Tuesday, April 30
Shadow

ডেলটা মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. কাজী মনজুর কাদের বললেন, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য

ক্যান্সার

ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য

অধ্যাপক ডা. কাজী মনজুর কাদের
বিভাগীয় প্রধান, অনকোলজি বিভাগ, ডেলটা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

অসংক্রামক ও দীর্ঘস্থায়ী মারাত্মক রোগ ক্যান্সার। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিণতি মৃত্যু ডেকে আনে। তবে প্রাথমিকভাবে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়।

শরীরের কোনো স্থানে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বৃদ্ধি হয়ে কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হলে তাকে টিউমার বলে। বেনাইন ও ম্যালিগনন্টে—এই দুই ধরনের টিউমার থাকলেও সাধারণত খুব একটা ক্ষতি করে না বলে বেনাইন টিউমারকে শিষ্ট বা অক্ষতিকারক টিউমার বলে। তবে ম্যালিগনন্টে টিউমার বা ক্যান্সার বেশ ক্ষতিকারক, যা রক্তনালি ও লসিকানালির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে মানুষকে অকালমৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

কারণ

সুনির্দিষ্ট কোনো কারণে ক্যান্সার হয় না। এটা সৃষ্টিতে একাধিক কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও প্রধানত বংশগত ও পরিবেশগত কারণকেই মূলত দায়ী করা হয়।

বংশগত : বংশগত কারণে সাধারণত যেসব ক্যান্সার হয়, তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার, বৃহদন্ত্রে ক্যান্সার, শিশুদের চোখের ক্যান্সার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কলোরেক্টাল ক্যান্সার ইত্যাদি।

পরিবেশগত : পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

ক. ভৌত কারণ : যেমন এক্স-রে, গামা রে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইত্যাদি।

খ. রাসায়নিক পদার্থ : যেমন—ধূমপানের ধোঁয়ায় বিদ্যমান ক্ষতিকর পদার্থ (কারসিনোজেন), রঞ্জক পদার্থ, অসম্পূর্ণভাবে পোড়া আমিষ, শর্করা বা চর্বিজাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।

গ. ভাইরাস : কিছু কিছু ভাইরাস ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী, যেমন হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, এপেস্টেইন বার ভাইরাস ইত্যাদি। জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয় হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসকে। লিভার ক্যান্সার হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। আবার এপেস্টেইন বার ভাইরাস দ্বারা গলার ক্যান্সার ও লসিকাগ্রন্থির ক্যান্সার হয়।

ঘ. অন্যান্য : এ ছাড়া কিডনি বা পিত্তথলির পাথর থেকেও ক্যানসার হতে পারে। সার্ভিক্স বা বোনের ক্রনিক ইনফেকশন থেকে জরায়ু ও বোনের ক্যান্সার হয়। রাসায়নিক বা কেমিক্যাল এজেন্ট, যেমন এনিলিন ডাইয়ে মূত্রথলির ক্যান্সার হয়। খাদ্যে ব্যবহৃত ফরমালিন (পচনরোধক পদার্থ) স্টমাক বা পাকস্থলীর ক্যানসার সৃষ্টি করে। চুলের কলপের ব্যবহারে স্কিন ক্যানসার হতে পারে।

গঠন

কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত। এই কোষের কেন্দ্র হলো নিউক্লিয়াস, যার ভেতরে থাকে ক্রোমোজম। জিন থাকে ক্রোমোজমের মধ্যে এবং ডিএনএ থাকে জিনের মধ্যে। এই জিন সাধারণত বংশের ধারা রক্ষা করে, শরীরের বৃদ্ধির সামঞ্জস্যতা, গঠন, চুল এবং চোখের রং—সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এই জিনের সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকারিতার জন্যই মানুষ ছোট থেকে বড় হয়। আবার একপর্যায়ে বৃদ্ধি হওয়াও থেমে যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী কোষসংখ্যা বৃদ্ধিতে যে জিনগুলো ভূমিকা পালন করে থাকে, তার মধ্যে একটি জিন প্রটোঅনকোজিন। এই প্রটোঅনকোজিন ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ, যেমন—ভাইরাস, রাসায়নিক পদার্থ (কার্সিনোজেন) ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অনকোজিনে রূপান্তরিত হলে সেই কোষের বৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকে।

আবার অপ্রয়োজনীয় কোষ সৃষ্টিতে বাধাদানকারী আরেক ধরনের জিন আছে, যার নাম ক্যানসার সাপ্রেসরজিন। মূলত এই সাপ্রেসরজিনের কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় হলেই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

উপসর্গগুলো

ক্যান্সারের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই। আর পাঁচটা সাধারণ অসুখের মতোই জ্বর, দুর্বলতা, কাশি, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। যেমন—

অনেক দিন ধরে শরীরের কোনো অংশের চুপচাপ উপদ্রবহীনভাবে ছোট কোনো টিউমার বা চাকা হঠাৎ বড় হচ্ছে, ব্যথা হচ্ছে—এমনটি মনে হলে সতর্ক হতে হবে এবং ক্যান্সার কি না নিশ্চিত হতে হবে।

শরীরের ছোট একটি তিল হঠাৎ বড় হচ্ছে, গাঢ় কালো রং হচ্ছে, চুলকাচ্ছে কিংবা ব্লিডিং হচ্ছে—এমনটি মনে হলে সতর্ক হতে হবে।

খুসখুসে কাশি হচ্ছে, চার-পাঁচ সপ্তাহের বেশি হয়ে যাচ্ছে, ভালো হচ্ছে না—চিকিৎসা নিন, সতর্ক হোন।

কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমে যাচ্ছে। ৪০ বছরের অধিক বয়সে এমনটি মনে হলে সতর্ক হবেন। পাকস্থলীর ক্যান্সারে এমনটা হতে পারে।

মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাচ্ছে, ব্যথা হচ্ছে, শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কিংবা মল ত্যাগের অভ্যাসের হঠাৎ পরিবর্তন হয়েছে। এমনটি হলে সতর্ক হতে হবে। কেননা এসব লক্ষণ রেকটাম ক্যান্সারের।

বয়সের কারণে মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন করে আবার ব্লিডিং হচ্ছে—এমনটি হলে জরায়ুর ক্যানসার হতে পারে।

ব্রেস্টে বা স্তনে চাকা, বিশেষ করে বয়স ৪০ বছর কিংবা তার ওপরে হলে সতর্ক হোন। স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ এগুলো।

হাড়ে ব্যথা হচ্ছে, ফুলে গেলে, হঠাৎ পড়ে গিয়ে ফ্রাকচার হয়েছে—এমনটি হলে সতর্ক হোন।

পোড়া ঘা ভালো হওয়ার পর আবার হয়েছে, শুকাচ্ছে না—এগুলো স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!