Friday, May 10
Shadow

কিশোরের খেলার সাথী বাঘ

সামাজিক মাধ্যমে এই কিশোরের ভাইরাল ছবি। এক হ্রদে এক জোড়া জাগুয়ারের সঙ্গে ১২ বছরের ব্রাজিলীয় কিশোর টিয়াগো। এদের একজন রীতিমত টিয়াগোর গলা জড়িয়ে ধরে আছে।

ছবিটি এত জনপ্রিয় হওয়ায় অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল ছবিটি ভুয়া নয় তো?
কিন্তু এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ছবিটি সঠিক এবং টিয়াগোর প্রায়ই এধরনের ছবি তুলে থাকে।

ব্রাজিলে জন্ম টিয়াগো সিলভিয়েরা শিশু বয়স থেকে জাগুয়ারদের সঙ্গে খেলাধূলা করে বড় হয়েছে। ওদের সাথেই থাকে টিয়াগো।

“আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে বলেছিল ছবিটা ভুয়া। কিন্তু ছবিটা আসল।অনেকের ছবিটা দারুণ ভাল লেগেছে এবং ওরা জাগুয়ার দুটো দেখতে চেয়েছে। সবাই তো আমার মত ভাগ্যবান নয়, তাই ওদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা আমি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই,” বিবিসি নিউজ ব্রাজিলকে বলেছে ১২ বছরের কিশোর টিয়াগো। জাগুয়ারের সঙ্গে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা

টিয়াগোর বাবা লিয়ান্দ্রো সিলভিয়েরা আর মা আনা জাকোমো দুজনেই বিজ্ঞানী। ব্রাজিলের জাগুয়ার ইনস্টিটিউটে কাজ করেন তারা।

তাদের মূল লক্ষ্য আমেরিকায় বাঘ, চিতাবাঘ, জাগুয়ার জাতীয় বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা ও তাদের সংরক্ষণ।

“আমাদের ছেলে এমন একটা পরিবেশে জন্মেছে যেখানে শিশু বয়স থেকে সে জাগুয়ারদের সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলতে হয় সেটা ও সহজাতভাবেই শিখেছে।

আমরা অবশ্যই ওকে সবকিছু করতে দিই না। কিন্তু ও নিজেও জানে কী করা উচিত বা উচিত না,” জানান টিয়াগোর বাবা, যিনি এই ভাইরাল হওয়া ছবি প্রথম পোস্ট করেন।

‘ওরা টিয়াগোর দৈনন্দিন জীবনের অংশ, ওর জীবনে এটা অস্বাভাবিক কিছু না।’

টিয়াগোর যখন জন্ম তখন তার বাবা মা তিনটে জাগুয়ার ছানাকে বড় করছিলেন। বেড়াতে বেরলে পথে তারা থামতেন চারটে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য। টিয়াগো আর তিনটে জাগুয়ার ছানা। ট্রাক নিয়ে বেড়াতে বেরতেন সিলভিয়েরা পরিবার। বাঘ-জাতীয় পশুর সঙ্গে বড় হবার বিরল অভিজ্ঞতা হয়েছে টিয়াগোর।

“আমাদের এটা ভালবাসা আর সম্মানের একটা সম্পর্ক। জন্তুজানোয়ারের দেখাশোনায় আমি বাবা-মাকে সবসময় সাহায্য করেছি। আমার ওদের সঙ্গ খুব ভাল লাগে,” বলছিল টিয়াগো।

জাগুয়ারের মুখোমুখি হলে কী করতে হবে সিলভিয়েরা সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে যেসব পরামর্শ দন , সেরকম একই পরামর্শ তিনি ছেলেকেও দিয়েছেন।

“এধরনের প্রাণী মানুষকে খাওয়ার জন্য মারে না। এরা যা করে তা শুধু মানুষের আচরণের প্রতিক্রিয়ায়। কাজেই তাদের সম্মান দেখানো উচিত। ওদের শরীরের ভাষা দেখে আপনাকে বুঝতে হবে ওদের কত কাছে যাবেন অথবা যাবেন না,” বলছিলেন লিয়ান্দ্রো সিলভিয়েরা।
সীমানা কোথায়

সীমারেখাটা কোথায় টানবেন সেটা বুঝতে হবে। জাগুয়ার যদি আপনার সঙ্গ চায়, ও নিজেই আপনার দিকে আসবে। ওরা সামাজিক প্রাণী নয়। কিন্তু মানুষের সঙ্গে ওদের আজীবনের বন্ধন গড়ে উঠতে পারে।

কিশোরের মা বলছেন তার ছেলে আর জাগুয়ারদের নিয়ে তাকে কোনদিন বিপদে পড়তে হয়নি। তবে আনা জানান তিনি তার ছেলেকে কখনও জাগুয়ারদের সাথে একা ছেড়ে দেননি।

“আমরা সবসময় জাগুয়ার এবং অন্যান্য সব জন্তুদের ব্যাপারে খুবই সতর্কতা নিয়েছি। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই কড়া নিয়মকানুন মেনে চলি।

১২৩ একর জমির ওপর সিলভিয়েরা ও জাকামোর অভয়ারণ্য। তারা পর্যটকদের সেখানে ঢুকতে দেননা। কারণ তারা জন্তুদের বিরক্ত করতে চাননা, তাদের সম্মান রাখতে চান।

তারা এই সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তুলেছিলেন ২০০২ সালে শুধু জাগুয়ার নিয়ে গবেষণার জন্য। পরে ব্রাজিলের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থার অনুরোধে তারা অনাথ জাগুয়ার ছানাগুলোর দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। বর্তমানে তাদের অরণ্য এলাকা মূলত জাগুয়ারদের প্রজনন ভূমি।

সিলভিয়েরা বলছেন, এই প্রজনন ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির ৯৫ শতাংশ অর্থই তারা ব্যক্তিগতভাবে দেন, বাকিটা আসে দানের অর্থ থেকে। বর্তমানে তারা দেখাশোনা করছেন ১৪টি জাগুয়ারের। এর মধ্যে চারটি শিশু। গত এক দশকে তারা বড় করেছেন ৩৫টি জন্তুকে।

বিপন্ন প্রজাতির পশুর তালিকায় জাগুয়ার রয়েছে। যদিও পৃথিবীর ২১টি দেশে জাগুয়ার পাওয়া যায়, তবে বিশ্বে জাগুয়ারের প্রায় অর্ধেকই রয়েছে ব্রাজিলে।

তাদের সংরক্ষণ ভূমিতে যেসব জাগুয়ার আসে তাদের ওরা বনে ফেরত পাঠায় না, কারণ বিশেষ করে কৃষকরা তাদের গরুভেড়া বাঁচাতে জাগুয়ারদের মেরে ফেলে।

এছাড়াও এসব জাগুয়ার মানুষের সঙ্গে বড় হওয়ায় মানুষের সঙ্গে তাদের একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে ওঠে। সিলভিয়েরা মনে করেন ওদের জঙ্গলে ছেড়ে এলে ওরা মানুষের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসবে এবং মানুষের হাতে প্রাণ হারাবে।

গত বছর টিয়াগো সেকেণ্ডারি স্কুলে পড়তে তাদের বাড়ি থেকে দূরে চলে যাওয়ায় জাগুয়ারের সঙ্গে তার দেখা হয় কম। টিয়াগো তাদের দারুণ মিস করে। কিশোরের

কিশোরের মুখে, আমি বাচ্চা বয়স থেকে ওদের সঙ্গে বড় হয়েছি। তাই আমার খুব মন খারাপ করে। আমি যখনই বাড়ি আসি, ওদের সঙ্গে খেলি, বুঝতে পারি ওরাও আমাকে মিস করছিল। ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৫ই নভেম্বর যখন টিয়াগো বাড়ি এসেছিল।-বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!