে এলেবেলে নামের নিজের একটি ব্যান্ডদল। করোনার প্রকোপ কমে গেলে নিজেদের প্রথমক অ্যালবাম প্রকাশ করবেন। শ্রোতারা পাবে নতুন কিটো ভাইয়ের গান । ইনান বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই গান করি। গানটা আমার প্যাশন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হবার পর কিছু নাটকের অফার পেয়েছি। দুইটা কনফার্ম নাটক না করে দিতে হয়েছে কভিড পরিস্থিতির কারণে। তবে অভিনয়ে আগ্রহী আমি। শুধু অভিনয় যে করবো তা নয়, নিজের চ্যানেলের জন্য আমি ওয়েব সিরিজ বানাবো। আমি মানুষকে সুস্থ বিনোদন দিতে চাই।’
মাসরুর রাব্বি ইনান মানুষের জন্য কাজ করতে চান। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। সমস্যায় সহায়তা করতে চান। কথায় নয়, ইতোমধ্যে ‘সলুশন বাংলাদেশ’ নামে সংগঠন করে ফেলেছেন। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন সবার প্রিয় কিটো ভাই। সাথে থাকবে কিটো ভাইয়ের গান ।