Monday, December 23
Shadow

পিজি হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. এ কে এম শাহিদুর রহমানের পরামর্শ : গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা ও করণীয়

গরমে গরমে স্বাস্থ্য

গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা ও করণীয়

ডা. এ কে এম শাহিদুর রহমান

অতিরিক্ত গরমের সময় ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, পেটের পীড়া, টাইফয়েড, চর্মরোগ ইত্যাদির পাশাপাশি আরো কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে হয় কমবেশি সবার। এ সময় কিছু সতর্ক পদক্ষেপ নিলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

 

হিট সিনকোপ

অতিরিক্ত গরমের মধ্যে অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রমের কারণে পানিশূন্যতার জন্য শরীরের রক্তচাপ হঠাৎ কমে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়াই হিট সিনকোপ।

এ রকম ঘটনা ঘটলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠাণ্ডা জায়গায় শুইয়ে দিয়ে অতিরিক্ত পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করতে বেশি বেশি পানি, তরল খাবার, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি খেতে দিন।

 

হিট ক্রাম্পস

অতি গরমে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে শরীরের মাংসপেশিগুলোয় তীব্র ব্যথাসহ খিঁচুনি হয়; বিশেষ করে শরীরের বেশি ব্যবহৃত মাংসপেশিগুলোয় এ রকম সমস্যা হয়ে থাকে। একে হিট ক্রাম্পস বলে।

এ অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত অন্য স্থানে সরিয়ে বেশি করে খাবার স্যালাইন খেতে দিন। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইনের ব্যবস্থা করুন। এক থেকে তিন দিন পূর্ণ বিশ্রামে রাখুন।

 

হিট এক্সাসন

গরমে দীর্ঘ সময় মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করলে এবং পর্যাপ্ত পানি ও লবণ গ্রহণ না করলে শরীর পানিশূন্য হয়ে দুর্বল ও নেতিয়ে পড়ে। এ অবস্থাকে হিট এক্সাসন বলে। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অতিরিক্ত পিপাসা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। কখনো বা মানসিক অবস্থা লোপ পেতে পারে। সে এলোমেলো কথা বলতে পারে কিংবা অচেতন হয়েও যেতে পারে।

এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠাণ্ডা জায়গায় সরিয়ে নিন। শীতল স্থানে বা ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখুন। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে দিন। শিরাপথে স্যালাইনের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যান।

 

হিটস্ট্রোক

হিটস্ট্রোক একটি জীবন বিপন্নকারী শারীরিক অবস্থা, যাতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ৪১০ সে./১০৩০ ফা.-এর বেশি হলেই হিটস্ট্রোক অনিবার্য হয়ে পড়ে। মাত্রাতিরিক্ত গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে সাধারণত এটা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে, শরীরের তাপমাত্রা বেশি অর্থাৎ জ্বর থাকে, তবে কোনো ঘাম বের হয় না।

সাধারণত বয়স্ক লোক (৬০ বছর বা তার বেশি), শিশু, দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, শ্রমিক, বিশেষ করে প্রখর রোদে যাদের কাজ করতে হয় তাদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতা, বমি, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি, এলোমেলো কথা বলা ইত্যাদি উপসর্গসহ একপর্যায়ে অচেতন হওয়ার প্রবণতা থাকে। এ সময় রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি (৪১০ সে./১০৩০ ফা.) থাকে এবং শরীরে কোনো ঘাম থাকে না। রোগী দ্রুত ও ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকে।

এ রকম ঘটনা ঘটলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়ামুক্ত স্থানে সরিয়ে নিন। শরীরের জামা-কাপড় খুলে ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে পুরো শরীর বারবার মুছে দিন। রোগীকে শীতল ঘরে বা ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখুন। হাত-পা এবং শরীরের সব মাংসপেশি ম্যাসাজ করান। সমস্যা খুব বেশি মনে হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠান।

লেখক : মেডিক্যাল অফিসার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR28UxjTLzBH6rq0RRf7t_WsGFM0gx642XSx29cf1G-DNOoqXl6-mLqW1eo

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!